তিনিও দেবী দুর্গার অংশ। সিংহবাহিনী, চতুর্ভুজা। অথচ তাঁর পুজো করেন মূলত বণিক সম্প্রদায়। তাঁদের রক্ষাকর্ত্রী হিসবেই দেবী গন্ধেশ্বরীর আবির্ভাব। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা দেবীর আরাধনা তিথি। আসুন শুনে নিই, দেবী গন্ধেশ্বরীর মাহাত্ম্য।
দেবী একদিকে যেমন মাতৃস্বরূপা, তেমন অন্যদিকে দুষ্টের বিনাশকারী। ত্রিলোকে যখনই অসুরকুলের নির্মম অত্যাচারে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে, তখনই বিভিন্ন রূপে প্রকট হয়েছেন দেবী মহামায়া দুর্গা। সেই দেবীরই অন্যতম রূপ দেবী গন্ধেশ্বরী।
আরও শুনুন: মহাদেবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ, কোন শিবক্ষেত্র দর্শনে কী বিশেষ ফল মেলে?
তিনিও সিংহবাহিনী, চতুর্ভুজা। তাঁর মূর্তির সঙ্গে মিল পাওয়া যায় দেবী জগদ্ধাত্রীর। তবে এই দেবী মূলত বণিক সম্প্রদায়ের আরাধ্যা। তাই তাঁর মূর্তির সামনে ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত অনেক কিছুই দেখতে পাওয়া যায়। কোথাও আবার দেবী স্বয়ং তাঁর হাতে দাঁড়িপাল্লা ধারণ করেন। বৈশাখ পূর্ণিমা তাঁর আরাধনার তিথি।
আরও শুনুন: রামনবমীর উন্মাদনা নেই, সীতানবমী পালনের সঙ্গে জড়িয়ে আত্মত্যাগের কাহিনি
বাংলায় দেবীর পুজোর সূচনা হয়েছিল বহুকাল পূর্বে। তখনকার বাংলার সঙ্গে বর্তমানের বিশেষ মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। তখন বাঙালি রমরমিয়ে ব্যবসা করত। বিখ্যাত সব বাঙালি বণিকের জগৎজোড়া নাম ছিল। মূলত মশলা, সুগন্ধী বা এই জাতীয় জিনিস নিয়েই গঙ্গার বুকে তরী ভাসাতেন তৎকালীন বণিকরা। এই বিশেষ শ্রেণির বণিকরা পরিচিত ছিলেন গন্ধবণিক হিসেবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করতেন এই সম্প্রদায়ের মানুষজন। এরকম একসময় এক গন্ধবণিক কন্যার উপর নজর পড়ে এক অসুরের। মেয়েটিকে অপহরণ করার তাল করে সেই অসুর। তবে তখন গন্ধবণিকদের যথেষ্ট ক্ষমতা। তাই তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ যায় ওই অসুরের। কিন্তু এই মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি ওই অসুরের পুত্র। দীর্ঘদিন তপস্যা করে দেবতার বরে শক্তিশালী হয়ে সে পণ নেয়, গন্ধবণিককুলকে ধ্বংস করবে। সেইমতো শুরু হয় তার অত্যাচার। যখন যেখানে গন্ধবণিক দেখতে পেত তাকেই হত্যা করত এই অসুর। তার নামই হয়ে যায় গন্ধাসুর। তবে ওই যে, যতবার অসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েছে মানবকুল, ততবার দেবী বিভিন্ন রূপে আবির্ভূতা হয়েছেন। এক্ষেত্রেও হয়েছিল তেমনটাই। গন্ধবণিকদের প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে দেবী মহামায়া চতুর্ভুজা রূপে প্রকট হন। তিনিই হত্যা করেন গন্ধাসুরকে। সেই থেকে গন্ধবণিক সম্প্রদায় দেবীর পুজো করে আসছেন।
আরও শুনুন: স্বয়ং মহাদেব ভিক্ষা নেন তাঁর কাছে, ভক্তের অন্নের অভাব দূর করেন দেবী অন্নপূর্ণা
দেবীর মাহাত্ম্য সম্পর্কে আরও অনেক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। তবে দেবী সম্পর্কে সর্বাধিক প্রচলিত কথাটি হল,
বৈশাখ মাসেতে বন্দি দেবী গন্ধেশ্বরী।
চতুর্ভুজা ত্রিনয়নী সিংহ পৃষ্ঠে চড়ি।।
হনন করিলা দেবী দুর্মতি গন্ধেরে।
সেই হতে গন্ধবেণে পূজে ভক্তি ভরে।।
দেবীর পুজো বণিক শ্রেণির মানুষজন করে থাকলেও দেবী স্বয়ং মহামায়ার অংশ, তাই যে কেউ তাঁকে স্মরণ করলে নিশ্চয়ই বিপদের হাত থেকে রক্ষা পান। অন্যদিকে এই দেবীকে স্মরণ করে ব্যবসা আরম্ভ করলে তাতে অবশ্যই শুভাশুভ লাভ হয়, এমনটাই বিশ্বাস তাঁর ভক্তদের।