প্রেমময় কৃষ্ণ। শুধুমাত্র রাধা নন, একাধিক পত্নীকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখতেন তিনি। দেবী রুক্মিণীও তাঁদেরই অন্যতম। কৃষ্ণপত্নী হিসেবে তাঁর কথাই বেশি আলোচনা হয়। দেশের কয়েকটি জায়গায় রয়েছে এই দেবীর মন্দির। কথিত আছে, সেখানে পুজো দিলে চিরকাল অটুট থাকে প্রেম। আসুন শুনে নিই।
জগতের পালনকর্তা শ্রীবিষ্ণু। তাঁর প্রেমময় অবতার শ্রীকৃষ্ণ। মর্তে বিভিন্ন লীলার মাধ্যমে সেই প্রেমমূর্তি ভক্তদের মনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যশোদানন্দন। তাঁর জীবনে যে একাধিক প্রেম থাকবে তা বলাই বাহুল্য। তবে প্রকৃত অর্থে প্রেমিকা বলতে যা বোঝায়, সেই স্থান কেবল শ্রীরাধিকাই পেয়েছিলেন। তবে কথিত আছে, কৃষ্ণের ১৬ হাজারেরও বেশি পত্নী ছিল। যাঁদের মধ্যে অন্যতম দেবী রুক্মিণী।
আরও শুনুন: রসগোল্লা খাইয়ে মহালক্ষ্মীর মান ভাঙান প্রভু জগন্নাথ, ভক্তরা মাতেন উৎসবে
কৃষ্ণের সঙ্গে রাধার নাম যেমন উচ্চারিত হয়, তেমনই দেবী রুক্মিণী কৃষ্ণপত্নী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিতা। তবে সারা দেশে রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের মতো কৃষ্ণ-রুক্মিণী মন্দির নেই। গুজরাটের দ্বারকা আর বৃন্দাবনে দেবী রুক্মিণীর মন্দির দেখা যায়। মন্দির ঘিরে একাধিক জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে। কথিত আছে এই মন্দিরে পুজো দিলেই বিবাহজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। সেইসঙ্গে চিরিস্থায়ী হয় প্রেম। আসলে দেবী নিজেই তাঁর প্রেমের জোরে শ্রীকৃষ্ণকে স্বামীরূপে পেয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গেই ভক্তের প্রেমও স্থায়ীত্ব পায় তাঁর আশীর্বাদে। আসলে রুক্মীনি ছিলেন বিদ্ররভ রাজ্যের রাজকন্যা। তাঁর পিতা মহারাজ ভীষ্মক সেকালের যথেষ্ট খ্যাতনামা নৃপতি ছিলেন। রাজার ৪ পুত্র আর এক কন্যা। রাজার পরম আদরের কন্যা রুক্মিণী ছিলেন সর্বগুনসম্পন্না। একসময় তিনি পূর্ণ যুবতী হলে রাজা উপযুক্ত পাত্রের খোঁজ আরম্ভ করলেন। এদিকে সেসময় গোটা আর্যাবর্তে কৃষ্ণের অপেক্ষা সুযোগ্য পাত্র ছিল না বললেই চলে। যেমন বীর, তেমনই সুদর্শণ, যুক্তিবাদী। রুক্মিণী সখীদের কাছে কৃষ্ণের কথা শুনে মনে মনে তাঁকে স্বামী হিসেবেই মেনে নিয়েছিলেন। কৃষ্ণের কাছেও রুক্মিণীর কথা পৌঁছেছিল। তিনিও রুক্মিণীতে একপ্রকার মজেছিলেন। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রুক্মিণীর বড় ভাই। তিনি আবার কৃষ্ণকে সহ্যই করতে পারতেন না। বরং কৃষ্ণ বিদ্বেষী শিশুপাল ছিলেন তাঁর বন্ধু। বোনের বিয়ে শিশুপালের সঙ্গেই ঠিক করেন তিনি। কিন্তু রুক্মিণী সে সম্পর্ক মানতে নারাজ। তিনি নিয়মিত সে রাজ্যের অবন্তিকা মন্দিরে যেতে শুরু করেন। দেবীর কাছে সবসময় প্রার্থনা করতেন, কৃষ্ণই যেন তাঁর স্বামী হন। এদিকে বিয়ের দিন প্রায় এগিয়ে এসেছে। রুক্মিণী অধৈর্য হয়ে অবন্তিকা মন্দিরের পুরোহিতকে গিয়ে বলেন, এখনই কৃষ্ণের কাছে খবর পাঠানো হোক। তিনি যেন বিয়ের আগে রুক্মিণীকে উদ্ধার করেন। অন্যথায় তিনি প্রাণত্যাগ করবেন। সেইমতো পুরোহিতরা কৃষ্ণকে গিয়ে সবকিছু জানান।
আরও শুনুন: রথের দিন সুযোগ হয়নি? জীবনে সুখ সমৃদ্ধি পেতে উলটোরথের দিন মেনে চলুন এইসব নিয়ম
এদিকে বিয়ের দিন উপস্থিত। শেষবারের মতো দেবী অবন্তিকাকে পুজো দিতে মন্দিরে যাত্রা শুরু করেন রুক্মিণী। পথে হাজির হন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। তিনি সখী পরিবেষ্টিত রুক্মিণীকে তাঁর রথে ঊথে আসার জন্য অনুরোধ করেন। রুক্মিণী তো একপ্রকার প্রস্তুত হয়েই ছিলেন। বিনা বাক্যব্যয়ে রথে উঠে যান তিনি। রথ গিয়ে হাজির হয় অবন্তিকা মন্দিরে। সেখানে স্বয়ং দেবী প্রকট হয়ে কৃষ্ণ-রুক্মিণীর বিয়ে দেন। সেইসঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক চিরকাল অটুট থাকার আশীর্বাদ করেন। ততক্ষণে অপহরণের খবর পৌঁছেছে রুক্মিণীর বড় ভাইয়ের কাছে। তিনিও সৈন্য নিয়ে কৃষ্ণকে বন্দি করতে হাজির। তিনি কৃষ্ণের সঙ্গে কি পেরে ওঠা সম্ভব? কিছুক্ষণের মধ্যেই পরাস্ত হন তিনি। সম্পর্কের খাতিরে তাঁকে প্রাণ ভিক্ষা দেন মাধব। সেই থেকেই দেবী রুক্মিণীর প্রেমের কথা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এখনও দেবীর আশীর্বাদ পেতে রুক্মিণী একাদশী ব্রত করেন ভক্তরা। আর সেইসঙ্গে গুজরাটের এই মন্দিরে পুজো দিতে যান। এতেই নাকি ভালোবাসার সম্পর্ক চিরকাল অটুট থাকে।