মুসলিম পরিবারেই বড় হয়েছে তিন হিন্দু সন্তান। তাঁদের কখনও ধর্মান্তকরণের জন্য জোর করা হয়নি। বদলানো হয়নি হিন্দু নামও। দেশজুড়ে চলতে থাকা সাম্প্রদায়িক হিংসার মাঝে যেন অদ্ভুত সম্প্রীতির বার্তা দেয় এই ঘটনা। কোথায় রয়েছে এমন পরিবার? আসুন শুনে নিই।
আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নতুন নয়। কখনও মন্দির-মসজিদ দ্বৈরথ, আবার কখনও লাভ জিহাদের মতো ঘটনা উঠে আসে খবরের শিরোনামে। একাধিক ইস্যুতে প্রায়শই দেশ জুড়ে হিন্দু-মুসলিম বিবাদ লেগে আছে, এমনটা শুনতেই যেন আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু এটাই দেশের একমাত্র ছবি নয়। সংখ্যায় স্বল্প হলেও, এমন ঘটনাও আছে যা এর ব্যতিক্রম হিসাবেই উঠে আসে।
আরও শুনুন: অবাক কাণ্ড! তেতো নয় একফোঁটা, দিব্যি মিষ্টি আশ্চর্য এক নিমগাছের পাতার স্বাদ
সম্প্রতি দ্য কেরালা স্টোরি ছবিটি নিয়ে বিস্তর বিতর্ক। অভিযোগ, ছবিতে জাতিহিংসা বা সাম্প্রদায়িক ঘৃণা কথা তুলে ধরা হয়েছে। দুই রাজ্যে এই ছবি নিষিদ্ধও হয়েছে। আর সেই কেরালাতেই এক মুসলিম মহিলা আমাদের শোনাচ্ছেন অন্য স্টোরি। সে গল্প বিবাদের, ঘৃণার, হিংসার নয়; ভালবাসার।
কেরলের মল্লপুরম গ্রামের বাসিন্দা থেনাদান সুবাইদা। বর্ধিষ্ণু মুসলিম পরিবারের কর্ত্রী সুবাইদা তিন সন্তানের জন্মদাত্রী। তবে এ ছাড়াও তাঁর রয়েছে আরও তিন সন্তান। যাঁদের সঙ্গে তাঁর জাতিগত পরিচয়য় মেলে না। তিনজনই হিন্দু পরিবারের সন্তান। আর সুবাইদা একজন মুসলিম। অথচ এদের একেবারে ছোট থেকেই মানুষ করেছেন তিনি।
কীভাবে তিন হিন্দু সন্তানের মা হয়ে উঠলেন সুবাইদা? তাহলে খুলেই বলা যাক।
বেশ কয়েক বছর আগের কথা। সেইসময় সুবাইদাকে ঘরের কাজে সাহায্য করতেন এক হিন্দু মহিলা। যার সঙ্গে তাঁর রীতিমতো সখ্য ছিল তাঁর। সুবাইদার মতো সেই মহিলাও তিন সন্তানের মা। কিন্ত হঠাৎই মারণরোগে সেই মহিলার মৃত্যু হয়। মা হারানো ওই ফুটফুটে তিন শিশুকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি সুবাইদা। সঙ্গে সঙ্গে ওই তিন শিশুকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। নিজের সন্তানদের সঙ্গেই ওই তিনজনকে লালন-পালন করতে শুরু করেন। কোনওদিন তাদের আলাদা নজরে দেখেননি। এমনকি ওই তিন শিশুর ধর্ম পরিবর্তনের চেষ্টাও তিনি করেননি। তাঁর কাজে সবসময়ই পাশে পেয়েছেন স্বামী আব্দুলকে। সম্প্রতি সেই সুবাইদা-র মৃত্যু হয়েছে। তারপরই নিজের মায়ের সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু কথা লিখেছেন সেই হিন্দু সন্তানদের একজন।
আরও শুনুন: বিয়ে অতীত, ছবি রেখে কী হবে! ফটোগ্রাফারের থেকে টাকা ফেরত চাইলেন মহিলা
হ্যাঁ, ওই তিন পালিত সন্তানের মধ্যে তিনিই সবথেকে বড়। কাজেই কীভাবে তাঁদের মায়ের অভাব পূরণ করেছেন সুবাইদা, তা সবথেকে ভালো জানেন তিনিই। মায়ের স্মৃতিচারণায় বিভিন্ন ঘটনার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। যার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, তাঁদের ধর্মান্তকরণ না করার বিষয়টি। এমনকি ছোটবেলায় তাঁর মায়ের দেওয়া নামটাও বদলানো হয়নি। একসময় সুবাইদাকে এই নিয়ে প্রশ্নও করেছিলেন তাঁর হিন্দু সন্তানরা। উত্তরে সুবাইদা বলেছিলেন, ধর্ম কখনও মানুষের একমাত্র পরিচয় হতে পারে না। তাই তাঁকে কখনই নিজের পালিতা মা হিসেবে ভাবতে পারেন না তাঁর সন্তানরা। সম্প্রতি দেশজুড়ে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ সিনেমায় দেখানো গল্প রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে। ছবির বিষয় হিসাবে উঠে আসা ধর্মান্তকরণ ইস্যুই আগুন জ্বালিয়েছে বিতর্কের । সেই আবহে একেবারে অন্যরকম নজির গড়ল কেরলের এই সত্যি ‘স্টোরি’। ধর্ম যে সত্যিই মানুষের একমাত্র পরিচয় হতে পারে না, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয় সুবাইদা আর তাঁর হিন্দু সন্তানদের এই গল্প।