তিনি দেবাদিদেব। অথচ সামান্য বেলপাতাতেই তিনি তুষ্ট। মর্তে তাঁর পুজো হয় মূলত লিঙ্গরূপে। তবে সারা দেশে রয়েছে এমন কিছু জ্যোতির্লিঙ্গ যেখানে স্বয়ং শিবের বাস। সেই সব দেবস্থানে পুজো দেওয়ার রয়েছে বিশেষ মাহাত্ম্য। কোথায় পুজো দিলে কী ফললাভ হয়? আসুন শুনে নিই।
তিনি আদিপুরুষ। স্বয়ং মহামায়া তাঁর ঘরনি। মর্ত্যে সেই শিব স্বয়ম্ভুর প্রকাশ লিঙ্গরূপে। বলা ভালো, মূর্তিরূপে শিবের পুজো নিষিদ্ধ। তাই অধিকাংশ মন্দিরেই মূলত শিবলিঙ্গের দেখা মেলে। কথিত আছে, দেশের ১২ টি মন্দিরের শিবলিঙ্গে স্বয়ং দেবাদিদেবের বাস। সেগুলি হল জ্যোতির্লিঙ্গ। ঠিক কতদিন আগে এই জ্যোতির্লিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তা তর্কের বিষয়। তবে বর্তমানে সেইসব মন্দিরই শিবতীর্থে পরিণত হয়েছে।
আরও শুনুন: জন্মবার অনুযায়ী আপনার উপাস্য দেবতা কে? শুনে নিন
দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের প্রথমেই বলতে হয়, শ্রী সোমনাথের কথা। গুজরাটের সৌরাষ্ট্রে এই শিবক্ষেত্রটি অবস্থিত। এখানে মহাদেব সোমেশ্বর নামে পূজিত হন। বলা হয়, মহাদেবের এই বিশেষ রূপের পুজো করলে জন্মজনিত দুঃখ থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব। ভক্তিভরে যিনি এই জ্যোতির্লিঙ্গের আরাধনা করেন তিনি মৃত্যুর পর শিবের মধ্যেই লীন হন। মহাদেবের দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গটি অন্ধপ্রদেশের শৈলপর্বতে অবস্থিত। এখানে তিনি মল্লিকার্জুন নামে পূজিত। পুরাণমতে মহাদেবের এই বিশেষরূপ পূর্বপুরুষের মুক্তিলাভ ঘটাতে সাহায্য করেন। আবার কথিত আছে এই মন্দিরে পুজো দিলে পূজক রাজ ঐশ্বর্যের অধিকারী হন। এরপর মহাদেবের তৃতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ-র ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক। এই মন্দির মধ্যপ্রদেশের উজ্জ্বয়িনীতে অবস্থিত। এখানে মহাদেবের প্রকাশ মহাকাল রূপে। মহাকাল অর্থেই কালের অধিপতি। উজ্জ্বয়িনীর মহাকালেশ্বর শিবও ঠিক তেমনটাই নির্দেশ করেন। তাঁর আরাধনা করলে অকালমৃত্যু হয় না। এমনকি ভক্তের দীর্ঘায়ু বরপ্রাপ্তি হয় এই বিশেষ দেবস্থলে। এরপর মধ্যপ্রদেশের আরও এক স্থানে জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন মেলে। ওঙ্কারেশ্বর নামে তিনি মান্ধাতা পর্বতে বিরাজ করছেন। প্রভুর এই রূপের অর্চনা করলে বিশেষ পুণ্যলাভ হয়। কথিত আছে, চতুর্বেদ অধ্যয়নের ফল পাওয়া যায় ওঙ্কারেশ্বরের আরাধনা করলে। এরপর মহাদেবের পঞ্চম জ্যোতির্লিঙ্গ। যা খুবই দুর্গম এক স্থানে অবস্থিত। উত্তরাখন্ডের কেদার পর্বতে তিনি কেদারেশ্বর নামে