রথস্থ বামনং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে’ – অর্থাৎ, রথে উপবিষ্ট জগন্নাথদেবকে যিনি দর্শন করেন, তাঁর পুনর্জন্মের ভাবনা থাকে না। ঠিক সেই টানেই যে এত মানুষ রথের উন্মাদনায় নিজেকে ভাসিয়ে দেন একথা বলা ভুল। বরং বলা যেতে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে মানুষের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার যোগসূত্র এই রথযাত্রা উৎসব। যার নিমিত্ত স্বয়ং জগন্নাথ। স্রেফ পুরীধাম নয়, বাংলা সহ দেশবিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে মহাসমারোহে পালিত হয় রথযাত্রা উৎসব। কিন্তু এই রথযাত্রার সূচনা হয়েছিল ঠিক কীভাবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রথযাত্রা। পুরীধামের বার্ষিক উৎসব। তবে স্রেফ পুরী নয়, রথযাত্রাকে সারা দেশেই আনন্দের উৎসব। বর্তমানে বিদেশের মাটিতেও রথযাত্রার আয়োজন হয়। কিন্তু এই উৎসবের ইতিহাস সুপ্রাচীন। যার সঙ্গে মিশে আছে, কল্পকথা, পুরাণের কাহিনী, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর নানা আচার-প্রথার বর্ণনা। তবু সর্বোপরি রথযাত্রা মানুষের উৎসব। এখানে কোনও বিভেদ নেই। প্রভু যে সকলের অধীশ্বর তা নতমস্তকে স্বীকার করেন সকলেই।
আরও শুনুন: কর্মে বাধা, সংসারে অশান্তি, ‘কু-নজর’ এড়াতে কোন নিয়ম মেনে চলবেন
রথযাত্রার ইতিহাস শতাব্দীপ্রাচীন। স্কন্দপুরাণে বিশেষভাবে পুরীধামে রথযাত্রার বর্ণনা রয়েছে। তবে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা মেলে উড়িষ্যার এক প্রাচীন পুঁথিতে। সেখানে রথযাত্রার ইতিহাস প্রসঙ্গে সত্যযুগের উল্লেখ মেলে। সে সময় উড়িষ্যা মালবদেশ নামে পরিচিত ছিল। আর এই মালবের রাজা ছিলেন সূর্যবংশীয় কৃষ্ণভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন। নিষ্ঠাভরে নিজের আরাধ্যের পুজো করলেও তিনি সবসময় চাইতেন শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং তাঁর রাজ্যে অধিষ্ঠান করুন। ভক্তের মনের ইচ্ছা সত্যিই পূরণ করেন নারায়ণ। তিনি ইন্দ্রদ্যুম্নকে স্বপ্নাদেশ দেন এক বিশেষ মূর্তি নির্মাণের। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই মূর্তির সম্পূর্ণ নির্মাণে ব্যর্থ হন রাজা। অগত্যা অসম্পূর্ণ মূর্তিটিই দেবরূপে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তৈরি হয় পুরীধাম। কথিত আছে, এই সময় থেকেই সেখানে রথযাত্রার সূচনা। তবে বাংলায় রথের সূচনাকাল তার বেশ কিছুকাল পরে। কথিত আছে, এখানে প্রথম রথ হয়েছিল শ্রীরামপুরের মাহেশ অঞ্চলে। যা আজও মহা সমারোহে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এটিই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা। পাশাপাশি বাংলায় রথযাত্রার প্রসারে চৈতন্যদেবের ভূমিকাও অনস্বীকার্য।
আরও শুনুন: এইসব দেবতার মূর্তি রেখেছেন ঠাকুরঘরে? হতে পারে মারাত্মক বিপদ
এই রথকে কখনও আমাদের দেহের সঙ্গেও তুলনা করা হয়। রথের গঠনের ভিতর তার ইঙ্গিত আছে। যেমন জগন্নাথদেবের রথের ষোলটি চাকা আমাদের দশ ইন্দ্রিয় ও ছয় রিপুর প্রতীক, এরকম মত পোষণ করেন কেউ কেউ। রথে ব্যবহৃত কাঠের সঙ্গেও আমাদের শারীরিক গঠনের যোগাযোগ আছে, এরকমটাও বলেন কেউ কেউ।