ইউনিফর্ম সিভিল কোডের ভুল ব্যাখ্যা করে ভয় দেখানো হচ্ছে মুসলিমদের। মুসলিম নারীদের দমন করার জন্যই জারি রাখতে চাওয়া হচ্ছে তিন তালাক প্রথাও। ভোপালের সভা থেকে দাবি করলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একইসঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, একই দেশে দু’রকম আইন থাকতে পারে না। আইনের চোখে যা ন্যায়, তা প্রাপ্য মুসলিম মেয়েদেরও। এ প্রসঙ্গে ঠিক কী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা করে কোনও আইনি ব্যবস্থা থাকবে না। বদলে গোটা দেশ জুড়ে চালু হবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড। দেশের আইন ব্যবস্থায় এই পদক্ষেপ করতে তৎপর কেন্দ্রের মোদি সরকার। কিন্তু অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে কার্যত অস্তিত্ব হারাবে মুসলিম ল বোর্ড। আর সেইখানেই আপত্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশের। তাদের দাবি, আসলে মুসলিমদের ধর্মের উপরেই আঘাত হানবে এই নয়া আইনি ব্যবস্থা। তাই মোদি সরকার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি রূপায়ণের উদ্যোগ নিতেই পালটা আন্দোলন শুরু করেছে তারা। এবার ভোপালের জনসভা থেকে তারই জবাব দিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইউনিফর্ম সিভিল কোডের পক্ষে জোর সওয়াল করার পাশাপাশি তিনি বুঝিয়ে দিলেন, একটি দেশে দু’রকম আইন চলা উচিত নয় বলেই মনে করেন তিনি।
আরও শুনুন: মোদিকে সংখ্যালঘু-প্রশ্ন করে বিদ্রুপের শিকার, ভারতের জার্সি গায়ে ‘জবাব’ সেই মুসলিম সাংবাদিকের
আমেরিকার পর মিশর সফর সেরে সদ্য দেশে ফিরেছেন নরেন্দ্র মোদি। আর এদিনই বিজেপির ‘মেরা বুথ সবসে মজবুত’ প্রকল্পের তরফে ভোপালে জনসভা করলেন মোদি। আর সেখানেই দলীয় কর্মীদের সামনে ইউনিফর্ম সিভিল কোড ইস্যুতে সরব হলেন তিনি। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে দেশের সব ধর্মের মানুষ বিয়ে এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়ে একই আইন মানতে বাধ্য হবে। এমনিতে এখনও পর্যন্ত দেশে মুসলিমদের জন্য আলাদা আইনি ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে, তিন তালাকের মতো প্রথাগুলি যার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই প্রথাগুলি মুসলিম মেয়েদের প্রতি অন্যায় করছে, এবং পরিবারকেও ধ্বংস করছে, এমনটাই মনে করেন মোদি। তাঁর মতে, একটি পরিবারে যেমন আলাদা আলাদা সদস্যের জন্য আলাদা আলাদা নিয়ম থাকতে পারে না, একটি দেশের ক্ষেত্রেও সে কথাই খাটে। তাই দেশের উন্নতির জন্যই ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু হওয়া দরকার, এই মর্মেই এদিন জোর সওয়াল করলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। মিশরের প্রসঙ্গ তুলে মোদি এদিন বলেন, মিশরের মতো সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত দেশেও ৮০-৯০ বছর আগেই তিন তালাক প্রথা তুলে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সেই একই পদক্ষেপ করেছে মোদি সরকারও। তিন তালাক নাকচ করার পরে নারীদের সমান অধিকারের পক্ষে রীতিমতো প্রচার চালিয়েছে সরকার। লিঙ্গবৈষম্য ঘুচিয়ে মুসলিম মহিলাদের সমানাধিকারের জন্যই ইউনিফর্ম সিভিল কোড জরুরি, এদিন এমনটাই বোঝাতে চাইলেন মোদি। যারা বলছে এই নয়া বিধি মুসলিমদের ধর্মে আঘাত করবে, তারা এর ভুল ব্যাখ্যা করে মুসলিমদের ভয় দেখাতে চাইছে বলে দাবি মোদির।
আরও শুনুন: অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে মিলবে সুবিধা, মুসলিম মহিলাদের কাছে টানতে তৎপর বিজেপি
সত্যি বলতে গত কয়েক দশক ধরেই নিজেদের প্রধান কর্মসূচি বলে যে বিষয়গুলিকে তুলে ধরেছিল গেরুয়া শিবির, তার মধ্যে অন্যতম এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। এর আগে মুসলিম মহিলাদের একটি অংশও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনার দাবিতে মোদি সরকারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আর এবার মুসলিম মেয়েদের অধিকারের প্রসঙ্গ তুলেই ইউনিফর্ম সিভিল কোডের দাবিতে কার্যত শিলমোহর দিলেন প্রধানমন্ত্রী।