সংঘের সদস্য হয়েও রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রার প্রশংসা করেছিলেন চম্পত রাই। এমনকী ভালবাসার যাত্রার বিরোধী নয় সংঘ, এতটাই খোলা প্রশংসা করেছিলেন তিনি। কিন্তু সে সব এখন অতীত। এখন বরং রাহুলকে দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার জন্য কাঠগড়াতেই তুলছেন সংঘ প্রধান? কী তাঁর বক্তব্য? আসুন শুনে নিই।
সংঘের রাজনৈতিক আদর্শের বিরোধিতা করতে তিনি যে বদ্ধ পরিকর, ভারত-জোড়ো-যাত্রার সময় তা সাফ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। সেই অবস্থান থেকে তিনি যে বিন্দুমাত্র সরেননি, তা আবারও বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভিনদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আরও একবার চাঁছাছোলা আক্রমণ শানিয়েছেন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। আর প্রত্যাশিত ভাবেই তার পালটা সমালোচনা করেছে সংঘ পরিবার। কেউ কেউ ভারতের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করছেন বলেই রাহুলের বিরুদ্ধে তোপ দেখেছেন খোদ সরসংঘচালক মোহন ভাগবত।
আরও শুনুন: সাহসের নাম ‘দ্য কেরালা স্টোরি’! ছবি দেখে প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ মডেলের
অথচ কটাদিন আগেই রাহুলের ভারত-জোড়ো-যাত্রার প্রশংসাই শোনা গিয়েছিল সংঘ তথা গেরুয়া শিবিরের একাংশের মুখে। ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালবাসার বার্তা দিতেই পথ হাঁটছিলেন রাহুল। এর প্রশংসা না করে পারেননি কেউ কেউ। অযোধ্যার রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সত্যেন্দ্র দাস প্রশংসা তো করেইছিলেন। মন্দিরের ট্রাস্ট সচিব চম্পত রাই-ও প্রশংসা করেছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, আরএসএস এই যাত্রার বিরোধিতা কখনও করেননি। তিনি নিজে সংঘের সদস্য হয়েও রাহুলের রাজনৈতিক যাত্রার প্রশংসাই করেছিলেন। যদিও রাহুল অবশ্য তার বিরোধিতা বজায় রেখেছিলেন। সাভারকার বনাম গান্ধী বিতর্কটিকে রাজনীতির মূল কেন্দ্রে আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন। তারপর গঙ্গা-যমুনা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের কর্ণাটক জয়ে বড় প্রভাব পড়েছে রাহুলের ভারত-জোড়ো-যাত্রার। এদিকে তার পরেই নয়া সংসদ ভবন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মূলত হিন্দু মতে অনুষ্ঠান করে প্রত্যাশিত বার্তাও দিয়েছেন। আর তার ঠিক পরেই ভিন মুলুকে দাঁড়িয়ে মোদি সরকারকে একহাত নিয়েছেন রাহুল গান্ধী। সেই ভারত-জোড়ো-যাত্রা থেকে আজ পর্যন্ত তিনি তাঁর মূল রাজনোইতিক বিরোধিতার অবস্থানে অনড়। এর আগেও তিনি বিদেশের মাটিতে সরকারের সমালোচনা করেছেন, আবার তার পুনরাবৃত্তি ঘটালেন। আর তাতেই বেজায় খাপ্পা সংঘ। সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত নাম না করেই রাহুলকে লক্ষ্য করে জানিয়েছেন, কেউ কেউ ভারতের মর্যাদাকে মাটিতে মেশাচ্ছেন। তাঁর দাবি, যাঁরা এ কাজ করেন, তাঁরা ভারতকে হীন হিসাবে প্রতিপন্ন করতে চান। তা একেবারেই কাম্য নয় বলে তাঁর মত। তাঁর মত, সীমান্তে দাঁড়িয়ে যেখানে দেশের শক্তিকে তুলে ধরার কথা, সেখানে নিজেদের মধ্যে লড়াই করা হচ্ছে কেন! দেশের উন্নতি আর সংহতির জন্য সকলের একজোট হওয়া উচিত বলেই দাবি তাঁর।
আরও শুনুন: নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধনেই হিন্দুত্বের ‘বিজ্ঞাপন’! বাকি তারকারা চুপ, একা কেন সরব নাসিরুদ্দিন শাহ?
যদিও এই একতা নিয়েই প্রশ্ন বিরোধীদের। বিরোধী দলগুলির অনুপস্থিতি সত্ত্বেও হয়েছে সংসদ ভবন উদ্বোধন। এমনকী উদ্বোধনের সময় হিন্দু মতে অনুষ্ঠানেরই প্রাধান্য ছিল চোখে পড়ার মতো। সর্বধর্ম প্রার্থনা হলেও সেঙ্গল প্রতিষ্ঠায় অন্য ধর্মের কোনও প্রতিনিধি ছিল না। সেই সমালোচনাকেই অন্য মাত্রা দিয়েছেন রাহুল। তাঁর বিরোধিতার জায়গা থেকে আরও একবার সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। আর তাতেই সংঘের সেই পুরনো ছবি ফিরে এসেছে। এবার আর রাহুলের প্রশংসা নয়, বরং রাহুল যে দেশের গরিমা ক্ষুণ্ণ করছেন, প্রকারন্তরে তাই-ই বুঝিয়ে দিয়েছেন সংঘ প্রধান।