ধর্ম শব্দের আসল অর্থ ধারণ করা। আর সেই অর্থই বুঝিয়ে দিয়েছেন লালবাগের রাজা। হিন্দু-মুসলমান দুই ধর্মের মানুষকে তিনি অনায়াসেই এক সুতোয় বেঁধে দিতে পারেন। হ্যাঁ, ধর্মের ভিত্তিতে যেখানে মাঝে মাঝেই উসকে উঠে অশান্তি, সেখানে ধর্মের ভত্তিতেই সম্প্রীতির গল্প শোনায় এই শহর। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ধর্মের রেশ টেনে বারেবারেই অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। সাম্প্রতিক কালে সে ঘটনা আরও বেড়েছে বই কমেনি। এমনকি দিন কয়েক আগেই নাসিকের ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দিরে চাদর চড়াতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন একদল মুসলিম যুবক। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম এই মন্দিরে হিন্দু ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রবেশ নিষেধ। সেখানে মুসলিম যুবকদের প্রবেশের চেষ্টাকে মোটেই ভাল চোখে দেখেননি ভক্তরা। এমনকি এই নিয়ে আইনি পদক্ষেপও করেছেন তাঁরা। কিন্তু এহেন ঘটনারই ঠিক উলটো দিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে লালবাগ। হ্যাঁ, নাসিকের মতো সে জায়গাটি মহারাষ্ট্রেরই অন্তর্গত। মুম্বাই শহরের লালবাগ এলাকায় গণপতির আরাধনায় একযোগে অংশ নেন হিন্দু মুসলিম দুই ধর্মের মানুষ। সাম্প্রদায়িকতার বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে সম্প্রীতির এক মানবিক আখ্যান রচনা করেন তাঁরা।
আরও শুনুন: চোর বাবাজির বোধোদয়! মন্দিরে চুরির ৯ বছর পরে কৃষ্ণের গয়না ফেরত, সঙ্গে জরিমানাও
এই বিশেষ গণপতি মূর্তিকে লালবাগের রাজা বলেই অভিহিত করেন ভক্তরা। এমনিতেই মুম্বাই শহর জুড়ে গণেশের অপ্রতিহত রাজত্ব। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে একাধিক বলি তারকাও তাঁর আরাধনা করেন। তাই গণেশের পুজোয় হিন্দু মুসলিম দুই ধর্মের মানুষের অংশ নেওয়া এখানে যে খুব নতুন ব্যাপার তা কিন্তু নয়। তবে লালবাগের পুজো তার মধ্যেও একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে। কারণ এই পুজোয় বরাবরই জনতার ঢল নামে। ১৫ ফুট উঁচু এই মূর্তির বিসর্জনের দিন ৭ কিলোমিটার পথ দূরের ঘাটে পায়ে হেঁটে যান লক্ষ লক্ষ মানুষ। ২০ ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে এই পদযাত্রা। এই পথে একাধিক মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাও রয়েছে। যাতে কোনও সাম্প্রদায়িক অশান্তি না বাধে, তাই বরাবরই গোটা পথ জুড়ে পাহারায় মোতায়েন থাকে প্রচুর পুলিশ। কিন্তু কোনও দিনই এই বিসর্জনে কোনোরকম অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেনি। এমনকি ১৯৪৬ সালের সেই ভয়াবহ দাঙ্গার সময়ে ভাসানের মিছিলকে অন্য পথ দিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সরকারি তরফেই। কিন্তু ভক্তরা তা মানতে রাজি হননি। অবশেষে নির্ধারিত দিনের দশ দিন পরে বিসর্জন হয় গণপতির। কিন্তু সেই অন্ধকার দিনগুলিতে যখন দেশের একাধিক জায়গায় দুই ধর্মের মধ্যে হানাহানি চলেছে, তখনও এই বিসর্জন মিছিলে কারও গায়েই আঁচটুকু লাগেনি। আর সেই পরম্পরাই এখনও বয়ে নিয়ে চলেছেন এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। দেশজোড়া অশান্তির প্রেক্ষিতে একটুকরো শান্তির মরূদ্যান জিইয়ে রেখেছেন তাঁরা।