বিচ্ছেদ মামলায় ঠিক হয়, খোরপোশ হিসেবে স্ত্রীকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা দেবেন স্বামী। কিন্তু বিগত ১১ মাস সেই টাকা তিনি দেননি। ফের আদালতে দ্বারস্থ হন স্ত্রী। অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় তাঁর স্বামীকে। এরপরই ছেলেকে ছাড়াতে, তড়িঘড়ি ৫ মাসের বকেয়া ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে আদালতে হাজির হয় তাঁর পরিবার লোকজন। কিন্তু সম্পূর্ণ টাকাই তাঁরা এনেছিলেন খুচরো কয়েন হিসেবে। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন শুনে নিই।
খুচরো নিয়ে বিভ্রাট রোজকার সমস্যা। অটো কিংবা বাসে খুচরো না থাকলে বেজায় সমস্যায় পড়তে হয়ে অনেককেই। খুচরো না থাকলেও যেমন সমস্যা তেমনই বড় অঙ্কের টাকা কয়েন হিসেবে দিলে মুশকিল। বিশেষত দামি কোনও জিনিস কেনার ক্ষেত্রে কেউ যদি নোটের বদলে খুচরো দেওয়ার কথা ভাবেন, তাহলে দোকানদার রীতিমতো চিন্তায় পড়েন। এত কয়েন গুনবে কে? সম্প্রতি ঘটেছে ঠিক তেমনই এক ঘটনা। তবে দামি কোনও জিনিস কেনার জন্য নয়। এক ব্যক্তি খুচরো টাকায় মিটিয়েছেন তাঁর স্ত্রীর খোরপোশ। তাও আবার প্রায় ৫৫ হাজার টাকা।
আরও শুনুন: মন ভরছে না পাঁচ স্ত্রীতেও! হিন্দু তরুণীকে অপহরণ করে বিয়ে মুসলিম যুবকের
ঘটনাটি রাজস্থানের। জয়পুরের বাসিন্দা দশরথ কুমাওয়াথের সঙ্গে বছর দশেক আগে বিয়ে হয়েছিল সীমা কুমাওয়াথের। কিন্তু বিয়ের বছর দুয়েকের মধ্যেই তাঁদের মধ্যে শুরু হয় তুমুল অশান্তি। দুজনেই বাধ্য হন বিচ্ছেদের কথা ভাবতে। ঘটনার জল গড়ায় আদালতে। সেখানেই ঠিক হয়, মামলা চলাকালিন স্ত্রীকে মাসিক ৫ হাজার টাকা দেবেন দশরথ। কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশ এতটুকুও মানেননি তিনি। দীর্ঘ ১১ মাস স্ত্রীকে একটাকাও দেননি। অসহায় সীমাদেবী ফের আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন। অভিযোগ শুনে বেজায় চটে যান বিচারপতি। তখনই দশরথের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন তিনি। আদালতের নির্দেশে দশরথকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে বাড়ির ছেলেকে জেলে ঢোকানোয় রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে তাঁর পরিবারের লোকজন। কী করলে দশরথকে মুক্ত করা যায় সেই ব্যবস্থায় করতে শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু তার ফল যে এমন অদ্ভুত হবে তা কেউই ভাবতে পারেননি।
আরও শুনুন: বিভেদ ঘোচাল রথের রশি! রথযাত্রায় সানন্দে অংশ নিলেন মুসলিমরাও
নির্দিষ্ট দিনে আদালতে দশরথকে পেশ করা হয়। তাঁর কাছে আদালতের নির্দেশ না মানার কারণ জানতে চান বিচারপতি। তখনই আদালত কক্ষে হাজির হন দশরথের পরিবারের লোকজন। তাঁদের সঙ্গে ছিল সাতটা বড় বস্তা। ঢুকেই বিচারকের সামনে বস্তাগুলো রেখে দেন তাঁরা। আর সেগুলোর দিকে নির্দেশ করে তাঁরা দাবি করেন, এতেই নাকি খোরপোশের বকেয়া ৫৫ হাজার টাকা রয়েছে। এই পরিমান টাকার জন্য আদৌ এতগুলো বস্তার প্রয়োজন রয়েছে? সন্দেহ থেকেই সেগুলো খোলার নির্দেশ দেন বিচারপতি। তারপরই আদালত কক্ষে সকলের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়। বস্তায় ভরে রাশি রাশি খুচরো পয়সা এনেছেন দশরথের পরিবারের লোকজন। তাঁদের দাবি ১ ও ২ টাকার কয়েন মিলিয়ে মোট ৫৫ হাজার টাকা রয়েছে ওই বস্তায়। প্রথমে অবাক হলেও, এই কাণ্ড দেখে বেজায় চটে যান দশরথের স্ত্রী সীমাদেবী। এই কাজ তাঁকে অপদস্ত করার জন্যই করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে দশরথের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়, এই কয়েন ভারত সরকারের স্বীকৃত মুদ্রা, এতে কোনও ভুল নেই। এই যুক্তি অবশ্য অগ্রাহ্য করেনি আদালতও। তবে এইভাবে টাকা দেওয়ায় আপত্তি জানিয়েছেন বিচারক। একটি নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে কয়েনগুলো আলাদা আলাদা প্যাকেটে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ১০০০ টাকা প্রতি প্যাকেট এই হিসেবে ওই কয়েনগুলো সীমাদেবীকে দিতে হবে। এদিকে টাকা ফেরত দেওয়ায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন দশরথ। তবে এমন কাণ্ড একেবারেই বিরল এমনটাই দাবি আদালত চত্বরে থাকা অনেকেরই।