সম্প্রতি পিএসজি ফ্যানদের বিরুদ্ধে গিয়ে মেসির পাশে দাঁড়িয়েছেন কিলিয়ান এমবাপে। তাঁর এই মন্তব্যে অনেক মেসি ফ্যান খুশি হলেও ওই মন্তব্যের পিছনে অন্য ইঙ্গিতও খুঁজে পাচ্ছেন কেউ কেউ। কী তাঁদের বক্তব্য? হঠাৎ কেন মেসির হয়েই বা মুখ খুললেন পিএসজি তারকা? আসুন শুনে নিই।
এই তো কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে ফুটবল বিশ্বকাপ। ২৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাপ ঘরে তুলেছে আর্জেন্টিনা। ফাইনালে কঠিন প্রতিপক্ষ ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে। আর যে দুই প্রবল প্রতিপক্ষের দিকে ওই দুই দেশের মানুষ তথা সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকিয়ে ছিল, তাঁরা হলেন কিলিয়ান এমবাপে ও লিওনেল মেসি। যদিও ক্লাব ফুটবলে দুজনেই সতীর্থ ছিলেন, কিন্তু দেশের জার্সিতে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে কোন পর্যায়ে যেতে পারে তা দেখেছে গোটা ফুটবল বিশ্ব। কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও জায়গা ছাড়েননি। শোনা যায় সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাকি প্রভাব ফেলেছিল ব্যক্তিগত স্তরে দুজনের সম্পর্কেও। আর তাই তো মেসি ওয়ার্ল্ডকাপ জেতা সত্ত্বেও ক্লাবের মাঠে মেসিকে ওয়ার্ল্ডকাপ মেডেল প্রদর্শন করার অনুমতি দেননি ক্লাব কর্তারা। ক্লাব কর্তারা এমবাপে-কে চটাতে চাননি বলেই এমনটা করেছিলেন, মত ফুটবল মহলের।
তারপর ৫ মাস কেটে গেছে। এখন সব অতীত। আর তা ছাড়া এখন তো মেসি আর এমবাপে এক ক্লাবের সতীর্থও নন। সম্প্রতিই মেসি জানিয়েছেন যে পিএসজির সঙ্গে আর চুক্তি বাড়াবেন না। এমনকি তাঁর পরবর্তী গন্তব্যও মেসি বেছে ফেলেছেন। মেজর লিগ সকারের ক্লাব ইন্টার মায়ামি। মেসি নিজে মুখেই জানিয়েছেন যে প্যারিস সাঁ জাঁ-র ২ বছর তাঁর ভালো কাটেনি। দ্বিতীয় বছরের শুরুতে ভালো লাগলেও ওয়ার্ল্ড কাপে ফ্রান্সকে হারানোর পর সব বদলাতে শুরু করে। পিএসজির সমর্থকরাই মেসিকে কটূক্তি করতে থাকেন। ক্লাবের প্লেয়ার, কোচরা বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও পিএসজি আল্ট্রাস মেসিকে লক্ষ্য করে বিষোদ্গার করতেই থেকেছে। স্বভাবতই যেটা মেসির ভালো লাগেনি। দলের হয়ে একজন খেলোয়াড় মাত্র ৭৫ ম্যাচে ৩২টা গোল আর ৩৪টা অ্যাসিস্ট করার পরেও তাঁকে আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয়েছে, যেটা ভীষণ অবাক করার মতোই একটা বিষয়। কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মেসি পিএসজি-তে থাকাকালীন এমবাপে এই ঘটনাগুলি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়াই দেননি। তবে সম্প্রতি একটি ইন্টারভিউ-এ তিনি মেসিকে নিয়ে মুখ খুলেছেন। মেসির পাশে দাঁড়িয়ে তিনি সাফ জানিয়েছেন যে ফ্রান্স মেসিকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। মেসি এমন একজন প্লেয়ার যিনি সর্বকালের সেরা হওয়ার যোগ্য, তাঁকে যোগ্য সম্মান না দিতে পারাটা খুবই দুঃখজনক। মেসির পিএসজি ছেড়ে যাওয়াটা ক্লাবের জন্য দুঃসংবাদ বলেই মত এমবাপের।
এমবাপের এহেন মন্তব্যের পর স্বভাবতই খুশি মেসি সমর্থকরা। তবে বেশ কিছু ফুটবল বোদ্ধারা কিন্তু এর পিছনে অন্য ইঙ্গিত দেখছেন। তাঁদের মত অনুযায়ী, এমবাপে এখন যা করছেন খুব বুঝে শুনে। সম্প্রতিই এই খবর প্রকাশ্যে এসেছে যে এমবাপে পিএসজি-র সঙ্গে আর চুক্তি নবীকরণ করবেন না। তাঁর চুক্তির মেয়াদ ২০২৪ পর্যন্ত। অর্থাৎ এই বছরে পিএসজি যদি তাঁকে না বিক্রি করে, তাহলে এমবাপে ২০২৪-এর শেষে যে-কোনো দলে ফ্রি এজেন্ট হয়ে যোগ দিতে পারবেন। অর্থাৎ পিএসজি এমবাপের জন্য কোনও ট্রান্সফার ফি পাবে না। এদিকে এমবাপের মতো প্লেয়ারকে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে যেতে দেওয়া চূড়ান্ত বোকামি। তাই পিএসজির অন্দরে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে যে এমবাপেকে এ বছরই বিক্রি করে দেওয়া হতে পারে। এবং এমবাপেও নাকি তাই চান। সূত্রের খবর, এমবাপের পছন্দের ক্লাব রিয়েল মাদ্রিদ। আর এখানেই দুয়ে দুয়ে চার করছে ফুটবলের ওয়াকিবহাল মহল। তাঁদের মত, এমবাপে আগে মেসিকে নিয়ে কিছু বলেননি কারণ তিনি ফ্যানদের চটাতে চাননি। আর যেহেতু তিনি এখন জানেন যে পিএসজির তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই, তাই তিনি এবার মন খুলে নিজের কথা বলতে পারছেন। এখন এমবাপের ভবিষ্যৎ কী হবে, সে কথা সময় বলবে। কিন্তু প্রাক্তন সতীর্থ মেসিকে নিয়ে এমবাপের এই মন্তব্য যে তাঁর নিজের দলবদলের জল্পনাকেও উসকে দিল, সে কথা বলাই বাহুল্য।