সাহসি, বোল্ড, ছকভাঙা। যাই-ই বলা হোক না কেন, নব্বইয়ের খোলা হাওয়ায় নগ্নতায় যে ঝড় তুলেছিলেন মমতা কুলকার্নি, তা আজও ভুলে যায়নি সিনেমহল। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল যথেষ্ট। কিন্তু কেন এই বিতর্ক!
জনপ্রিয় নায়িকা। দু-চোখে অমোঘ আকর্ষণ নিয়ে তাকিয়ে আছেন সরাসরি দর্শকের চোখের দিকেই। তবে তাঁর ঊর্ধাঙ্গে সুতোটি নেই। হাতের আড়ালে ঢেকে রেখেছেন যৌবনের উদ্ভাস। তবে সে আর কতটুকু! তাঁর আবেদনটুকু সব আড়াল আর গোপনীয়তা পেরিয়ে এসে ঢেউ দিয়েছিল দর্শকের মনে। নগ্নতার সেই সহজ ও অনিবার্য উচ্ছ্বাস আর উদযাপনে যেন উদ্দাম হয়েছিল অগণিত মনের বাসনাসমুদ্র। যে নায়িকার কথা হচ্ছে, তিনি মমতা কুলকার্নি। এক জনপ্রিয় সিনে ম্যাগাজিনের জন্য তাঁর এই নগ্ন ফটোশ্যুট রীতিমতো হিল্লোল তুলেছিল সেই প্রজন্মের মনে।
আরও শুনুন: পঙ্কজ-মনোজ-নওয়াজ নন, OTT-তে কাজের জন্য সবথেকে বেশি পারিশ্রমিক কোন তারকার?
আসলে নয়ের দশক মানেই যেন একটা ঝড়ো হাওয়ার দিনকাল। একদিকে উদার অর্থনীতি এসে বদলে দিচ্ছে সমাজ। আর তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে সংস্কৃতিও। সেই সময়ের সিনেমা তার বিষয়বস্তুতে ক্রমশ হয়ে উঠতে চাইছে ছকভাঙা। আর সেই নব্বইয়েরই বোল্ড স্টেটমেন্ট হয়ে উঠেছিল অভিনেত্রী মমতা কুলকার্নির নগ্ন ফটোশ্যুট। সেদিনের নিরিখে এতটা সাহসি ছিল এই পদক্ষেপ যে দর্শক হতচকিত হয়েছিলেন। হয়েছিল তুমুল বিতর্কও। আর সেদিনের সেই ফটোশ্যুটের নেপথ্যে ছিলেন চিত্রগ্রাহক জয়েশ শেঠ। নগ্ন হয়ে ক্যামেরার সামনে ধরা দেওয়া আজকের দিনে বিশেষ কোনও ঘটনাই নয়। খোলেমালা পোশাক বা শরীরী স্বাধীনতা উদযাপনের দিকটি আজ যেভাবে গুরুত্ব পায় সেদিন তা ছিল না। নায়িকাদের কথা ছেড়েই দেওয়া যাক, সমসময়ের নায়করা- রণবীর কাপুর থেকে শুরু করে রণবীর সিং-রাও এখন অনায়াসে ক্যামেরার সামনে নিজেকে অনাবৃত করে তুলতে পারেন। সাহসি বা বোল্ড ফটোশ্যুট বলতে যা বোঝায়, তা এত আকছার হয়ে গিয়েছে, যে আজ আর তা আমাদের মনে তেমন করে বিস্ময় জাগায় না। তবে মমতা কুলকার্নি যখন তাঁর ঊর্ধাঙ্গ অনাবৃত করে ধরা দিলেন, তখন ব্যাপারটা এতটাও সহজ ছিল না। তাই একদিকে যেমন আলোচনা, অন্যদিকে তেমন বিতর্কও উঠেছিল তুঙ্গে। চিত্রগ্রাহক জয়েশ পরে জানিয়েছিলেন, দর্শকচোখ তখনও নায়িকাকে এভাবে দেখতে প্রস্তুত ছিলেন না। ফলে সকলেই তাজ্জব হয়েছিলেন, আর জোরালো বিতর্ক হয়েছিল।
আরও শুনুন: প্রেম ভাঙতেই প্রেমিকাকে আঘাত! ঐশ্বর্যর গায়ে হাত তোলা নিয়ে কী বলেছিলেন সলমন?
তবে চিত্রগ্রাহক জানিয়েছিলেন, যে মডেল এভাবে নগ্ন হয়ে নিজেকে ক্যামেরার সামনে তুলে ধরবেন, তাঁকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। মমতা কুলকার্নির সেই আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল না। আর নগ্নতা নিয়ে কোনও ছুঁৎমার্গও ছিল না। তবে, সমাজের মন সেভাবে প্রস্তুত ছিল না বলেই বিতর্ক হয়েছিল বিস্তর। এমনকী দক্ষিণপন্থীরা বেশ অসন্তুষ্ট হয়ে আপত্তিও জানিয়েছিল। যদিও তার জন্য প্রস্তুতই ছিলেন তাঁরা। তবে এই ফটোশ্যুটের জল গড়িয়েছিল আদালতেও। যে মামলা জিততে প্রায় ১০ বছর লেগে যায় জয়েশ ও মমতার। শেষমেশ, আদালত জানিয়েছিল, ছবির মধ্যে অশ্লীলতা কিছু ছিল না। পরবর্তীতে মমতা কুলকার্নি সাধন-ভজনের পথে আশ্রয় নেন। এ বিষয়ে একটি বইও লেখেন তিনি। তবে তাঁর পূর্বজীবনের সেই সাহসি পদক্ষেপ এখনও ভুলতে পারেনি সিনেমহল। আর সেই ঝড়ের নেপথ্য কারিগর হিসাবে অনেকখানি কৃতিত্ব প্রাপ্য চিত্রগ্রাহক জয়েশ শেঠেরই।