ব্যর্থ ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। সিনেমা দেখিয়েও এতটুকু ‘ভয়’ জন্মাল না মনে। পরিবাবের বিরুদ্ধে গিয়ে মুসলিম প্রেমিকের সঙ্গেই চম্পট দিলেন তরুণী। ঘটনায় বেজায় মুষড়ে পড়েছেন বিজেপি সাংসদ সাদ্ধী প্রজ্ঞা। হবেন নাই বা কেন! তিনিই তো তরুণীকে ‘ঠিক’ পথে আনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ঘটা করে দেখিয়েছিলেন ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। কিন্তু কাজে এল না সেসবের কিছুই। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন শুনে নিই।
মুসলিম যুবকের সঙ্গে প্রেম করছে মেয়ে। জানার পরই বেজায় ভয় পেয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। বারবার তরুণীকে বোঝানোর চেষ্টা চলে, এই প্রেম কতটা ‘বিপজ্জনক’। পরিবারের বোঝানো কাজে না এলে মাঠে নামেন স্থানীয় বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা। লাভ জেহাদের হাজারো উদাহরণ দিয়ে তরুণীকে ঠিক পথে আনার চেষ্টা করেন তিনি। ঘটা করে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-ও দেখান। কিন্তু কিছুতেই কিছু লাভ হল না। সকলের বিরুদ্ধে গিয়ে সেই মুসলিম প্রেমিকের সঙ্গেই চম্পট দিলেন তরুণী।
আরও শুনুন: ২৮৮ জনের মৃত্যুও মুছতে পারল না সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, কোন পথে হাঁটছে দেশ?
ঘটনাটি ভোপালের। বছর ১৯-র এই হিন্দু তরুণী পেশায় নার্স। দীর্ঘদিন ধরে এক মুসলিম যুবকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। একসময় সেই সম্পর্কের কথা বাড়িতেও জানাজানি হয়। তারপর থেকেই শুরু হয় সমস্যা। পরিবারের লোকজন কিছুতেই সম্পর্ক মেনে নিতে নারাজ। বিভিন্নভাবে বাড়ির মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করেন সকলেই। কিন্তু সেই মেয়েও নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। ভালোবাসায় কোনও ভুল নেই বলেই তাঁর দাবি, তাই এই সম্পর্ক থেকে তিনি কিছুতেই বেরিয়ে আসবেন না। অগত্যা স্থানীয় বিজেপি সাংসদের দ্বারস্থ হন ওই তরুণীর পরিবার। তিনিও সাধারণ কেউ নন। বিভিন্ন ইস্যুতে খবরের শিরোনামে থাকা বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা। সমস্যার কথা সবিস্তারে শুনে তিনি ওই পরিবারকে আস্বস্ত করেন। নিজেই দায়িত্ব নেন তরুণীকে ‘ঠিক’ পথে আনার। তারপর প্রায় প্রতিদিনই তরুণীকে বিভিন্ন ভাবে বোঝাতে আরম্ভ করেন তিনি। লাভ জেহাদ কতটা ভয়ংকর তার বিভিন্ন উদাহরণ ওই তরুণীর সামনে তুলে ধরেন তিনি। এমনকি ঘটা করে তাঁকে নিয়ে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখাতে যান। সেখানেও তো এই ধর্মান্তকরণ ইস্যুই দেখানো হয়েছে। তাই সাধ্বী মনে করেছিলেন, এই সিনেমা দেখে তরুণীর মন কিছুটা হলেও বদলাবে। কিন্তু কোথায় কি! এসবের কিছুতেই যে কোনও লাভ হয়নি তা স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দেন ওই তরুণী নিজেই। পরিবারের তরফে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়েছে জেনে চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। বিয়ের ঠিক কয়েকদিন আগেই নিজের দীর্ঘদিনের মুসলিম প্রেমিকের সঙ্গে চম্পট দেন তিনি। প্রথমে তাঁর খোঁজ না পেয়ে সরাসরি থানায় হাজির হন পরিবারের লোকজন। সেখানে ওই মুসলিম যুবকের নামে অভিযোগও দায়ের করা হয়। পরিবারের দাবি ছিল, তাঁদের বাড়ির মেয়েকে মিষ্ঠি কথায় ভুলিয়ে নিয়ে গিয়েছে ওই মুসলিম যুবক।
আরও শুনুন: ‘গোহত্যা কেন অপরাধ?’ সরকার পালটাতেই মত বদল, প্রশ্ন খোদ কর্ণাটকের মন্ত্রীর
কিন্তু এই অভিযোগ যে একেবারেই মিথ্যে তা প্রমাণ করে দেন ওই তরুণী নিজেই। ঘটনার কিছুদিনের মধ্যে প্রেমিকের সঙ্গে থানায় যোগাযোগ করেন তিনি। এবং নিজে মুখে জানিয়ে দেন এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে তাঁর ব্যক্তিগত। কেউ তাঁকে কোনওভাবে প্রভাবিত করেনি। তিনি স্বেচ্ছায় নিজের প্রেমিকের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামীদিনেও এই যুবকের সঙ্গেই তিনি থাকতে চান। প্রাপ্তবয়স্ক তরুণীর এমন বয়ানের পর পুলিশের পক্ষেও আর কিছু করা সম্ভব নয়। তাই কার্যত সবকিছুই মেনে নিতে বাধ্য হন ওই তরুণীর পরিবারের লোকজনও। তবে ঘটনায় বেজায় মুষড়ে পড়েছেন সাধ্বী প্রজ্ঞা। তাঁর দাবি, ওই তরুণী অবোধ তাই এমন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। তবে এর জেরে আগামীদিনে নিজের পথা থেকে সরা আসবেন না সাধ্বী এমনটাও জোর গলায় জানিয়েছেন। কোনওভাবেই লাভ-জেহাদের মতো ঘটনা সমর্থন যোগ্য নয়। তাই যেখানেই হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের খবর পাবেন, সেখানেই প্রতিবাদ জানাবেন তিনি। এমনটাই দাবি বিজেপি সাংসদের।