পূজিত হন। এই শিবক্ষেত্রের যাত্রা পথ এতই দুর্গম, যে সারা বছর ভক্তরা এখানে যেতেও পারেন না। তবে একবার এই স্থানে পা রাখলেই পুন্যলাভ সম্ভব। শুধুমাত্র কেদারেশ্বরের দর্শণেই মোক্ষলাভ হয়। একইসঙ্গে মৃত্যুর পর এই শিবভক্তের শিবলোক প্রাপ্তি হয়। তালিকায় এরপর রয়েছেন ভীমশঙ্কর। মহারাষ্ট্রের পুনে শহরে তাঁর অবস্থান। এই জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন করলে মহাশোক নাশ হয়। এবার বলতে হয় কাশীশ্বরের কথা। উত্তরপ্রদেশের বেনারস শহরটাই আস্ত শিবক্ষেত্র। সেখানেই অধিষ্ঠিত বিশ্বেশ্বর মহাদেব। কথিত আছে, বাবা বিশ্বনাথ ভক্তের সবরকমের জাগতিক চাহিদা পূরণ করেন। এমনকি তাঁর পুজো করলে রাজ ঐশ্বর্যের বরপ্রাপ্তি হয়। এরপর রয়েছেন গোদাবরীর তীরে অবস্থিত শ্রী ত্র্যম্বকেশ্বর মহাদেবের মন্দির। এই জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন করলে ভক্তের আর পুনর্জন্ম হয় না। এছাড়া কারও বিবাহ ঘটিত সমস্যা থাকলেও ত্র্যম্বকেশ্বরের বরে তা ঠিক হয়ে যায়। এরপর বলতে হয় ঝাড়খণ্ডের বাবা বৈদ্যনাথের কথা। তিনি রোগ হরণকারী। কথিত আছে, এই মন্দিরে পুজো দিলে ভক্তের কঠিনতর অসুখও সেরে যায়। দশম জ্যোতির্লিঙ্গটি নাগেশ্বরের। তাঁর আরাধনা করলে কখনও সর্পাঘাত হয় না। এমনকি আত্মার মুক্তিলাভও সম্ভব এই বিশেষ জ্যোতির্লিঙ্গের পুজোয়। এরপর বলতে হয় শ্রী রামেশ্বরের কথা। স্বয়ং রামচন্দ্র মহাদেবের এই জ্যোতির্লিঙ্গের আরাধনা করেছিলেন। এই রূপের পুজো করলে ভক্তের সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়। মৃত্যুর পর রুদ্রলোকে ঠাঁই মেলে। তালিকার শেষ এবং দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গটি মহারাষ্ট্রে অবস্থিত। মহাদেবের এই বিশেষ রূপটি ঘৃষ্ণেশ্বর নামে পূজিত। এমনিতেই মহাদেব অল্পে সন্তুষ্ট হন এমন দেবতা। তাঁর ঘৃষ্ণেশ্বর রূপেও সেই ভাবের প্রকাশ মেলে। খুব সামান্য আয়োজনে তাঁর পুজো করলেও অত্যন্ত প্রসন্ন হন তিনি। এবং ভক্তের যাবতীয় মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন।
আরও শুনুন: স্বয়ং মহাদেব ভিক্ষা নেন তাঁর কাছে, ভক্তের অন্নের অভাব দূর করেন দেবী অন্নপূর্ণা
অধিকাংশ শিবভক্তই মনে করেন সারাজীবনে অন্তত একবার এই দ্বাদশ শিবলিঙ্গের দর্শন করবেন। কিন্তু মহাদেবের কৃপা নাহলে সেই ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যায়। তবু জীব মাত্রেই শিব। তাই মনের ভক্তি আর ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস থাকাটাই যথেষ্ট। নিষ্ঠা ভরে বাড়ির শিবলিঙ্গের সামনে বসে দেবাদিদেবকে স্মরণ করলেও একই ফল লাভ সম্ভব।