হিন্দু মন্দির। অথচ সেখানে একই সঙ্গে পুজো দিতে হাজির হন হিন্দু-মুসলিম। প্রার্থনার আসল উদ্দেশ্য, ঈশ্বরের কাছে নিজেদের সমর্পন করা। সেখানে কোনও ধর্মীয় ভেদাভেদ থাকতে পারে না। এই বিশ্বাসেই মন্দিরে হাজির হন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। কোথায় রয়েছে এমন মন্দির? আসুন শুনে নিই।
ধর্মবিশ্বাস ভেদে আলাদা হয় প্রার্থনার স্থান। হিন্দুরা যেমন ভক্তিভরে মন্দিরে পুজো দেন, মুসলিমরাও তেমনই নামাজ পড়তে মসজিদে যান। কিন্তু দেশে এমনও এক মন্দির রয়েছে, যেখানে একইসঙ্গে প্রার্থনা করেন হিন্দু-মুসলিম সকলেই। ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে ঈশ্বর আরাধনায় সামিল হন তাঁরা।
আরও শুনুন: রাধা নয়, কৃষ্ণপত্নী দেবী রুক্মিণীর মন্দিরে পুজো দিলেই চিরকাল অটুট থাকে প্রেম
কথা বলছি, কাশ্মীরের জ্বালামাতা মন্দির নিয়ে। দেশে সেরার সেরা পর্যটন ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম কাশ্মীর। স্রেফ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, রাজনৈতিক কারণেও উত্তরের এই রাজ্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সেখানেই রয়েছে এই বিশেষ মন্দির। পুলওয়ামা জেলার একেবারে প্রান্তে অবস্থিত। চারিদিকে পাহাড়ঘেরা এই মন্দির প্রতি বছর আষাঢ় চতুর্দশী উপলক্ষ্যে বিশেষভাবে সেজে ওঠে। আর এইসময়ই লক্ষ্য করা যায় ভক্তদের ভিড়। মূলত হিন্দুদেবীর মন্দির। সেখানে হিন্দু দর্শনার্থিদের দেখা পাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু কাশ্মীরের জ্বালামাতা মন্দিরে ধরা পড়ে এক অন্য ছবি। হিন্দু ছাড়াও এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন মুসলিমরা। মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের কথায়, বহুবছর ধরে এই ভাবেই হিন্দু মুসলিম একসঙ্গে পুজো দিয়ে আসছেন এই মন্দিরে। এই সহাবস্থানের জেরে কারও কোনও সমস্যাও হয় না, এমনটাই দাবি করেছেন তিনি। আষাঢ় চতুর্দশীর দিনটি দেবীর জন্মতিথি হিসেবে মনে করা হয়। সেই উপলক্ষ্যেই আয়োজন হয় বিশেষ পুজোর। এইসময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এসে হাজির হন মন্দিরে। নিজেদের ধর্ম পরিচয় ভুলে দেবীর কাছে নিজেদের সমর্পন করাই হয়ে ওঠে তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য।
আরও শুনুন: ছয় মাথা, আঠারো চোখ, দেবী কামাখ্যার এমন রূপের মাহাত্ম্য কী?
স্থানীয়রা এই বিশেষ পুজোটিকে উৎসবের নজরেই দেখেন। তাঁদের অনেকেরই দাবি, কাশ্মীরে মুসলিম ও হিন্দু সকলেই একসঙ্গে থাকতে পছন্দ করেন। শ্রীনগরের কাছে এক গ্রামে বিশেষভাবে এই নজির ধরা পড়ে। তাই জ্বালামুখি মন্দিরে হিন্দু মুসলিমের একসঙ্গে পুজো দেওয়া তাঁদের কাছে অস্বাভাবিক নয়। উৎসবের সময় ভিড় সামলাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয় প্রশাসনকে। স্থানীয় রাজনীতিবিদরাও এই উৎসবে অংশ নেন। সম্মিলিত ভাবে চাঁদা তোলা হয় কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকা থেকে। সেখানেও হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদ নেই। ব্যবস্থা করা হয় লঙ্গরের। সেখানে সকলে মিলে একসঙ্গে প্রসাদ গ্রহন করেন। সবমিলিয়ে এই উৎসব যথেষ্ট জনপ্রিয় গোটা ভূ-স্বর্গের মানুষের কাছেই।