‘রামনবমী’, অর্থাৎ শ্রীরামের জন্মতিথি নিয়ে ভক্তদের উন্মাদনার শেষ নেই। কখনও রাজনীতির ছত্রছায়া আবার কখনও ভক্তির জোয়ার, সব মিলিয়ে রামনবমী যেন সত্যিই এক জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। কিন্তু রামপত্নী সীতার জন্মতিথি, সেও তো এমনই এক নবমী তিথিতেই! রামনবমীর ঠিক একমাস পর, বৈশাখ মাসের শুক্লা নবমী তিথি পালিত হয় সীতা নবমী হিসেবে। চলতি মাসের ২৯ তারিখেই সেই পুণ্যতিথি। কীভাবে পালন করতে হয় এই বিশেষ দিন? আসুন শুনে নিই।
রামনবমী-র কথা তো সকলেরই জানা। কিন্তু সীতানবমী? এমন এক তিথিরও যে উল্লেখ মেলে পঞ্জিকায়, একথা অনেকেরই অজানা। অথচ যাঁর জন্মতিথি হিসেবে এই বিশেষ দিনটি পালিত হয়, সেই মা সীতা শ্রীরামের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। বলা বাহুল্য, রামায়ণের মূল পর্বটাই তো তাঁকে কেন্দ্র করে।
আরও শুনুন: মহাদেবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ, কোন শিবক্ষেত্র দর্শনে কী বিশেষ ফল মেলে?
শাস্ত্রমতে, তিনি শ্রী লক্ষ্মীর অংশ। কারণ শ্রীরাম যদি নারায়ণের অবতার হন, তাহলে তাঁর পত্নী অবশ্যই দেবী লক্ষ্মীর অংশ হবেন। অথচ মর্তে রামের মাহাত্ম্য যে হারে প্রচার পেয়েছে সেইভাবে সীতা হয়তো প্রতিষ্ঠা পাননি। তর্কের খাতিরে অনেকেই হয়তো বলবেন, যে কোনও রামমূর্তির সঙ্গেই তো দেবী সীতাকে দেখা যায়। সে বিষয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু শ্রীরামের নাম নিয়ে যে হারে উন্মাদনা রয়েছে তা হয়তো সীতার প্রতি নেই। যার কারণ লুকিয়ে রামায়ণের শেষ পর্বে। তবে এসবই তর্কের বিষয়। এখনও অনেকেই রীতিমতো ভক্তিভরে সীতানবমী পালন করেন। সেখানে হয়তো রাজনীতির ছায়া নেই, ভক্তের উন্মাদনাও নেই, কিন্তু রয়েছে অপার ভক্তি। শাস্ত্রমতে সীতানবমী পালনের বিশেষ কোনও কঠিন নিয়ম নেই। অন্যান্য ব্রতের মতোই সীতানবমীর দিন সকাল সকাল স্নান সেরে নিতে হয়। তারপর শুদ্ধচিত্তে দেবী সীতার মূর্তি বা প্রতিকৃতির সামনে প্রদীপ জ্বালানো যেতে পারে। নিজের পছন্দের ফুল দিয়ে দেবস্থল সাজিয়ে তোলার রীতিও রয়েছে। তারপর রামায়ণ পাঠ করতে হয়। বিশেষত যে অংশগুলিতে দেবী সীতার আত্মত্যাগ ও কঠোর লড়াইয়ের কথা বর্ণনা করা হয়েছে সেই অংশগুলি ভক্তিভরে পড়তে হয়।
আরও শুনুন: জন্মবার অনুযায়ী আপনার উপাস্য দেবতা কে? শুনে নিন
আসলে সীতানবমী, নতুন করে দেবীর আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করার দিন। কীভাবে অযোধ্যার হবু রানি এককথায় সব ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে বনবাসী হয়েছিলেন। কীভাবে রাজকন্যা জানকী দিনের পর দিন রাক্ষসের হাতে বন্দি হয়ে কাটিয়েছেন। কিংবা কীভাবে একজন মা তাঁর সন্তানদের বুকে আগলে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে ঋষির আশ্রমে দিন কাটিয়েছেন, সেই সব কাহিনি মনে করে নেওয়ার দিন এই সীতা নবমী। অবশ্যই শ্রী রাম মহান যোদ্ধা, সুশাসক, মর্যাদা পুরুষোত্তম। কিন্তু যার জন্য তাঁর এত বীরত্বের প্রকাশ সবাই জেনেছে, সেই দেবী সীতাকে সত্যিই কি সঠিক বিচার দিতে পেরেছিলেন শ্রীরাম? এ প্রশ্ন রীতিমতো তর্ক সৃষ্টি করতে পারে। তার থেকে ভালো সমস্ত বিতর্ক আড়ালে রেখে দেবী সীতাকে আরও একবার স্মরণ করে নেওয়া। তিনিও যে দেবীর লক্ষ্মীর অংশ। তাই ভক্তিভরে তাঁর জন্মতিথি পালন করলেও অবশ্যই শুভাশুভ ফল পাওয়া সম্ভব।