৫১ সতীপীঠের অন্যতম। প্রতি বছর হাজারও ভক্ত ভিড় জমান কামাখ্যার মাতৃমন্দিরে। তবে স্রেফ সতীপীঠের আকর্ষণে নয়, গৌহাটির কামাখ্যা মন্দির আরও কিছু কারণে গুরুত্বপূর্ণ। যার মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় অম্বুবাচী মেলার কথা। কী এমন রহস্য লুকিয়ে আছে সেখানে? আসুন শুনে নিই।
দেহত্যাগের পর দেবী সতীর দেহ ৫১ খণ্ডে ভাগ করেছিলেন শ্রী বিষ্ণু। মর্ত্যে সেই সমস্ত খণ্ড শিলারূপে স্থাপিত। দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই ৫১টি শিলাখন্ডকে কেন্দ্র করে ভক্তিপীঠ গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কামাখ্যা। পুরাণমতে এখানে দেবীর যোনি-র অংশ পতিত হয়। তাই অনেকেই কামাখ্যা মন্দিরকে যোনিপীঠও বলেন। তবে স্রেফ এটুকুই নয়, কামাখ্যা মন্দির ঘিরে রয়েছে আরও অনেক রহস্য।
আরও শুনুন: উপোসে অসুবিধা! নির্জলা একাদশীতে কী করলে মেলে বিশেষ ফল?
প্রতি বছর বর্ষাকালে অম্বুবাচী ব্রত পালিত হয়। পঞ্জিকামতে এই সময় দেবী পার্বতীর ঋতুমতী অবস্থায় থাকেন। অর্থাৎ এই সময়টা দেবীর ঋতুকাল। অনেকে মনে করেন প্রকৃতিও অম্বুবাচীর সময় এক বিশেষ অবস্থায় থাকে। তাই ওই কদিন বিশেষ কিছু নিয়ম পালনের রেওয়াজ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ মানুষের জন্য মাতৃমন্দির বন্ধ রাখা হয় এই সময়। অনেক জায়গায় মন্দির পুরোপুরি বন্ধ না রাখলেও দেবীমূর্তি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এমনকি বাড়িতেও কোনও দেবীর প্রতিকৃতি বা মূর্তি থাকলে তা ঢেকে রাখা নিয়ম রয়েছে। এর এই সময়টাই কামাখ্যা মন্দিরে বিশাল এক মেলা বসে। গৌহাটির সেই অম্বুবাচী মেলার জগতজোড়া খ্যাতি। বিভিন্ন প্রান্তের সাধু সন্ন্যাসীরা এই সময় কামাখ্যা মন্দিরে ভিড় জমান। অম্বুবাচীর সময়কাল ৪ দিন। সাধারণ মহিলারা ঋতুমতী অবস্থায় যেভাবে দিন কাটান এক্ষেত্রে দেবীকেও সেই ভাবেই রাখা হয়। গর্ভগৃহে আয়োজন করা হয় বিশেষ পুজো। এর সেই পুজো ঘিরেই লুকিয়ে আছে রহস্য। এই গুপ্তপুজোয় অংশ নেওয়ার অধিকার থাকে না সাধারণ মানুষের। এমনকি মাতৃমন্দির সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয় ওই ৪ দিন। তবু অনেকেই মন্দির সংলগ্ন পাহাড়ে বসে জপ-তপ করেন। মনে করা হয় এই সময় স্বয়ং দেবী ওই স্থানে বিরাজ করেন। যে নির্দিষ্ট স্থানে দেবীর যোনি স্বরূপ শিলাখণ্ডটি পতিত হয়েছিল, সেই স্থান থেকে অম্বুবাচীর সময় লাল হয়ে যায়। ভক্তরা পুজোর জন্য সাদা কাপড়ের খন্ড দান করেন। অম্বুবাচীর পর সেই সমস্ত সাদা কাপড় লাল হয়ে যায়। আর এমনটা স্রেফ কথার কথা নয়। প্রতিবছর এই অদ্ভুত অবস্থা স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হয় অনেকেরই।
আরও শুনুন: মনসাপুজোর অন্যতম তিথি, দশহরায় কোন নিয়ম পালনে বিশেষ ফল মেলে?
তবে মন্দির খুললে রাজকীয় পুজোর আয়োজন করা হয়। মাতৃমূর্তি স্নান করানো হয়। হাজার হাজার ভক্ত এদিন মা-কে দর্শন করতে ভিড় জমান মন্দিরে। শুধু কামাখ্যা মন্দিরই নয়, যে কোনও মাতৃমন্দিরেই অম্বুবাচীর পর বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। চলতি বছরে অম্বুবাচী ব্রত অনুষ্ঠিত হবে ২২ থেকে ২৬ জুন অবধি। অন্যান্য বছরের মতো এবারেও বিশেষ মেলার আয়োজন হবে কামাখ্যা মন্দিরে।