পূর্ণিমা মাত্রেই নারায়ণের প্রিয় তিথি। হিন্দু ধর্মের এক অতি পবিত্র তিথি। তবে বুদ্ধ পূর্ণিমা শুধুমাত্র হিন্দুদের নয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছেও বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কী মাহাত্ম্য রয়েছে এই দিনের? আসুন শুনে নিই।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, শ্রী কৃষ্ণের নবম অবতার গৌতম বুদ্ধ। তাঁর জন্ম রাজ পরিবারে। প্রথম জীবনে নাম ছিল সিদ্ধার্থ। যদিও খুব বেশিদিন সেই পরিচয় বয়ে বেড়াননি তিনি। মাত্র ২৯ বছর বয়সে সংসারের মায়া ত্যাগ করে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। তারপর দীর্ঘ তপস্যার পর এমনই এক বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে মোক্ষলাভ করেন তিনি।
আরও শুনুন: পুরুষ দেবতা, অথচ শ্রী হনুমানের সারা শরীর সিঁদুর মাখানো! নেপথ্যে কারণ কী?
বুদ্ধ স্বয়ং শান্তির প্রতিরূপ। ‘আত্মানং বিদ্ধি’। অর্থাৎ নিজেকে জানো। সেই জ্ঞানার্জনের স্বার্থেই একদিন সংসারের মায়া ত্যাগ করেছিলেন ২৯ বছরের এক যুবক। সৌম্যকান্তি সুদর্শন সেই যুবকই কপিলাবস্তুর রাজকুমার সিদ্ধার্থ। রাজা শুদ্ধোদন ও রানি মায়াদেবীর পুত্র। অন্যান্য রাজকুমারদের মতো তাঁরও সবরকম বিদ্যায় হাতেখড়ি হয়েছিল। কিন্তু ছোট থেকেই তিনি যেন অন্য ধাতুতে গড়া। তাঁর বয়সি অন্যান্যরা যখন খেলাধুলোয় মত্ত, তখন হয়তো সিদ্ধার্থ ধ্যানরত অবস্থায় কোনও গাছের নিচে বসে আছেন। আসলে সে সবই যেন ছিল সার্বিক তথাগত হয়ে ওঠার প্রস্তুতি। তারপর এক রাত্তিরে স্ত্রী ও সদ্যোজাত সন্তানকে ঘুমন্ত রেখে ঘর ছাড়লেন সিদ্ধার্থ। ৬ বছর ধরে চলল কঠোর তপস্যা। তারপর একদিন নিরঞ্জনা নদীর তীরে বটবৃক্ষের তলায় বোধিপ্রাপ্ত হলেন তিনি। সেদিনও এক বৈশাখী পূর্ণিমার রাত। আকাশে তখন একথালা চাঁদ। নতুন জন্ম হল ৩৫ বছরের সিদ্ধার্থের। তবে তখন আর তিনি সিদ্ধার্থ নন। তিনি তথাগত, বুদ্ধ।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই দিন খুবই পবিত্র। এই বিশেষ তিথিতে সারাদিন ধরেই চলে গৌতম বুদ্ধের আরাধনা ও নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান। মনে করা হয়, এই দিনে বুদ্ধের উপাসনা করলে পার্থিব দুঃখ কষ্ট থেকে পরিত্রাণ মেলে। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে এই দিনটা তাই আলোর দিন। এ দিনটাকে আলোর উৎসব হিসেবেই পালন করেন তাঁরা। গরিব-দুঃখীদের পেট ভরে খাওয়ান অনেকে। করেন দানধ্যানও। পাশাপাশি হিন্দুরাও এই পূর্ণিমা তিথি নিষ্ঠাভরে পালন করেন। এইদিন সকালে উঠে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করতে হয়। তারপর নারায়ণের পুজো করার নিয়ম রয়েছে। শুধুমাত্র সাদা ফুল ও তুলসী পাতা দিয়েই এই পুজো করা যেতে পারে। পুজোর শেষে প্রসাদ বিলি করতে হয় সবার মধ্যে। তবে এইসব সাধারণ নিয়ম যে কোনও পূর্ণিমা পুজোতেই হিন্দুরা পালন করে থাকেন। অন্যদিকে বুদ্ধপূর্ণিমায় চন্দ্রদেবের পুজোর প্রচলন রয়েছে। শাস্ত্রমতে এইদিনে চন্দ্র তাঁর ষোলোটি কলায় পূর্ণ থাকেন। প্রচলিত বিশ্বাস, বুদ্ধদেবের পাশাপাশি এই দিন চন্দ্র ও বিষ্ণুর উপাসনা করলে ইচ্ছেপূরণ হবেই।
আরও শুনুন: স্বয়ং মহামায়ার অংশ, দেবী গন্ধেশ্বরীর আশীর্বাদ নিয়েই ব্যবসা শুরু গন্ধবণিক গোষ্ঠীর
‘বৌদ্ধং শরণং গচ্ছামি’, অর্থাৎ বুদ্ধের শরণে নিজেকে সমর্পণ করা। বৌদ্ধধর্মের মূল কথাই তাই। এ ধর্মে কোনও জাতিভেদ নেই। হিংসার কথা নেই। কেবল বুদ্ধের শরণ নেওয়াটুকুই সার। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন, বুদ্ধ কেবল তথাগত নন, তিনি যেন চেতনারই দ্যোতক। আর সেই চর্চার শরণে যাওয়ার কথাই বলে গিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে সেই শান্তির বার্তা আত্মস্থ করে নেওয়াই আসলে প্রয়োজন।