সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মৌসুমী জানিয়েছেন, পরিচালক মহেশ ভট্ট একসময় রীতিমতো ভর্ৎসনা করে তাঁকে বলেছিলেন, ‘যখনই কেরিয়ারে ভাল সময় আসে, তুমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ো’। এক মৌসুমী নন, বিয়ে এবং তার পরে সংসার-পরিবার-মাতৃত্বের জেরে কাজে প্রভাব পড়েছে অনেক বলি-নায়িকারই। কেরিয়ারের মধ্যগগনে ছিলেন তাঁরা। অথচ বিয়ে করতে না করতেই কাজের জগতে ইতি টেনেছেন তাঁরা। কারা রয়েছেন সেই তালিকায়? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
‘রাম-লীলা’ ছবির জন্য করিনাকেই প্রথমে বেছেছিলেন সঞ্জয় লীলা বনশালী। কিন্তু সেই বছরেই বিয়ে করেন নায়িকা। তাতে নাকি পরিচালকের বক্তব্য ছিল, লীলার চরিত্রটি জুলিয়েটের মতো, আর কোনও বিবাহিত নায়িকাকে সে চরিত্রে মানাবে না। হ্যাঁ, এমন ধারণা বলিউডে চোরাগোপ্তা ঘুরে বেড়ায় আজও। যদিও ইদানীং কালে আলিয়া-দীপিকারা বিয়ের পরেও দাপিয়ে অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু একসময় বিয়ের সঙ্গে সঙ্গেই কেরিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছে একাধিক বলি-নায়িকার। কেউ সংসারের দাবি মেনেই সরে গিয়েছেন, তো কেউ কাজ ছেড়েছেন এই ধারণার জেরেই।
আরও শুনুন: অভিনয় নয়, সত্যিকারের হস্তমৈথুনের নির্দেশ! একঘর লোকের সামনে কী করেছিলেন অভিনেত্রী?
এই তালিকায় সবার প্রথমেই বোধহয় নাম করতে হয় সায়রা বানুর। ২২ বছর বয়সে তাঁর স্বপ্নের পুরুষ দিলীপ কুমারকে বিয়ে করেন সায়রা, সেসময় যাঁর বয়স তাঁর ঠিক দ্বিগুণ। কিন্তু বিয়ের পর সংসারে মন দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নেন নায়িকা। তারকা স্বামীর দেশবিদেশ জোড়া শ্যুটিং শিডিউলের পাশাপাশি তিনিও ব্যস্ত থাকলে বিয়েটা টিকবে না, এমনটাই আশঙ্কা ছিল তাঁর।
গোটা কাপুর খানদান সিনেমার সঙ্গে যুক্ত থাকলে কী হবে, বাড়ির বউদের রুপোলি পর্দায় দেখতে তাঁদের ঘোরতর আপত্তি। আর তারই ফল ভুগেছেন ববিতা ও নীতু। ২৩ বছর বয়সে রণধীর কাপুরকে বিয়ে করে ফিল্ম দুনিয়া থেকে অবসর নেন ববিতা। এদিকে নীতু সিং ১৪ বছর বয়স থেকেই ঋষি কাপুরকে ডেট করেছেন, অবশেষে ২১-এ পৌঁছে ধুমধাম করে বিয়ে। শিশুশিল্পী থেকে শীর্ষ নায়িকার আসনে পৌঁছনো নীতু তারপরই বলিউডকে বিদায় জানান। তাঁর অবশ্য দাবি, বিয়ের পর পরিবারকেই সময় দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রায় কয়েক যুগ পেরিয়ে ‘লাভ আজ কাল’ এবং ‘দো দুনি চার’-এ ঋষির সঙ্গে ফের জুটি বাঁধেন নীতু।
আরও শুনুন: চাঁদা তুলে প্যান্ট কিনে দেওয়া হোক অনুষ্কাকে, কোহলির পোস্টে খোঁচা নেটিজেনদের
১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রাম তেরি গঙ্গা ম্যায়লি’ ছবির হাত ধরে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন মন্দাকিনী। কিন্তু ১৯৯০-তে বিয়ে সারার পর একাধিক সফল বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা মন্দাকিনী নিজেকে সিনে-জগৎ থেকেই সরিয়ে নেন। একই গল্প মীনাক্ষী শেষাদ্রিরও। ১৯৯৩ সালে ‘দামিনী’ ছবিতে যাঁর অভিনয় কাঁপিয়ে দিয়েছিল বি-টাউনকে। কিন্তু ‘৯৫-তে বিয়ে, আর ‘৯৬ সালে সানি দেওলের বিপরীতে ‘ঘাতক’-ই তাঁর শেষ ছবি।
আবার ধরুন ভাগ্যশ্রীর কথাই। এক ছবিতেই তাঁর প্রেমে পড়ে গিয়েছিল আসমুদ্রহিমাচল। কিন্তু মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ে করার পরে পরেই বলিউডকে বিদায় জানাতে বাধ্য হন ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’র নায়িকা। প্রথম থেকেই শোনা যায়, অন্য অভিনেতাদের সঙ্গে ভাগ্যশ্রীর প্রেমের দৃশ্যে অভিনয় করা নিয়ে ভয়ানক আপত্তি ছিল তাঁর স্বামী হিমালয়ের। অনেক পরে ভাগ্যশ্রী জানিয়েছিলেন, শ্বশুরবাড়ির দাবিতে গৃহবধূর যাবতীয় দায়িত্বও তাঁকে পালন করতে হত। দুদিকে সামাল দেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল বলেই কেরিয়ারকে বলি দিতে হয় তাঁকে, এমনটাই বলেন এই জনপ্রিয় নায়িকা।
শাহরুখ খানের বিপরীতে ‘স্বদেশ’ ছবিতে ডেবিউ করে ২০০৫-এ ‘বেস্ট ফিমেল ডেবিউ’ ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন গায়ত্রী জোশী। কিন্তু সেই বছরই বিয়ে করে অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। শাহরুখের ‘বাজিগর’-এর নায়িকা শিল্পা শেঠিও রাজ কুন্দ্রাকে বিয়ে করার পর আর সিনেমায় ফেরেননি। একই কাজ করেছেন সোনালি বেন্দ্রে কিংবা টুইঙ্কল খান্নাও। ‘গজনি’ ছবিতে আমির খানের নায়িকা আসিন-ও বিয়ের পর অভিনয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। আপাতত সংসারেই মন দিতে চান তিনি, এমনটাই দাবি নায়িকার।