মহা সমারোহে উদ্বোধন হয়েছে নয়া সংসদ ভবনের। হয়েছে পুজোপাঠ, যজ্ঞ ও হিন্দুমতে নানা ক্রিয়াকর্ম। একই সঙ্গে হয়েছে সেঙ্গল প্রতিষ্ঠা। কিন্তু তা নিয়েই এবার উঠল প্রশ্ন। ন্যায়দণ্ডের প্রতিষ্ঠাই যদি হবে, তাহলে সেখানে মুসলিম ধর্মগুরু বা কোনও মৌলানা নেই কেন? কে তুললেন এই প্রশ্ন, আসুন শুনে নিই।
নতুন ভারতের সূর্যোদয়। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের সূত্র ধরে নয়া সংসদ ভবন উদ্বোধনের মুহূর্তটিকে এভাবেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। নয়া সংসদ ভবনে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেঙ্গল অর্থাৎ ন্যায়দণ্ডের। স্পিকারের আসনের কাছেই রাখা হয়েছে ঐতিহাসিক এই সেঙ্গল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সেঙ্গল প্রতিষ্ঠায় অংশ নিয়েছেন, সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করেছেন, পাশে ছিলেন হিন্দু ধর্মগুরুরা। ঠিক এই দৃশ্যটিই তুলে দিয়েছে এক মোক্ষম প্রশ্ন। সংসদ ভবনে ন্যায়দণ্ডের প্রতিষ্ঠাই যদি হচ্ছে, সেখানে তাহলে কেন শুধু হিন্দু ধর্মগুরুরা! কেন নেই অন্য ধর্মের বিশেষত ইসলাম ধর্মের কোনও ধর্মগুরু? মোক্ষম এই প্রশ্নটি তুলেছেন সমাজবাদী পার্টির নেতা স্বামী প্রসাদ মৌর্য।
আরও শুনুন: এ কোন ‘অমৃতকাল’! সাক্ষী-ভিনেশরা মাটিতে পড়ে, মাটিতে মিশল দেশের সম্মানও
রবিবার সংসদ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের অধিকাংশ আচার-অনুষ্ঠানই পালিত হয়েছে হিন্দু মতে। বৈদিক ধারায় আস্থা রেখেই ক্রিয়াকর্মের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। ধর্মগুরুরা প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগে খুশি। তাঁরা জানিয়েছিলেন, এক্ষেত্রে রাজনীতিকে টেনে না আনাই বাঞ্ছনীয়। যদিও রাজনৈতিক মহলে কিছু প্রশ্ন তো উঠেইছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করে বলেছিলেন, সংসদ ভবনের প্রতিষ্ঠাকে মোদি রাজ্যাভিষেক ভেবে ফেলেছেন। অন্যান্য বিরোধী দলের পক্ষ থেকেও সমালোচনা ধেয়ে এসেছে। তবে মোক্ষম প্রশ্নটি তুলেছেন সমাজবাদী পার্টির নেতা স্বামী প্রসাদ মৌর্য। তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রী যদি দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের প্রতি আস্থাই রাখেন, তাহলে সেঙ্গল প্রতিষ্ঠায় কেন ডাকা হল শুধু গোঁড়া হিন্দু ধর্মগুরুদের? তাঁর দাবি, সেঙ্গল বা ন্যায়দণ্ড প্রতিষ্ঠায় তো বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন এমনকী ইসলাম ধর্মগুরুদেরও আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল।
আরও শুনুন: সংসদ ভবন উদ্বোধনে যজ্ঞ থেকে সর্বধর্ম প্রার্থনা, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে খুশি ধর্মগুরুরা
হিন্দুমতে আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সংসদ ভবন উদ্বোধনে সর্বধর্ম প্রার্থনারও আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে অংশ নিয়েছিলেন বিভিন্ন ধর্মমতের প্রতিনিধিরা। কিন্তু এই একটি উদাহরণ বাদ দিলে, মূলত অনুষ্ঠানটি ছিল হিন্দু প্রথা মেনেই। তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সমাজবাদী পার্টির এই নেতা। এককালে তিনি যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রিসভারও সদস্য ছিলেন। পরে যোগ দেন অখিলেশ যাদবের দলে। তাঁর দাবি, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজেপি সরকার স্পষ্টতই দেশের উদার গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ বাতাবরণটির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। কেবল দক্ষিণের ব্রাহ্মণদের ডেকে ব্রাহ্মণ্যবাদেরই প্রতিষ্ঠা করেছেন মোদি, বলেই তাঁর অভিযোগ। তবে অভিযোগটি যে তাঁর একার, তা নয়। দেশ যে ক্রমশ গণতন্ত্র থেকে স্বৈরতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলেছে, ঠারেঠোরে এই অভিযোগে একযোগে প্রায় সব বিরোধী দলেরই।