একসময় কাজ করতেন জুতোর দোকানে। সামান্য কটা টাকার বিনিময়ে পরিশ্রম করতেন উদয়াস্ত। বাড়ি ছেড়ে থাকতে হত দূরের শহরে। কিন্তু ওই যে, কথায় আছে পরিশ্রমের কোনও বিকল্প হয় না। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দীর্ঘ অধ্যবসায় আর নিজের কাজের প্রতি সততার জোরে বর্তমানে দুহাজার কোটির বেশি সম্পত্তির মালিক তিনি। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সৎ পথে পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই। একথা জোর গলায় দাবি করেন অনেকেই। তবে বাস্তবে এমন উদাহরণেরও কমতি নেই। সমাজের বিভিন্ন স্তরে যাঁরা প্রকৃতই সফল, একদিন করেছেন যথেষ্ট পরিশ্রম। তেমনই এক নাম, সত্য প্রসাদ রায় বর্মণ।
আরও শুনুন: আইআইটি লন্ড্রিওয়ালা! কাপড় কেচেই ১০০ কোটির ব্যবসা আইআইটি স্নাতকের
ব্যবসায়ী জগতে এই নামের সঙ্গে প্রায় সকলেই পরিচিত। বিশেষ করে বাঙালি ব্যবসায়ীদের মধ্যে তো সত্য প্রসাদ রীতিমতো জনপ্রিয়। হবেন নাই বা কেন, একসময় তাঁর প্রতিষ্ঠানই তো ছিল কলকাতার বাঙালির একমাত্র জুতোর কেনার ঠিকানা। কথা বলছি, খাদিমস সম্পর্কে। এই বিখ্যাত জুতোর দোকানের প্রতিষ্ঠাতাই হলেন সত্য প্রসাদ রায় বর্মণ। সেকালে বড়বাবু হিসেবেই অধিক পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু একদিনে এই সাফল্যের মুখ তিনি দেখেননি। করতে হয়েছিল দীর্ঘদিন অপেক্ষা আর কঠোর পরিশ্রম। প্রথমদিকে সাধারণ বাঙালি যুবকের মতোই কলকাতার রাস্তাঘাটে কাজের সন্ধানে ঘুরতেন তিনি। তখনকার কলকাতা আর আজকের মেট্রো সিটির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। বেশ কিছুদিন এভাবে কাটানোর পর কলকাতা ছেড়ে সুদূর মুম্বইয়ের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। কিন্তু সেখানে তাঁর না ছিল বিশেষ পরিচয়, না ছিল পকেটের জোর। অগত্যা এক জুতোর দোকানে কাজ শুরু করেন। মনে মনে ভেবেছিলেন অনেককিছুই, তাই যে কাজই করুন না কেন আসলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার কথাই ভাবতেন যুবক সত্য প্রসাদ। বছর খানেক মুম্বইয়ে থেকে জুতোর ব্যবসার হাল হকিকত বুঝে নেন তিনি। সেইসঙ্গে জুতো তৈরির বিভিন্ন রকমফেরও শিখে ফেলেন। তারপর ফিরে আসেন কলকাতায়। সালটা খুব সম্ভবত ১৯৬৫। তখনও বিশেষ উন্নত হয়নি মহানগরী। শহরে ফিরেই সত্যবাবু বুঝতে পারেন, এখানে জুতোর ব্যবসা অনায়াসে শুরু করা যায়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। চিতপুরের কাছে একটা ছোট্ট দোকান কিনে শুরু করে দেন ব্যবসা। কিছুদিন পর বুঝতে পারেন, তার অনুমান খুব একটা ভুল ছিল না। শহরবাসীর প্রধান চাহিদা, সস্তা ও টেকসই জুতো। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে তেমনটাই করতে শুরু করেন সত্য প্রসাদ।
আরও শুনুন: দুধ বিক্রি করেই রোজ আয় ১৭ লক্ষ, ছকভাঙা পথে তাক লাগালেন আইআইটি-র স্নাতক
ফলও মেলে হাতেনাতে। কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর ব্যবসা। কলকাতার মানুষের কাছেও ভরসাযোগ্য ঠিকানা হয়ে ওঠে তাঁর প্রতিষ্ঠান। অনেকেই এই দোকান থেকে জুতো কিনতে আরম্ভ করেন। যা বন্ধ হয়নি আজও। একইভাবে নিজেদের ব্যবসায়িক ধারা বজায় রেখেছে এই প্রতিষ্ঠান। জীবদ্দশায় দু-হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন সত্যপ্রসাদ। বর্তমানে সংস্থার দায়িত্বে রয়েছেন তার ছেলে সিদ্ধার্থ রায় বর্মন। বাবার পাথেয় অনুসরণ করেন প্রতিষ্ঠানকে আরও বড় করতে চান তিনিও। তবে সত্য প্রসাদের এই জীবন কাহিনি এখনও অনুপ্রেরণা জোগায় হাজার হাজার ব্যবসায়ীকে। বিশেষত যাঁরা এমনটা মনে করেন, বাঙালির দ্বারা ব্যবসা হবে না, তাঁদের সপাট উত্তর দেয় এই প্রতিষ্ঠান।