প্রকৃতির ঋতুকাল। বছরে তিনদিন ঋতুমতী অবস্থায় কাটান দেবী মহামায়া। দেবীমূর্তি দর্শণ নিষিদ্ধ। বন্ধ থাকে দেশের অধিকাংশ মাতৃমন্দির। এইসময় অম্বুবাচী ব্রত পালন করেন বাড়ির মহিলারা। সধবা ও বিধবাদের ব্রত পালনের আলাদা নিয়ম উল্লেখ রয়েছে শাস্ত্রের। তবে বছরের এই বিশেষ সময় এমনকিছু রহস্যময় ঘটনা ঘটে, যার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেন না কেউই। আসুন শুনে নিই।
তন্ত্রপীঠ কামাখ্যা। একাধিক রহস্যে ঘেরা পূর্বভারতের এই মন্দির। অনেকেই মনে করেন, এখানে গুপ্ত সাধনায় রত হন তান্ত্রিকরা। তন্ত্রবিদ্যার অনুশীলনে নিজেদের আরও পারদর্শী করে তোলেন তাঁরা। কথিত আছে, এই মন্দির জাদুবিদ্যা, মোহিনীবিদ্যা, ডাকিনীবিদ্যা সহ একাধিক গুপ্তসাধনার পীঠস্থান। আর সেই তন্ত্রপীঠের বার্ষিক উদযাপন হয় অম্বুবাচীর উৎসবে।
আরও শুনুন: কামাখ্যার অম্বুবাচী মেলায় সমাগম বহু ভক্তের, কী রহস্য এই মেলাকে ঘিরে?
বছরের নির্দিষ্ট তিনদিন। মূলত আষাঢ় মাসেই পালিত হয় অম্বুবাচী ব্রত। শাস্ত্রমতে দেবীর ঋতুকালিন অবস্থা। তাই এইসময় যে কোনও মাতৃমন্দির তিনদিন বন্ধ থাকে। মুখ ঢেকে দেওয়া হয় দেবীর মুখ। পঞ্জিকামতে বিশেষ সময় অম্বুবাচী শুরু হয়, আবার তিনদিন পর নির্দিষ্ট সময় তা শেষ হয়। সেই অনুযায়ী আয়োজন করা হয় বিশেষ পুজোর। তবে এইসময় বাড়িতেও ব্রত পালনের নিয়ম রয়েছে। পঞ্জিকা মতে বিধবা ও ব্রাহ্মণদের অবশ্য পালনীয় এই ব্রত। তবে সধবাদের জন্যও রয়েছে নিয়ম। এইসময় মূলত পাকদ্রব্য খাওয়ায় নিষেধ থাকে। সেইসঙ্গে প্রকৃতি মায়ের বিশেষ যত্ন নেওয়ারও নিয়ম রয়েছে। কৃষকরা কোনওপ্রকার বীজ বপন বা মাটি খোঁড়ার কাজ এইসময় করেন না। তবে অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে বিশেষ মেলা বসে আসামের কামাখ্যা মন্দিরে। মাতৃমন্দির অবশ্যই বন্ধ থাকে তিনদিন। তবে কথিত আছে, এইসময় গর্ভগৃহে লাল তরল লক্ষ্য করা যায়। ভক্তরা সাদা কাপড় দিয়ে পুজো দেন অম্বুবাচীর আগে। সেই কাপড় তিনদিন পর সম্পূর্ণ লাল হয়ে তাঁদের কাছে ফেরত আসে। আসলে ওই কাপড় রাখা থাকে কামাখ্যা মায়ের গর্ভগৃহের বিশেষ স্থানে। সেখান থেকে আগত লাল তরলের জেরেই ওমন হয়ে যায় সাদা কাপড়। তবে গবেষকদের মতে, গর্ভগৃহটি পঞ্চরথ স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি। যা আসলে একটি ভূগর্ভস্থ গুহা। এখানে কোনো বিশেষ মূর্তি নেই। শুধু একটি পাথরের সরু গর্ত রয়েছে। তবে কামাখ্যা মন্দির চত্বরের অন্যান্য মন্দিরগুলোতে একই রকম যোনি-আকৃতিবিশিষ্ট পাথর দেখা যায়। যা সবসময় ভূগর্ভস্থ জলে পূর্ণ থাকে। এর কোনওটিতেই অম্বুবাচীর সময় প্রবেশাধিকার থাকে না।
আরও শুনুন: উপোসে অসুবিধা! নির্জলা একাদশীতে কী করলে মেলে বিশেষ ফল?
শুধু তাই নয়, এই বিশেষ সময় লাল হয়ে যায় ব্রহ্মপুত্র নদীর জলও। আজ অবধি যার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি কেউ। করলেও তা নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। মনে করা হয়, দেবী ঋতুকালের প্রভাবেই এই বিশেষ পরিবর্তন হয়। এখানেই শেষ নয়। অম্বুবাচীর সময় নাকি নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরের দরজা। তিনদিন পর সেই দরজা খোলে। এইসময় ভক্তদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। বিশেষ উৎসবের আবহে সেজে ওঠে কামাখ্যা মন্দির চত্বর। স্থানীয় বিশ্বাস, অম্বুবাচীর পর কামাখ্যা মন্দির দর্শণে বিশেষ ফল মেলে। আর ওই লাল কাপড় কেউ যদি বাড়িতে রাখেন, তাহলে যাবতীয় দুর্ভোগ কেটে যায়। এই বিশ্বাসেই বছরের পর বছর ধরে অম্বুবাচী ব্রত পালন করে আসছেন ভক্তরা।