রক্তস্নাত ভোটের সাক্ষী বাংলা। পঞ্চায়েতে বলি অন্তত ১৬ জন। দিকে দিকে উঠল ব্যালট লুটের অভিযোগ, অসহায় ভোটকর্মীরাও। হিংসা সত্ত্বেও ভোটে নিষ্ক্রিয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। একযোগে সরব শাসক ও বিরোধী। মুর্শিদাবাদে পুনর্নিবাচন দাবি শাসক দলেরই। প্রয়োজন পুনর্নিবাচন হবে, আশ্বাস কমিশনের। বাংলাকে বদনাম করতেই হিংসার আয়োজন বিরোধীদের। ভোট শেষে অভিযোগ শাসক দলের। বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছাড়া ভোট উৎসবের মেজাজেই, দিনশেষে দাবি তৃণমূলের। বাংলার ভোটের খবর নিতে সুকান্তকে ফোন জেপি নাড্ডার। অগ্নিগর্ভ মণিপুরে ফের ছড়াল হিংসা।
হেডলাইন:
বিস্তারিত খবর:
1. লাগাতার মৃত্যু, হিংসা রক্তপাতের সাক্ষী থাকল তেইশের পঞ্চায়েত নির্বাচন। মনোনয়ন পর্ব থেকেই অশান্তির বাতাবরণ ছিল পঞ্চায়েতকে কেন্দ্র করে। অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছিল ভোটের আগেই। ভোটের দিনেও সেই মৃত্যু থামাল গেল না। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রাণ হারালেন প্রায় সব দলের কর্মীরাই। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এই পর্যন্ত। যার মধ্যে আছেন শাসকদলের ৮ জন কর্মী। প্রাণ হারিয়েছেন ৪ বিজেপি কর্মী, সিপিএম ও কংগ্রেসের ২ জন করে কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। এদিন সকাল থেকেই দিকে দিকে অশান্তির ছবি ভেসে ওঠে। রেজিনগর থেকে মানিকচক, দিনহাটা থেকে হেমতাবাদ- ভোটকে কেন্দ্র করে রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে গোটা বাংলা। কোথাও ব্যালট লুট হয়েছে, তো কোথাও ব্যালট বাক্স তুলে পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ভোটকর্মীরা যে রীতিমতো অসহায় পরিস্থিতির আছেন, তাও স্পষ্ট করেই জানান তাঁরা। ভোটের আগে নিরাপত্তার খাতিরে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে সওয়াল গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। কিন্তু এদিন কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রায় অদৃশ্য বলেই অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন জায়গায়। যদিও নদিয়ায় পরিস্থিতি সামলাতে শূন্যে গুলি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। তা ছাড়া বহু বুথেও কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল-ই না। ফলে বাহিনী এনে ভোট করানোর দাবিতে তোলেন বহু ভোটার। বেলা যত গড়াতে থাকে তত বাড়তে থাকে অশান্তি। বোমা, গুলি, ব্যালট লুটের মুহুর্মুহু অভিযোগ জমা পড়ে কমিশনে। রক্তস্নাত হয় মুর্শিদাবাদ, দিনহাটা, নদিয়া, উত্তর দিনাজপুর। দিনভর একাধিক জায়গায় বিশৃঙ্খলা, অশান্তির ছবি ধরা পড়লেও ভোটদানের হার ছিল ভালই। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের হার ৬৬.২৮ শতাংশ। যদিও মনোনয়ন থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত এত মৃত্যুতে গণতন্ত্রের উৎসবই কলুষিত হল, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
2. ভোটের আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর দাবিতে সরব ছিল বিরোধীরা। কিন্তু ভোটের দিন একের পর এক মৃত্যুর খবর আসা মাত্রই সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর দিকেই আঙুল তুলল তারা। তবে, উল্লেখযোগ্যা ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় সরব হয়েছে শাসকদলও। পঞ্চায়েতে মৃত ১৬ জনের মধ্যে ৮ জনই তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী। তৃণমূলের সরকারি টুইটার হ্যান্ডেল থেকে একাধিকবার টুইট করে অভিযোগ করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিস্ক্রিয়। কোথাও আবার বাহিনী সরাসরি বিজেপির হয়ে ভোট করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে শুধু যে শাসক শিবির ক্ষুব্ধ, তাই নয়। বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরাও। খোদ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বাহিনীর ব্যবস্থাপনা এবং ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএসএফের আইজি এসসি বুদাকোডিকে চিঠি লিখেছেন। এদিকে ভোট-হিংসার দায় নিতে নারাজ বাহিনীও। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দায়িত্বে থাকা নোডাল অফিসার তথা বিএসএফের আইজি পালটা কমিশনকে বিঁধেছেন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে চিঠি লিখে তাঁর তোপ, ”বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক নয়। যেসব জায়গায় হিংসা হয়েছে, সেসব জায়গায় বাহিনী ছিল না।” অর্থাৎ তাঁর ইশারা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দিকে। এদিকে আইনশৃঙ্খলার দায় রাজ্যের বলেই আপাতত দায় সেরেছে কমিশন। এই অবস্থায় মুর্শিদাবাদে পুনর্নিবাচন চেয়েছে খোদ শাসকদলই। ভোটের আগের দিন রাত থেকে ভোটের দিনে অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে মুর্শিদাবাদে। দিকে দিকে পরিস্থিতি রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাজ্যের বিভিন্ন দিকে ছবিটা একই রকম। এই প্রেক্ষিতেই কমিশন জানিয়েছে, রাজ্যের ভোট যে একেবারে শান্তিপূর্ণ তা বলা যায় না। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা হিংসার অভিযোগ খতিয়ে দেখবে কমিশন। সেইমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে পরবর্তী কালে। পাশাপাশি যদি প্রয়োজন পড়ে তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে যে পুননির্বাচন হতে পারে, সেই ঈঙ্গিতও দিয়ে রেখেছে রাজ্য কমিশন।
শুনে নিন বিশেষ বিশেষ খবর।