পুরুষোত্তম ক্ষেত্রের বার্ষিক উৎসব। রথে চড়ে মাসির বাড়ি রওনা দেবেন প্রভু। শ্রীমন্দিরে এই বিশেষ দিনের প্রস্তুতি শুরু হয় বহু আগে থেকেই। রথ নির্মাণ থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন আচার পালন, সবকিছুর দায়িত্বে থাকেন মন্দিরের সেবায়েতরা। শ্রীমন্দিরে সেবায়েত হিসেবে সম্প্রতি নিযুক্ত হয়েছে তিন খুদে। বছরে ১-২ লক্ষ টাকা বেতনও পাবে তারা। এত কম বয়সে কী এমন কাজের দায়িত্ব পেয়েছে তারা? আসুন শুনে নিই।
তিনজনেরই বয়স মেরেকেটে এক বছর। কিন্তু তাতে কি! এইটুকু বয়সেই শ্রীমন্দিরে জগন্নাথ সেবার সুযোগ পেয়েছে দুই খুদে। পারিবার সূত্রেই এই সৌভাগ্য হয়েছে তাদের। যার জন্য বছরে ১-২ লক্ষ টাকা বেতন দেওয়া হবে তাদের।
আরও শুনুন: নীল বর্ণের জগন্নাথ, মহিলারাও অংশ নেন প্রভুর এই বিশেষ রূপের পুজোয়
রথযাত্রা উপলক্ষে সেজে উঠছে পুরীর মন্দির। ত্রিমূর্তিকে ঘিরে একাধিক আচার পালন শুরু হয়েছে কয়েক মাস আগে থেকেই। চন্দন যাত্রা, স্নান যাত্রা পার করে প্রভু এখন নিভৃত কক্ষে দিন কাটাচ্ছেন। কথিত আছে স্নান যাত্রার পর থেকে প্রভু জ্বরে পড়েন। টানা ১৫ দিন এই অবস্থায় কাটান জগন্নাথ। তারপর মহাসমারোহে রথে আসীন হন মহাপ্রভু। এই ১৫ দিন প্রভুকে দর্শনের সুযোগ পান না সাধারণ মানুষ। শ্রীমন্দিরও সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ থাকে। স্রেফ মন্দিরের সেবায়েতরা এইসময় প্রভুর সেবায় নিযুক্ত থাকেন। এইসময় প্রভুকে নানা ভেষজ পথ্য দেওয়ার চল রয়েছে। সেই কাজেই সম্প্রতি নিযুক্ত হয়েছে তিন খুদে। একজনের বয়স ১০ মাস, বাকি দুজন সবে ১ বছর পার করেছে। প্রত্যেকেই দৈতাপতি বংশের সন্তান। মন্দিরের নিয়ম অনুযায়ী এঁরাই বংশ পরম্পরায় প্রভু জগন্নাথের সেবা করে আসছেন। শ্রী মন্দিরে সেবায়েত হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে একটি অদ্ভুত প্রথা মেনে চলেন দৈতাপতিরা। জগন্নাথের রথযাত্রার আগের ১৫ দিন, অর্থাৎ যে সময়টায় প্রভু নিভৃতে যাপন করেন, তখনই নতুন সেবায়েত হিসেবে নিযুক্ত হন দৈতাপতি বংশের সদস্যরা। সেক্ষেত্রে নিয়ম হল, বংশের যে কোনও পুত্র সন্তান, যার বয়স ২১ দিনের বেশি, তাকেই সেবায়েত হিসেবে নিয়োগ করা যাবে। এবং প্রভুর নিভৃত যাপনের এই ১৫ দিনের মধ্যে যে কোনও একদিন ওই খুদেরা সরাসরি প্রভু জগন্নাথের সেবার সুযোগ পাবে। এর জন্য বছরে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা বেতনও পাবে তারা।
আরও শুনুন: স্বয়ং কৃষ্ণের লীলার সঙ্গে যোগ, প্রভু জগন্নাথকে কেন ৫৬ ভোগ দেওয়া হয় জানেন?
চলতি বছরেও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। এবার মন্দিরের সেবায়েত হিসেবে যোগ দিয়েছে বলদেব দাসমহাপাত্র এবং একাংশু দাসমহাপাত্র এবং আরও এক খুদে। তিনজনেরই বয়স মেরেকেটে এক বছর। প্রথা মেনে তাদের এই কাজে যোগ দেওয়ায় যারপরনায় খুশি দৈতাপতি পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। তাঁদের মধ্যেও অনেকেই প্রভু জগন্নাথের সেবায় সরাসরি নিযুক্ত রয়েছেন। এই মূহুর্তে কারওর দম ফেলার সময় নেই। একদিকে অসুস্থ জগন্নাথের সেবা, অন্যদিকে জোর কদমে চলছে রথ প্রস্তুতির কাজ। সব মিলিয়ে সাজো সাজো রব পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে। এরই মাঝে তিন খুদের সেবায়েত হিসেবে যোগদান যেন আরও আনন্দের আভাস ডেকে এনেছে দৈতাপতি পরিবারে।