হিন্দু-মুসলিম বিয়ে মানেই ‘লাভ জিহাদ’, এমনটাই ধারণা হিন্দুত্ববাদীদের। অথচ এক হিন্দু বিজেপি নেতার পরিবারেই হতে চলেছে ভিনধর্মের বিয়ে। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে সেই বিয়ের কার্ড। যেখানে পাত্রী হিন্দু, আর পাত্র এক মুসলিম যুবক। ইতিমধ্যেই সেই কার্ড ঘিরে রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়েছে নেটদুনিয়ায়। এ প্রসঙ্গে কী বলছেন ‘ভক্ত’-রা? আসুন শুনে নিই।
লাভ জিহাদের অভিযোগে সাম্প্রতিক কালে বারেবারেই সুর চড়িয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। একই সুর শোনা গিয়েছে বিজেপি শিবিরের একাধিক নেতামন্ত্রীর গলাতেও। কিন্তু এবার প্রকাশ্যে এল উলটো ঘটনা। নিজের মেয়ের সঙ্গেই এক মুসলিম যুবকের বিয়ে দিচ্ছেন এক বিজেপি নেতা। আর সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই একেও ‘লাভ জিহাদ’ বলে দাগিয়ে দিয়েছেন ভক্তরা। শুধু তাই নয়, ওই নেতার বিরুদ্ধে তোপ দাগতেও ছাড়েননি তাঁরা। সব মিলিয়ে, আরও একবার বিতর্ক উসকে উঠেছে ‘লাভ জিহাদ’ ইস্যুতে।
আরও শুনুন: বিয়ে ভেঙেছে পাত্রী, চুল কাটিয়ে গ্রামে ঘুরিয়ে তরুণীকে শাস্তি পঞ্চায়েতের
ঘটনাটি উত্তরাখণ্ডের। সেখানকার পাউরি অঞ্চলের বিজেপি নেতা যশপাল বেনাম-কে ঘিরেই শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। অপরাধ বলতে একটাই, তিনি মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছেন এক মুসলিম যুবকের সঙ্গে। হিন্দু হয়েও কেউ তিনি এমন কাজ করলেন, সে প্রশ্ন তুলেই তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন হিন্দুত্ববাদীরা। আসলে হিন্দু এবং মুসলিমের মধ্যে বিয়ের ঘটনা ঘটলে প্রায়শই তাকে ‘লাভ জিহাদ’ বলে দাগিয়ে দিয়ে থাকেন উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। তাঁদের দাবি, কোনও প্রেম ভালবাসার টানে নয়, এই বিয়ে নিছকই এক ধর্মীয় চাল। আসলে হিন্দু মেয়েদের ভুলিয়েভালিয়ে বিয়ে করতে চায় মুসলিম ধর্মাবলম্বী পুরুষেরা। তারপর জোর করে মেয়েটির ধর্মান্তর করে এবং তার গর্ভে একাধিক সন্তানের জন্ম দিয়ে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ানোই তাদের লক্ষ্য, এমনটাই দাবি হিন্দুত্ববাদীদের। এমনকি এর পালটা হিন্দুদের খোলাখুলি অস্ত্র ধরার ডাক দিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা। তাঁর দাবি ছিল, হিন্দু মেয়েদের বাঁচানোর জন্যই অস্ত্র হাতে নেওয়া জরুরি। ভিনধর্মে বিয়ে আটকানোর জন্য কড়া বিধিনিষেধও চাপানো হয়েছে একাধিক বিজেপিশাসিত অঞ্চলে। সেখানে এক বিজেপি নেতাই নাকি এই কাজকে সমর্থন করছেন? এমনটা একেবারেই মেনে নিতে পারেননি ‘ভক্ত’-রা। তাঁদের দাবি এইভাবে লাভ জিহাদ-কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন ওই বিজেপি নেতা। অনেকে তাঁকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবেও কটাক্ষ করেছেন। সেইসঙ্গে অবিলম্বে ওই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করার দাবিও তুলেছে কিছু হিন্দু সংগঠন। তাঁদের সাফ যুক্তি, বিজেপি এমন একটি দল, যার দায়িত্ব হিন্দুদের রক্ষা করা। সেক্ষেত্রে একজন বিজেপি নেতার এমন কাজ একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়। যদিও দলের তরফে এ বিষয়ে এখনও কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি।
আরও শুনুন: দেবভূমিতে অবৈধ মাজারের রমরমা, বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন
জানা গিয়েছে, ওই বিজেপি নেতার মেয়ে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। সেখানে থাকাকালীন এক মুসলিম সহপাঠীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়। সেই প্রেমিকের সঙ্গেই এবার গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছেন তিনি। বাবা হিসেবে ওই নেতাও মেয়েকে সমর্থন জুগিয়েছেন। আর সেখানেই যত আপত্তি ভক্ত-দের। অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেই দাবিতেই নেটদুনিয়ায় রীতিমতো শোরগোল শুরু করেছেন তাঁরা।