ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। বয়সটা তাঁর কাছে যে কেবল একটা সংখ্যা মাত্র, তা আজও বুঝিয়ে দিচ্ছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা, বছর আটত্রিশের এই ফুটবলার। পুরনো ওয়াইনের মতোই, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন আরও বেশি একাগ্র, আরও বেশি জেদি হয়ে উঠেছেন রোনাল্ডো। আর এই জেদই তাঁর মুকুটে জুড়ে দিল আরও একটি পালক। জাতীয় দলের জার্সিতে ২০০টি ম্যাচ খেলা একমাত্র ফুটবলার হয়ে গেলেন তিনি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
অগণিত ভক্ত তাঁর। তাঁর পায়ের জাদু, অদম্য জেদ, হার না মানা মানসিকতায় বুঁদ একটা গোটা প্রজন্ম। বিশ্বব্যাপী অগণিত ফুটবলারের আইডল তিনি। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ডস স্যান্টোস আভেইরো, যাঁকে গোটা বিশ্ব চেনে সি আর সেভেন নামে। ১৯৮৫-র ৫ ফেব্রুয়ারি পর্তুগালে জন্ম তাঁর। আর ছোট থেকেই তাঁর চোখের পাতায় ভর করেছিল ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে পর্তুগালের ক্লাব স্পোর্টিং এফসি-তে সই করেন সি আর সেভেন। আর ভাগ্যের চাকা সেই থেকেই যে গড়ানো শুরু করেছে, তা আজও থামেনি। ২০০৩-০৪ মরশুমে প্রথম পর্তুগিজ প্লেয়ার হিসেবে ইংল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সই করেন তিনি। বাকিটা তো সবারই জানা। কোচ ফার্গুসনের অভিভাবকত্বে এমন কোনও ট্রফি নেই, যেটা তিনি জেতেননি। এরপর যত সময় এগিয়েছে, পরিণত হয়েছেন তিনি, তত শাসন করেছেন প্রতিপক্ষকে। যে দলে, যে দেশেই খেলেছেন, নিজের জাত চিনিয়েছেন। কে-ই বা না জানে রিয়েল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার পর মেসির সঙ্গে তাঁর সেই প্রবল দ্বৈরথের কথা। ক্লাব ও দেশের হয়ে পাঁচ-পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ, ইউরো কাপ, নেশনস লিগ, ৫টি ব্যালন ডি-অর, ৪টি গোল্ডেন বুট, ফিফা দ্য বেস্ট, নিজের ফুটবল জীবনে জিতেছেন অনেক অনেক কিছু। তারপরেও যে তিনি এখনও ফুরিয়ে যাননি, সে কথাই আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন সিআর সেভেন।
আরও শুনুন: বিশ্বকাপে ম্যাজিক! রোহিত, আপনার জন্য চিন্তা হয়, আপনি তো আর ধোনি নন!
ফুটবল জীবনের ২১টা বসন্ত পার করে ফেলেছেন রোনাল্ডো। কিন্তু তাঁর অদম্য জেদ, জেতার খিদে আজও সেই প্রথম দিনের মতোই। আর সেই জেদে ভর করেই ৩৮ বছর বয়সে এসে আবারও নিজের মুকুটে জুড়ে নিলেন আরও একটি নতুন পালক। ৫ বার ব্যালন ডি-অর জয়ী এই কিংবদন্তি এবার হয়ে গেলেন একমাত্র ফুটবলার, যিনি জাতীয় দলের হয়ে ২০০টি ম্যাচ খেলে ফেললেন। শুধু তাই নয়, নিজের জাতীয় দলের হয়ে আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর ২০০তম ম্যাচে গোল করে, ম্যাচটি স্মরণীয় করেও রাখলেন তিনি। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের খাতায় স্বর্ণাক্ষরে নিজের নাম খোদাই করে রাখলেন রোনাল্ডো। ১৮ বছর বয়সে জাতীয় দলের হয়ে প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন তিনি। আর দেশের জার্সিতে সবথেকে বেশি ম্যাচ খেলার পাশাপাশি সবথেকে বেশি গোল করার রেকর্ডের মালিকও সেই তিনিই।
আরও শুনুন: মোদির জন্য নয়, দেশের জন্য পদক জিতেছেন, কুস্তিগিরদের হয়ে সুর চড়ালেন কীর্তি আজাদ
বয়স যতই বাড়ুক, তাঁর অগণিত ভক্তরা চান, তিনি যেন খেলা চালিয়ে যান। তবে আর কতদিন খেলবেন এই ৩৮-এর টগবগে যুবক? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন রোনাল্ডো নিজেই। বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট আর কোচ তাঁকে দলে চাইবেন, ততদিন তিনি জাতীয় দলের হয়ে খেলা চালিয়ে যাবেন। কারণ তাঁর কাছে জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা বিরাট সম্মানের। তবে তিনি যে আরও খেলতে চান, তাঁর পরিবার ও দেশবাসীকে আনন্দ দিতে চান, এ কথা উন্মুক্ত কণ্ঠে জানিয়েছেন সি আর সেভেন। এখন ২০২৪ এর ইউরো কাপে তাঁকে খেলতে দেখা যায় কি না, সেই দিকেই তাকিয়ে আপামর ফুটবলবিশ্ব।