অগ্নিগর্ভ মণিপুর। প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন বাসিন্দারা। কিন্তু সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই অপেক্ষায় রয়ে গিয়েছে একজন। পরিবারের ফেরার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় দিন গুনছে বাড়ির পোষ্যটি। শূন্যতার এমন ছবি দেখে চোখে জল সকলের। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
অশান্তির আগুন যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেই আগুন কাউকেই রেয়াত করে না। যারা নিতান্তই অসহায়, ওই পরিস্থিতিতে যাদের কোনও ভূমিকা মাত্র নেই, তারাও পড়ে যায় সেই আগুনের মধ্যেই। তাই যে কোনও বিপর্যয়েই দেখা যায়, শিশু, বৃদ্ধ, এমনকি ঘরে থাকা সাধারণ মেয়েদেরও দুর্গতির শেষ থাকে না। আর এইসব মানুষদের মতোই বিপর্যস্ত হয়ে যেতে হয় পোষ্য প্রাণীগুলিকে। যাদের মানুষের ভাষা বোঝার উপায় নেই, মানুষের হানাহানি মারামারি যারা বোঝেও না, অথচ এহেন পরিস্থিতি থেকে তাদের পালাবারও উপায় থাকে না। সম্প্রতি অগ্নিগর্ভ মণিপুরের প্রেক্ষাপটেও এমনই এক পোষ্যের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে দেখা গিয়েছে, ভাঙচুর করা বাড়ি। আগুনে পুড়েও গিয়েছে কিছু অংশ। প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন বাসিন্দারা। কিন্তু সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই অপেক্ষায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পোষ্য কুকুরটি। আকস্মিক বিপর্যয়ের মধ্যে তার কথা হয়তো ভাবার সুযোগ পাননি বাড়ির লোকেরা, বা ভাবলেও তাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু সে রয়ে গিয়েছে অপেক্ষায়। পরিবারের লোকজন কবে ফিরে আসবেন, সেদিকে তাকিয়ে ওই ভাঙাচোরা বাড়িতেই ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে কুকুরটি।
আরও শুনুন: নিয়োগে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি, ফাঁস হয় রাজনৈতিক নেতাদের নামও… কী ঘটেছিল তারপর?
বিগত দিনকয়েক ধরেই অগ্নিগর্ভ মণিপুর। তফশিলি মর্যাদা আদায়ের লক্ষ্যে দীর্ঘ এক দশক ধরে আন্দোলন করছিলেন মেইতেই জনগোষ্ঠী, যাঁরা মণিপুরের উপজাতিভুক্ত সম্প্রদায়ের নন। সম্প্রতি তার প্রতিবাদে মিছিলের ডাক দেয় উপজাতিদের ছাত্র সংগঠন এটিএসইউএম। সেই মিছিলকে কেন্দ্র করেই হিংসা ছড়িয়েছে। রাজধানী ইম্ফলের বেশ কিছু বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তেমনই একটি বাড়িতে ওই পোষ্যটির দেখা মিলেছে। যে ছবি আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে মণিপুরের সাধারণ বাসিন্দাদের বিধ্বস্ত অবস্থাকে। মণিপুরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। শান্তি ফেরানোর জন্য খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আরজি জানিয়েছেন মেরি কম। পরিস্থিতি সামলাতে নামানো হয়েছে সেনা, শুট অ্যাট সাইট-এর নির্দেশ জারি করেছে রাজ্য সরকার। সবকিছু কবে ঠিক হবে ফের, ওই পোষ্যটির মতোই সেদিকে তাকিয়ে রয়েছেন মণিপুরের সাধারণ মানুষেরাও।