হিন্দুধর্মের অতি পবিত্র তিথি একাদশী। এইদিন ভক্তিভরে শ্রী বিষ্ণুর স্মরণ করলে যে কোনও বাধা কেটে যায়। শাস্ত্রে একাদশী তিথিতে নিরম্বু উপবাসের উল্লেখ মেলে। পঞ্জিকামতে বছরে মোট ২৪ টি একাদশী ব্রত পালনীয়। তবে কিছুক্ষেত্রে তা ২৬ টি-ও হতে পারে। অনেকেই সবকটি একাদশী পালন করতে পারেন না। তাই কয়েকটি বিশেষ একাদশী ব্রত পালন করলেই সম্পূর্ণ ব্রতে ফল মেলে। তালিকায় কোন কোন একাদশী ব্রত রয়েছে? আসুন শুনে নিই।
একাদশী মূলত চান্দ্র তিথি। শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষে একাদশী তিথি, হিন্দুমতে অতি পবিত্র। বিষ্ণুর শয়ন, পার্শ্ব পরিবর্তন ও উত্থান উপলক্ষে যথাক্রমে আষাঢ়, ভাদ্র ও কার্তিক মাসের শুক্লা একাদশী বিশেষ শুভ বলে গণ্য হয়। এছাড়া ভৈমী একাদশী ও মাঘের শুক্লা একাদশীকেও বিশেষ মাহাত্ম্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়। বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে অপরা, নির্জলা, যোগিনী, পদ্মিনী, শয়নী এবং প্রবোধনী একাদশীর।
আরও শুনুন: রথের দিনই ফিরবে ভাগ্য, বাড়িতে অবশ্যই পালন করুন সাধারণ কিছু নিয়ম
ঠিক কী নিয়ম পালন করতে হয় একাদশী ব্রতে?
বৈষ্ণব মতানুসারে একদশী ব্রতপালন শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। বিভিন্ন বিষ্ণু মন্দিরে মাসে দুবার অবশ্যই এই ব্রত পালন করা হয়। তবে বাড়িতেও সহজেই একাদশী ব্রত পালন সম্ভব। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, মূলত বিধব অ ব্রাহ্মণরা এই ব্রত পালন করেন। তবে শাস্ত্রে তেমন কিছু নির্দিষ্ট করা নেই। যে কেউ শ্রী বিষ্ণুর স্মরণ নিয়ে, এই ব্রত পালন করতে পারেন। মনে করা হয়, একাদশী ব্রত পালন করলে যে কোনও দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা করেন স্বয়ং নারায়ণ। মন্দিরে বিভিন্ন উপাচারের মাধ্যমে এই দিন নারায়ণ পুজোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে বাড়িতে সেই বিশাল আয়োজন সম্ভব নয়। তাই সাধারণ কিছু নিয়ম মানলেই একদশী ব্রত পালন হতে পারে। যেকোনও ব্রতের দিনই শুদ্ধাচারে কাটানো নিয়ম। স্রেফ শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান কিংবা অন্যান্য শুদ্ধাচার নয়, চিন্তা ভাবনাও সঠিক পথে চালিত করতে হয় এই বিশেষ দিনগুলিতে। ব্রতের দিন কারও ক্ষতি করা বা ওই জাতীয় চিন্তা মনে আসলেও ফল হয় একেবারে উলটো। প্রথম থেকে ঈশ্বরচিন্তায় মগ্ন থাকলে সেই আশঙ্কা কম হয়। তাই একাদশীর দিন ঘুম থেকে উঠেই মনে মনে ঠিক করে নিতে হয় কোনও কু-সংসর্গের প্রভাব যেন এই বিশেষ দিনে আপনার উপর না পড়ে। এদিনও ভোরবেলা স্নান সেরে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তারপর শুদ্ধ বস্ত্র পরে, যতটুকু সামর্থ তা দিয়েই শ্রী বিষ্ণুর পুজো সারতে হয়। কেউ চাইলে মন্দিরে গিয়েও পুজো দিয়ে আসতে পারেন। একইসঙ্গে এদিন অবশ্যই পুজো করতে হয় তুলসীর। নারায়ণের পুজোয় অতি আবশ্যক এই গাছের পাতা। তাই একাদশী ব্রত পালনে তুলসী ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুজোর পর অবশ্যই প্রসাদ খাওয়া যেতে পারে। তবে অনেকেই এইদিন কিচ্ছুটি দাঁতে কাটেন না। একাদশীর দিন উপবাসী হয়ে কাটানোই নিয়ম। রাতে একবার খাওয়া যেতে পারে। তায় তামসিক আহার একেবারেই নয়। এমনকি ভাত বা চাল জাতীয় কোনও খাবারও এইদিন খাওয়ার নিয়ম নেই। ময়দার তৈরি খাবার কিংবা মিষ্টি খাওয়া যেতে পারে।
আরও শুনুন: নীল বর্ণের জগন্নাথ, মহিলারাও অংশ নেন প্রভুর এই বিশেষ রূপের পুজোয়
মূলত নারায়ণকে ঘিরে একাদশীর যাবতীয় বিচরণ। এই ব্রত ঘিরে একাধিক পুরাণ কাহিনি রয়েছে। বলা ভালো, প্রতিটি একাদশীর নেপথ্যেই রয়েছে এমন কাহিনী। তবে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ভৈম একাদশী, নির্জলা একাদশী, শয়ন ও উত্থান একাদশী এবং মাঘ মাসের শুক্লা একাদশী। চলতি বছরে জগন্নাথের রথযাত্রা উৎসবের পরেই রয়েছে শয় একাদশী। মহাপ্রভু জগন্নাথের সঙ্গে এই ব্রতের বিশেষ যোগ রয়েছে। তাই আসন্ন একাদশী সকলের অবশ্য পালনীয় হতে পারে। বিভিন্ন সমস্যায় জর্জড়িত হয়ে থাকলে এই ব্রত অবশ্যই কাজে লাগবে। ভক্তিভরে একাদশী পালন করলে রক্ষা করেন স্বয়ং নারায়ণ। উপবাসের মাধ্যমেই সম্পূর্ণ ফল মেলে ব্রতের। এ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যাও রয়েছে শাস্ত্রেই, “ধর্ম্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যং মূলমুত্তমম্” অর্থাৎ উপবাসই আরোগ্য বা স্বাস্থ্যের মূল। এবং স্বাস্থ্যই চতুর্ব্বৰ্গসাধনের উত্তম মূল। অতএব যথাসম্ভব উপবাস অভ্যাস অবশ্য কর্ত্তব্য। একাদশী পালনের অছিলায় সেই অভ্যাস করলে আসলে আপনারই লাভ।