টানা ৫ দিন জঙ্গলের ভিতর ঘুরছেন। খাবার বলতে স্রেফ একটা ওয়াইনের বোতল আর এক বাক্স চকলেট। অথচ বাইরে বেরনোর কোনও উপায় নেই। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। জঙ্গলের গভীরে হারিয়ে গিয়ে এমনই ভয়াভহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে হল এক মহিলাকে। শেষপর্যন্ত কী হল তাঁর? আসুন শুনে তিনি।
মানুষের চিহ্নমাত্র নেই। চারিদিকে শুধুই বড় বড় গাছ। এরকম গভীর জঙ্গলের মাঝে একলা ঘুরছেন এক মহিলা। নিশ্চয়ই ভাবছেন, কোনও হলিউড সিনেমার কথা বলছি। কিন্তু একেবারেই তা নয়। বাস্তবেই ধরা পড়েছে এমন দৃশ্য। জঙ্গলের ভিতর পথ হারিয়ে এমনই অবস্থা হয়েছিল ওই মহিলার।
আরও শুনুন: দেশ ছেড়ে পাকিস্তানের বাসিন্দা অনেকে! ‘এনিমি প্রপার্টি’ বিক্রি করে ৩৪০০ কোটি আয় সরকারের
ঘটনাটি অস্ট্রেলিয়ার। কিছুদিন আগে সেখানকার এক পাহাড়ি জঙ্গলে ঘুরতে গিয়েছিলেন এই মহিলা। একাই ছিলেন। সঙ্গী বলতে একটা ওয়াইনের বোতল আর একবাক্স চকোলেট। লোকালয়ের থেকে বেশ খানিকটা দূরে অবস্থিত এই জঙ্গলে আগে কখনও তিনি যাননি। ভেবেছিলেন, কিছুদূর গিয়েই আবার ফেরত চলে আসবেন। পায়ে হেঁটে নয়। গাড়ি নিয়েই জঙ্গলে ঢুকেছিলেন। তাই বন্য জন্তুদের নিয়েই বিশেষ চিন্তা ছিল না। কিন্তু সমস্যা হল জঙ্গলে ঢোকার পর। কিছুদূর গিয়েই তিনি বুঝতে পারেন এই জঙ্গল স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশিই গভীর। সূর্যের আলো প্রবেশ করে না বললেই চলে। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ঠিক করেন ফেরত চলে আসবেন। কিন্তু গাড়ি ঘুরিয়ে ফেরার সময় বুঝতে পারেন সেই কাজ মোটেও সহজ হবে না। কারণ অন্ধকারের মধ্যে ঠিক কোন পথে তিনি জঙ্গলে ঢুকেছিলেন, তা একেবারেই গুলিয়ে ফেলেন। দীর্ঘক্ষণ একই জায়গায় গাড়ি নিয়ে ঘুরতে থাকেন। এমন সময় কোনও এক গর্তে তাঁর গাড়ির চাকা আটকে যায়। বহু চেষ্টা করেও সেই চাকা তিনি বের করতে ব্যর্থ হন। এদিকে জঙ্গলের ভিতর মানুষের চিহ্নমাত্র নেই। সাহায্যের জন্য কাউকে ডাকা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, সেখানে কোনওভাবেই মোবাইলের টাওয়ার ছিল না। তাই বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ করার কার্যত কোনও উপায় ছিল না তাঁর। বাধ্য হয়েই, সেই রাতটা গাড়িতেই কাটিয়ে দেন। কিন্তু ওই গভীর জঙ্গলে কি বা রাত, কি বা দিন! সময় দেখে সকাল হয়েছে বুঝতে পারলেও আশেপাশের পরিবেশ সেই একই। কোথাও আলোর লেশমাত্র নেই। এভাবেই কেটে যায় পাঁচ দিন। সঙ্গে থাকা ওয়াইন আর চকোলেট খেয়েই দিন কাটাতে হয় তাঁকে। ধীরে ধীরে চলার ক্ষমতা কমে আসে তাঁর। তবু হার মানেননি। গাছের ফাঁকে কোথাও একটু জায়গা পেলেই আকশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন তিনি। যদি কোনওভাবে হেলিকপ্টার বা ড্রোন ক্যামেরা দেখতে পান, সেই আশায়।
আরও শুনুন: নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে আধার নম্বর! কী কী কারণে তা হওয়া সম্ভব?
অবশেষে তাঁর সেই চেষ্টা সফল হয়। সম্প্রতি স্থানীয় পুলিশের তরফে ওই নির্দিষ্ট এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমে নিরীক্ষণ করা হচ্ছিল। সেই ক্যামেরা দেখতে পেয়েই বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে নিজের অস্তিত্ব বোঝানোর চেষ্টা শুরু করেন তিনি। যা নজরে আসে পুলিশের। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর অবস্থান নির্দিষ্ট করে পুলিশ বাহিনী হাজির হয়। তারপর রীতিমতো অসুস্থ অবস্থায় ওই মহিলাকে উদ্ধার করে আনা হয় জঙ্গল থেকে। পুলিশের তরফে সেই ড্রোন ক্যামেরায় বন্দী হওয়া দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘটনার কথা সবিস্তারে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে এই ধরনের বিপদে যেন আর কেউ না পড়েন, সে বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে।