দীর্ঘ ১০ বছরের লড়াই। অবশেষে বিচার পেলেন নির্যাতিতা। ধর্ষকদের শাস্তি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত স্বস্তির হাসি ফুটল তাঁর মুখে। কিন্তু এই দশ বছরেও কম অত্যাচার সহ্য করতে হয়নি তাঁকে। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
সন্তানের সামনেই ধর্ষিতা হয়েছিলেন। অথচ এমন গুরুতর অভিযোগ প্রথমে শুনতেই চায়নি পুলিশ। সেই থেকে লড়াই শুরু নির্যাতিতার। এর মাঝে বাধার সুম্মুখীন হয়েছেন বহুবার। মৃত্যুর হুমকিও শুনতে হয়েছে। তবু লড়াই থামাননি। অবশেষে স্বস্তির হাসি হাসলেন তিনি। দীর্ঘ ১০ বছর পর বিচার পেলেন মুজফফরনগর ধর্ষণকাণ্ডের নির্যাতিতা।
আরও শুনুন: ধর্ষণের দায়ে জেলবন্দি ছেলে, নির্যাতিতার সন্তানের কাস্টডি চাইলেন ধর্ষকের মা-বাবা
ঘটনাটি ২০১৩ সালের। সাম্প্রদায়িক হিংসায় তখন উত্তাল মুজফফরনগর। অশান্তি ছড়িয়েছে আশেপাশের এলাকাতেও। হিংসার জেরে প্রাণ হারিয়েছেন ৬০ জন নিরপরাধ মানুষ। ঘরছাড়া হতে হয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে। মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনাও কম ঘটেনি। এমনকি নিজের সন্তানের সামনেই ধর্ষণ করা হয়েছিল এক মহিলাকে। যার বিচার পেতেই সময় লাগলো দীর্ঘ দশ বছর। সম্প্রতি আদালত এই ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে ২০ বছরের কারাবাসের সাজা শুনিয়েছে। আরও একজন এই কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল। জেলে থাকাকালিনই যার মৃত্যু হয়। তবে নির্যাতিতাকে, বিচার পাওয়ার জন্য এই দশ বছর স্রেফ অপেক্ষা করতে হয়েছে তাই নয়, রীতিমতো আতঙ্কের সঙ্গেই এতগুলো বছর কাটিয়েছেন তিনি। কারণ এই কদিনে বহুবার নিজের লড়াই থামানোর জন্য বাধ্য করা হয়েছে তাঁকে।
ঘটনার সময় তাঁর বয়স ছিল ২৬। তাঁর এলাকা তখন জ্বলছে। অশান্তির জেরে সন্তান কোলে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে অসহায় অবস্থায় জমির মধ্যে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তিনজন পাকড়াও করে তাঁকে। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে মহিলাকে শারীরিক ভাবে হেনস্থা করতে শুরু করে তারা। শেষপর্যন্ত দুধের শিশুটির সামনেই মহিলাকে ধর্ষণ করে ওই তিনজন। এখানেই শেষ নয়, নির্যাতিতাকে ঘটনার কথা কাউকে না বলার হুমকিও শুনিয়ে যায় তারা। জ্বালিয়ে দেয় তাঁর বাড়িও। বেশ কিছুদিন সেই ভয়ে মুখ খোলেননি মহিলা। অবশেষে তিনি যখন জানতে পারেন, তাঁর মতো আরও অনেকেই এমন অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, সিদ্ধান্ত নেন অভিযোগ জানানোর। প্রথমে নিজের স্বামীকে সবটা খুলে বলেন। তারপর পুলিশের দ্বারস্থ হন। অথচ এমন গুরুতর অভিযোগ কার্যত শুনতেই চায়নি পুলিশ। এমনকি ঘটনার কোনও এফআইআরও নেওয়া হয়নি। তবু লড়াই থামাননি তিনি। কিছুদিন পর দিল্লির এক উকিল তাঁকে সাহায্যের আশ্বাস দেন। তাঁর পরামর্শেই বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন নির্যাতিতা। এরপর আদালতের নির্দেশে এফআইআর নিতে বাধ্য হয় পুলিশও। ততদিনে ঘটনার প্রায় ৬-৭ মাস কেটে গিয়েছে। ২০১৪ সালের শেষদিকে দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এরাই সেদিন ওই মহিলার উপর অত্যাচার করেছিল। কিন্তু সে কথা আদালতে প্রমাণ করতে সময় লাগল দীর্ঘ ১০ বছর।
আরও শুনুন: নাবালিকাকে ধর্ষণের শাস্তি মাত্র ৫ বার কান ধরে ওঠবস, চাঞ্চল্য বিহারের ঘটনায়
এর মাঝে বহুবার বাধার মুখে পড়তে হয়ে নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারকে। এমনকি তাঁর সন্তানের মৃত্যুর হুমকিও শুনতে হয়েছে। আদালতেও বিষয়টি নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। যেহেতু সাম্প্রদায়িক হিংসার সময় এই ঘটনা ঘটেছিল, তাই বিভিন্ন ভাবে বিচার প্রক্রিয়া জটিল হয়ে ওঠে। বার বার বদল হতে থাকে বিচারকদের বেঞ্চও। তবু লড়াই থামাননি ওই মহিলা। অবশেষে জয়ের হাসি হাসলেন তিনি। দীর্ঘ দিনের লড়াইয়ের পরে বিচার পেলেন তিনি। বর্তমানে পরিবার নিয়ে অন্যত্র থাকেন তিনি। মুজফফরনগরের ভয়ঙ্কর স্মৃতি মনে রাখতে চান না আর। তবু ধর্ষকদের শাস্তি হওয়ায় যারপরনায় খুশি হয়েছেন ওই মহিলা। তাঁর মতো আরও হাজার হাজার নির্যাতিতা যেন অন্যায় মুখ বুজে মেনে না নেয়, সে বার্তাই সকলকে দিতে চান তিনি। যতই বাধা আসুক, দাঁতে দাঁত চেপে সত্যের পথে থাকলে, জয় একদিন হবেই। নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে সমাজকে এটাই শিখিয়ে গেলেন এই মহিলা।