বীর সাভারকরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রণদীপ হুডা। ইতিমধ্যেই ছবির প্রচার শুরু করেছেন তিনি। আর সেখানেই অদ্ভুত দাবি করে বসেছেন অভিনেতা। সাভারকর নাকি নেতাজিরও অনুপ্রেরণা ছিলেন। বাস্তব কি তা-ই বলছে? জবাব দিলেন চন্দ্র বোস। কী বললেন তিনি? শুনে নেওয়া যাক।
নেতাজির মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীর অনুপ্রেরণা ছিলেন বীর সাভারকার? ইতিহাসের ভিতর থেকে এরকম প্রশ্ন উঠে আসার কোনও কারণই ছিল না। কেননা ইতিহাস এরকম মতবাদের সাক্ষ্য দেয় না। তবু প্রশ্নটা উঠল। আর উঠল একটা সিনেমার প্রচারের সূত্রে। এখন ইতিহাসেরই দায় সে প্রশ্নের জবাব দেওয়া। আর তাই নেতাজির পরিবারের পক্ষ থেকে চন্দ্র বসু উত্তর দিলেন সে প্রশ্নের।
আরও প্রশ্ন: ‘সেঙ্গল’ প্রতিষ্ঠায় মুসলিম ধর্মগুরু নেই কেন? মোদিকে খোঁচা দিয়ে মোক্ষম প্রশ্ন সমাজবাদী নেতার
তবে উত্তরে পৌঁছানোর আগে প্রশ্নের প্রেক্ষিতটা একটু দেখে নেওয়া যাক। অভিনেতা রণদীপ হুডার ছোট্ট একটা কথা। আর তাতেই বিতর্ক তুঙ্গে। সাভারকারের জীবন অবলম্বনে ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। ছবির প্রচার শুরু হয়েছে। আর সেখানেই একটি মন্তব্য করলেন অভিনেতা। জানালেন, সাভারকর হলেন সেই ভারতীয়, ব্রিটিশরা যাঁকে খোঁজার তালিকায় এক নম্বরে। স্বাধীনরা সংগ্রামী হিসাবে সাভারকরের জীবনের দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে যত আলোচনা হয়, প্রথব পর্ব ততটাই অনালোকিত থেকে যায়। তাই রণদীপের এ কথার সত্যতা নয় স্বীকার করে নেওয়াই গেল। কিন্তু রণদীপের পরের দাবিতে বিতর্কের আগুন ছড়িয়ে পড়ল। অভিনেতার দাবি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু থেকে ভগৎ সিংয়ের মতো বিপ্লবীদেরও অনুপ্রেরণা ছিলেন বীর সাভারকর। সত্যিই কি তাই? রণদীপের এই দাবিকে এক কথায় নস্যাৎ করে দিয়েছেন চন্দ্র বসু। তিনি সাফ জানিয়েছেন, ” নেতাজির জীবনে প্রেরণা দিয়েছিলেন দুই মহান ব্যক্তিত্ব। একজন, স্বামী বিবেকানন্দ। অন্যজন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস।’ তিনি জানান, এই দুজন ছাড়া অন্য কেউ নেতাজিকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন বলে তিনি অন্তত মনে করেন না।
আরও শুনুন: এ কোন ‘অমৃতকাল’! সাক্ষী-ভিনেশরা মাটিতে পড়ে, মাটিতে মিশল দেশের সম্মানও
আর সাভারকর! চন্দ্র বসুর পালটা প্রশ্ন, সাভারকর নেতাজির অনুপ্রেরণা হতে যাবেন কেন? বরং, আদর্শগত ভাবে নেতাজি তো সাভারকরের বিরোধীই ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে সাভারকরের ভূমিকা স্বীকার করে নিয়েই চন্দ্র বসু জানিয়েছেন, নেতাজি আর সাভারকরের আদর্শ ছিল একেবারে বিপরীত। ইতিহাস এই মতকেই স্বীকৃতি দেয়। চন্দ্র বসু জানান, নেতাজি পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। হিন্দু মহাসভা কিংবা জিন্নার আন্দোলন থেকে কিছু প্রত্যাশা করা যায় বলে তিনি মনে করতেন না। সাম্প্রদায়িক মতবাদের ঘোর বিরোধী ছিলেন নেতাজি। আর তা-ই কোনও ভাবেই সাভারকরের আদর্শ তাঁকে প্রেরণা দিতে পারে না। কেননা সাভারকর তাঁর রাজনৈতিক জীবনে অনেকটাই নিজেকে পরিবর্তিত করে ফেলেছিলেন।
কিন্তু কেন যে ইতিহাসের তোয়াক্কা না করেই অভিনেতা এমন মন্তব্য করেছিলেন, তা জানা নেই। এত বিতর্কের মাঝে তিনি কোনও উত্তরও দেননি। তবে কি পুরোটাই ছবির প্রচারের কৌশল? বিতর্ক বাড়লে ছবির প্রচারও বাড়বে, এই হিসাব কষেই এমন মন্তব্য? বিতর্কের আবহে এ প্রশ্নও উড়িয়ে দিচ্ছে না কেউ কেউ।