বিপদে পড়লেই তো ঈশ্বরকে ডাকে মানুষ। দেবতা যে-কোনও বিপদ থেকে পরিত্রাণ করবেন, ভক্তদের বিশ্বাস এমনটাই। কিন্তু সেই দেবতাই যদি উলটে বিপদে ফেলে দেন? হ্যাঁ, এমনও দেবতা আছেন বলেই বিশ্বাস করেন হিন্দুরা। জ্বর থেকে বসন্ত, এমন নানা রোগ নাকি বাধিয়ে দিতে পারেন তাঁরা। কারা এই দেবতারা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
একসময় মানুষ বিশ্বাস করত, দেবতার কোপেই অসুখবিসুখ হয়, আর তা সেরেও যায় দেবতার কৃপাতেই। সেই ভাবনা থেকেই হিন্দুদের লৌকিক আচারে এমন একাধিক দেবদেবীর সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁদের অসুখের দেবতা বললে ভুল হয় না।
আরও শুনুন: গণধর্মের গণদেবতা প্রভু জগন্নাথ, ভক্তদের দর্শন দেন গজানন রূপেও
পুরাণ মতে শিবের সঙ্গে দক্ষের বিরোধের কথা তো সকলেরই জানা। একবার যজ্ঞের সময় শিব ছাড়া সব দেবতাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন দক্ষ। শিব এসব তুচ্ছ ব্যাপারে মাথা না ঘামালে কী হবে, তাঁর ভক্তরা এই ঘটনায় রেগে ওঠেন। সরাসরি শিবের কাছে গিয়েই এর একটা বিহিত করার আরজি জানান তাঁরা। অবশেষে এই মুনি-ঋষিদের পীড়াপীড়িতে শিবের কপাল থেকে ঝরে পড়ে এক বিন্দু ঘাম। এই ঘামের থেকে জন্ম নেন জ্বরা। যজ্ঞভূমিতে গিয়ে তিনি অসুখ ছড়াতে শুরু করেন। তার প্রকোপে পবিত্র আগুনের চারপাশে বসা লোকজনের শরীর তপ্ত হয়ে ওঠে, সংক্রমণের গুটিতে ভরে যায় শরীর, কাহিল হয়ে পুরোহিতরা পর্যন্ত মন্ত্রপাঠ, যজ্ঞ থামিয়ে দেন। অবশেষে শিবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধ্য হন দক্ষ। রাগ ভুলে সকলকে নিরাময় করে দেন আশুতোষ শিব। সেই সূত্রেই নাকি তাঁর নাম হয় বৈদ্যনাথ, অর্থাৎ সকল বৈদ্যের প্রভু।
আরও শুনুন: কামাখ্যার অম্বুবাচী মেলায় সমাগম বহু ভক্তের, কী রহস্য এই মেলাকে ঘিরে?
শিবের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে আরও অসুখের দেবীদের। গোটা দেশ জুড়ে সপ্তমাতৃকা নামে সাতজন মা অথবা সাতজন কুমারী রূপে দেবীদের পীঠস্থান রয়েছে। শিবের পুত্র স্কন্দকে তাঁরা হত্যা করবার চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি তাঁদের মা বলে সম্বোধন করেন এবং তাঁদের স্তন্যপানও করেন। তার ফলে তাঁরা বর লাভ করেন যে, কেউ তাঁদের অমান্য করলে তাকে জ্বর হওয়ার অভিশাপ দিতে পারবেন। মহারাষ্ট্রে এই দেবীরা ‘সতি অসরা’ নামে পরিচিত।
আরও শুনুন: সোমবার মিষ্টি, মঙ্গলে ঘি! শাস্ত্রমতে কোন দিনে কোন খাবার নিষিদ্ধ?
বাংলার লৌকিক দেবতাদের অন্যতম দেবী শীতলা, যিনি বসন্ত রোগের দেবী। একসময় কারো এই রোগ হলে রোগের নাম মাত্র উচ্চারণ করা হত না, বলা হত মায়ের দয়া হয়েছে। শীতলার সঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন ঘেঁটুকর্ণ, যিনি চর্মরোগের দেবতা এবং রক্তাবতী, যাঁর প্রভাবে রক্তস্রাবঘটিত অসুখ হয়। দক্ষিণ ভারতেও পূজা পান এক জ্বরের দেবী, যাঁর নাম মারিয়াম্মা।
দেবদেবীদের শুভবোধের প্রতীক বলেই দেখা হয় সাধারণত। কিন্তু সেই ধারণার বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে আছেন এই অসুখের দেবতারা।