সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে রাজকন্যার কাছে পৌঁছে যেত রাজপুত্র। রূপকথার সেই গল্পকেই সত্যি করে দেন এই ব্যক্তি। চার মাস ধরে সাইকেল চালিয়ে তিনি পৌঁছান স্ত্রীর কাছে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তাঁদের প্রেমের গল্প।
একের বলে প্রেমের টান! প্রেমের জন্য যে কোনও বাধাই নাকি অনায়াসে দূর করে দিতে পারে মানুষ। আর সে কথাই প্রমাণ করে দিয়েছেন এই ব্যক্তি। রূপকথায় যেমন সাত সমুদ্র পেরিয়ে দূর দেশের রাজকন্যার কাছে পৌঁছে যেত রাজকুমার, তেমনই ভিনদেশে থাকা স্ত্রীর কাছে পৌঁছে গিয়েছেন তিনিও। অবশ্য রাজপুত্রের মতো ঘোড়া নেই, কিন্তু তাতে কী! নিজের সাইকেলই ভরসা। চার-চারটি মাস ধরে সাইকেল চালিয়েই দিল্লি থেকে সুইডেনে পৌঁছে যান এই ব্যক্তি।
শুনে অবাক লাগছে? তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: পৃথিবী থেকে ১,০০,০০০ ফিট উচ্চতায় মালাবদল! মহাকাশে বিয়ে সারতে খরচ কত জানেন?
প্রদ্যুম্নকুমার মহানন্দিয়া নামে এই ব্যক্তি দিল্লির বাসিন্দা। কিন্তু বিয়ে করেছিলেন যাকে, তিনি আবার সুইডেনের নাগরিক। আসলে প্রদ্যুম্ন একজন শিল্পী। আর তার কাজে মুগ্ধ হয়েই নোবেলের দেশ থেকে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন সুইডিশ তরুণী শার্লট ভন স্কেডভিন। ১৯ বছরের শার্লট তখনও ছাত্রী। এত দূরদেশে সফর করা তাঁর পক্ষেও সহজ ছিল না। তবে শেষমেশ ভ্যানে চেপে ২২ দিনের যাত্রা শেষে ভারতে পৌঁছন তিনি। দিল্লিতে এসে দেখাও হয় প্রদ্যুম্নের সঙ্গে। আর শিল্পের পাশাপাশি শিল্পীরও প্রেমে পড়ে যান শার্লট।
হৃদয়ের ইশারা ছিল দু-তরফেই। কাজেই সাত পাকে বাঁধা পড়তে সময় লাগেনি। কিন্তু তারপর কী হবে? দুজনের দেশ আলাদা, নিজের নিজের দেশে নিজের কাজে যুক্তও রয়েছেন তাঁরা, এক কথায় তো সব ছেড়ে চলে যাওয়া যায় না। ফলে শার্লট ফের ফিরে গিয়েছিলেন সুইডেনে। আর প্রদ্যুম্ন থেকে গিয়েছিলেন ভারতেই। তবে শার্লটকে কথা দিয়েছিলেন, সময় হলেই তাঁর কাছে পৌঁছে যাবেন তিনি।
আরও শুনুন: এক সন্তান গর্ভে, ২৮ দিনের মাথায় ফের গর্ভবতী ৩০ বছরের মহিলা
সেই সময় আসতে আসতে পেরিয়ে যায় একটা গোটা বছর। চলতি কোর্সের পাট চুকিয়ে প্রদ্যুম্ন ঠিক করেন সুইডেনে যাবেন। সেখানে যে অপেক্ষায় রয়েছেন শার্লট। কিন্তু যাবেন কী করে? পেশায় শিল্পী, টাকাপয়সা বিশেষ কিছুই নেই। কিন্তু প্রেম আর কবে হিসেব মেনেছে? নিজের যা কিছু ছিল, সব বিক্রি করে সামান্য টাকার জোগাড় হয়। এদিকে একটি সাইকেল কিনে ফেলেন প্রদ্যুম্ন। আর তাতে চড়েই পাড়ি দেন দূর দেশে।
প্রদ্যুম্ন ও শার্লটের দেখা হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। আর ১৯৭৭ সালে ভারত থেকে সুইডেনের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। রোজ প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল চালাতেন তিনি, বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন প্রদ্যুম্ন। কোনও দিন খাবার জুটেছে, কোনও দিন জোটেনি। কখনও খারাপ হয়ে গিয়েছে বাহনটিও। তবে অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছন তিনি। ২২ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক, ইস্তানবুল এবং ভিয়েনা পেরিয়ে সুইডেনে গিয়ে পৌঁছান ২৮ মে। তারপর অবশ্য আর কোনও দূরত্বকে নিজেদের মাঝে আসতে দেননি তাঁরা। দুই সন্তানকে নিয়ে সুইডেনেই জীবন সাজিয়েছেন শার্লট ও প্রদ্যুম্ন।