ডাক্তারের পোশাক পরেই হাসপাতালে ঘুরে বেড়ান। কেউ জিজ্ঞাসা করলে পরিচয় দেন জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে। মোটা টাকা ফিজ নিয়ে রোগ সারানোর প্রতিশ্রুতিও দেন। অথচ এই মহিলা চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনাই করেননি! তাহলে? কীসের জোরে নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেন তিনি? আসুন শুনে নিই।
নিজেকে জুনিয়র ডাক্তার হিসেবেই দাবি করেন এই মহিলা। হাসপাতালে নিজের নাম লেখা সাদা ওভারকোট পরেই ঘুরে বেড়ান। যে কেউ প্রথমবার দেখলে তাঁকে চিকিৎসক হিসবেই ভেবে বসবেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোটা টাকা দাবি করেন তিনি। ভুল বুঝে সেই টাকা দিয়েও দেন অনেকেই। কিন্তু তারপর আর হদিশ মেলে না মহিলার। একজন নয়, এমন কারচুপির শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তেমনই একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। তারপরই সামনে আসে আসল তথ্য।
আরও শুনুন: বিয়ে ভেঙেছে পাত্রী, চুল কাটিয়ে গ্রামে ঘুরিয়ে তরুণীকে শাস্তি পঞ্চায়েতের
ঘটনাটি দিল্লি এইমস-কে কেন্দ্র করে। প্রতিদিন সেখানে হাজারো মানুষের ভিড় থাকে। সকলেই যে একবারে চিকিৎসকের খোঁজ পেয়ে যান, তা নয়। আর সেই অসহায়তাকে কাজে লাগিয়েই এমন ‘লোক ঠকানো’-র ব্যবসা শুরু করেন উত্তরপ্রদেশের শুভি ত্রিবেদী। নিজের চিকিৎসা করাতেই একবার এই হাসাপাতালে এসেছিলেন তিনি। সেখানে লক্ষ্য করেন, যারাই সাদা পোশাক পরে আছে তাঁদের চোখ বন্ধ করে চিকিৎসক হিসেবে ভেবে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। এর থেকেই তাঁর মাথায় আসে ওই অদ্ভুত ফন্দি। ঠিক করেন তিনিও এমন সাদা পোশাক পরে চিকিৎসক সাজবেন। এদিকে তাঁর পড়াশোনার দূর দূরান্তে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যোগ নেই। কিন্তু তাতে কি, সাদা পোশাক পরে নিলেই তো কাজ শেষ। যেমন ভাবা তেমন কাজ, বানিয়ে ফেললেন সাদা পোশাক। তার উপর সেলাই করে নিজের নাম আর হাসপাতালের লোগো বসালেন। এমন সাজে প্রথমবার দেখলে, যে কেউ তাঁকে চিকিৎসক হিসেবেই ভেবে ফেলবেন। বাস্তবে হয়ও তাই। নিজের মেয়ের চিকিৎসা করাতে আসা এক অসহায় ব্যক্তি প্রথমে তাঁর ফাঁদে পা দেন। সাদা পোশাকে শুভি-কে দেখে যথারীতি চিকিৎসক হিসেবে ভুল করেন তিনি। এই সুযোগ সম্পূর্নভাবে কাজে লাগান শুভি। প্রতিশ্রুতি দেন ১০ দিনের মধ্যে ওই ব্যক্তির মেয়ের চিকিৎসা শুরু হবে। তবে তার জন্য প্রায় ১ লক্ষ টাকা দিতে হবে তাঁকে। অসহায় ব্যক্তি সেকথা বিশ্বাস করে সেই টাকা দিয়েও দেন। কিন্তু ১০ দিন পর আবার হাসপাতালে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন ঠিক কতটা ঠকেছেন। কারণ হাজার খুঁজেও ওই মহিলাকে সেখানে তিনি পাননি। এমনকি ফোন করেও তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তড়িঘড়ি পুলিশের দ্বারস্থ হন ওই ব্যক্তি। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই শুভি ত্রিবেদী নামে ওই মহিলাকে আটক করে পুলিশ। সাধারণ পোশাকে হাসাপাতালে গিয়ে শুভি-কে হাতেনাতে ধরেন পুলিশ আধিকারিকরা।
আরও শুনুন: হরিয়ানায় আজব নিয়ম! কর্মক্ষেত্রেও মিলবে বিয়ার, তবে মানতে হবে শর্ত
এরপরই পুলিশের সন্দেহ হয়, আরও কাউকে শুভি ঠকিয়েছেন কিনা। দেখা যায়, সত্যিই আরও অনেককেই এইভাবে ঠকিয়েছেন তিনি। তবে সেক্ষেত্রে তাঁর প্রতারণার জাল ছড়ানো ছিল অনলাইন মাধ্যমে। ঠিক কতজনকে এইভাবে ঠকিয়েছে ওই মহিলা আপাতত সেই খোঁজ চলছে। তাঁর নামে প্রতারণার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, শুভির এই প্রতারণার কথা তাঁর পরিবারের কাছেও অজানা ছিল। বাড়িতে জানিয়েছিলেন, তিনি এইমস-এ চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু আসল সত্যি জানার পর সকলেই রীতিমতো অবাক। তবে এই ঘটনা হাসপাতালের কাছে শিক্ষণীয় হওয়া উচিত। কর্তৃপক্ষ যদি এখনই সতর্ক না হন, তাহলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে বলেই মনে করছে অয়াকিবহাল মহল।