কালের নিয়মে কাটল এক সপ্তাহ। মাসির বাড়ির সময়সীমা শেষ। রথে চেপে পুনরায় শ্রীমন্দিরে ফিরবেন প্রভু জগন্নাথ। গুন্ডিজা মন্দিরের রত্নবেদী অপেক্ষায় দিন গুনবে আরও একটা বছর। এদিকে রাত পোহালেই আবারও সেজে উঠবে পুরীর রাজপথ। ভক্তরা দলে দলে ভিড় জমাবেন উলটোরথের রশি ছুঁতে। এই উৎসব ঘিরেও কিংবদন্তীর অন্ত নেই। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ধুমধাম করে রথে চেপে মাসির বাড়ি গিয়েছিলেন ত্রিমূর্তি। আর, এই একাদশীতে তাঁরা পুনরায় ফিরবেন শ্রীমন্দিরে। গুণ্ডিচা মন্দির থেকে দক্ষিণ মুখে শুরু হবে পুনর্যাত্রা। তাই এই যাত্রাকে কেউ কেউ বলে থাকেন দক্ষিণাভিমুখী যাত্রা। যদিও স্থানীয় ভাষায় এর নাম বহুদা যাত্রা। তবে আপামর বাঙালির কাছে এ হল উলটোরথ।
আরও শুনুন: নীল বর্ণের জগন্নাথ, মহিলারাও অংশ নেন প্রভুর এই বিশেষ রূপের পুজোয়
প্রভু গুণ্ডিচা মন্দিরে গেলে মন্দিরের অভিভাবক হন শ্রী মাধব। আর দেবী লক্ষ্মী হয়ে পড়েন একা। এই কদিন প্রভুর সঙ্গে দেখা সাক্ষৎ নেই। তাই জগন্নাথের উপর ভারী অভিমান হয় দেবীর। তবে, প্রচলিত কাহিনি অনুসারে লক্ষ্মীদেবী নাকি এর মধ্যেই এক ফাঁকে গিয়ে দেখে গুন্ডিচায় আসেন জগন্নাথকে। তারপর কিচ্ছুটি না বলে চুপিচুপি শ্রীমন্দিরে ফিরে আসেন ঘুরপথে। এরা নাম ‘হেরা গোহরী’ পথ। উলটোরথের দিন আবার লক্ষ্মীর সঙ্গে সাক্ষৎ হবে প্রভু জগন্নাথে। প্রথমে মূল মন্দিরের সিংহদুয়ারে হবে সাক্ষাৎ। কিন্তু দেবী তো তখন রীতিমতো গোঁসা করে বসে আছেন। রাগ ভাঙাতে রসগোল্লা নিয়ে মন্দিরে হাজির হন জগন্নাথ। এমনকি মাসির বাড়ি থেকে ফিরেই মূল মন্দিরে সরাসরি প্রবেশও করেন না জগন্নাথ দেব। শ্রীমন্দিরে প্রবেশের আগে তিন দিন থাকেন বাইরেই। এই সময় একাদশীতে হয় সোনাবেশ। সারা শরীর সোনার আভরণে ভূষিত হয় তাঁর। এক কুইন্টালেরও বেশি সোনার গহনা এই সময় পরানো হয় জগন্নাথদেবকে। সোনাবেশে প্রভুর ডান হাতে থাকে সোনার সুদর্শন চক্র। বাম হাতে থাকে রূপোর শঙ্খ। বলভদ্রের দুই হাতে থাকে সোনার লাঙল আর সোনার গদা। প্রভুর সোনাবেশ দেখার জন্য কাতারে কাতারে ভক্তের সমাগম হয়। ভাগ্যবানেই দেখতে পায় জগন্নাথ দেবের এই রূপ।
আরও শুনুন: স্বয়ং কৃষ্ণের লীলার সঙ্গে যোগ, প্রভু জগন্নাথকে কেন ৫৬ ভোগ দেওয়া হয় জানেন?
তবে এই উলটোরথের দিনটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র এই তিথিতে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মানলে অবশ্যই বিশেষ ফল মেলে। এইদিনও রথের রশিতে টান দিতে হাজির হন ভক্তরা। কথিত আছে, এক্ষেত্রেও শুভাশুভ ফল মেলে। সেইসঙ্গে উপরি পাওনা হয় জগন্নাথের বিশেষ সাজ। এইদিন সকালে উঠে স্নান সেরে নিতে হয়। তারপর ভক্তিভরে তুলসী পুজো সেরে নারায়ণের পুজো করতে হয়। রথ কোনও নির্দিষ্ট সময়ে বেরোয় না। সেক্ষেত্রে স্থানীয় মন্দিরের রথটি যে সময় বেরোবে তার জন্য আগে থেকে প্রস্তুত হতে হয়। পারলে জগন্নাথ যেখানে ছিলেন অর্থাৎ নির্দিষ্ট সেই মাসির বাড়িতেও যাওয়া যেতে পারে। মাথায় রাখতে হবে, রথের রশি ছোঁয়ার ক্ষেত্রে শুদ্ধাচার বিশেষ প্রয়োজন। তাই এইদিন নিরামিষ খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেকেই। রথযাত্রার মতোই ভক্তিভরে জগন্নাথকে মন্দিরে ফিরিয়ে আনতে হয় এদিন। পুরীতে যাওয়ার সুযোগ থাকলে তো সোনায় সোহাগা। কথিত আছে, শ্রী ক্ষেত্রে যারা সম্পূর্ণ রথযাত্রার সময় কাটানোর সুযোগ পান, তাঁরা পুনর্জন্মের হাত থেকে রেহাই পান। সেইসঙ্গে জীবন ভরে ওঠে সুখ ও সমৃদ্ধিতে।