ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত তাঁদের ছেলে। এবার সেই ধর্ষণের ফলে জন্মানো শিশুরই কাস্টডি চেয়ে আদালতে গেলেন অভিযুক্তের মা-বাবা। এই অভিনব আরজির উত্তরে কী জানিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
নারী নির্যাতন রুখতে দেশে যতই আইনকানুন থাকুক না কেন, বাস্তবে কি দেশে নির্যাতনের সংখ্যা কমেছে? বাস্তবের ছবিটা কিন্তু সে কথা বলে না। বরং তথ্য পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, দেশজুড়ে ধর্ষণের ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। নির্যাতিতার প্রতি সাধারণ মানুষের ভাবনাচিন্তাতেও কি কোনও বদল এসেছে? সেখানেও সামগ্রিক ছবিটা কিন্তু রীতিমতো হতাশাজনকই। সেই কথাই আরও একবার সামনে উঠে এল এক সাম্প্রতিক মামলার দৌলতে। যেখানে দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক দম্পতি। জানা গিয়েছে, ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত তাঁদের ছেলে। বর্তমানে জেলও খাটছে সেই যুবক। না, তার শাস্তি মকুব বা এমন কোনও দাবি নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে আদালতের কাছে যাননি ওই দম্পতি। বরং তাঁদের দাবিটি বেশ অভিনব। ধর্ষণের ফলে যে শিশুর জন্ম দিয়েছে নির্যাতিতা, সেই শিশুটির কাস্টডি দাবি করে বসেছেন তাঁরা। কিন্তু আশ্চর্যের কথা হল, শিশুটির দেখভালের দায়িত্ব নিতে চাইলেও তার মায়ের, অর্থাৎ ওই নির্যাতিতার বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে ধর্ষকের পরিবার। আর নির্যাতিতার প্রতি এহেন উদাসীনতা দেখেই রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি।
আরও শুনুন: সাংসদকে মশার কামড়! মাঝপথে ট্রেন থামিয়ে চলল সাফাই অভিযান
এমনিতে ২০১২ সালের নির্ভয়া কাণ্ডের পর ধর্ষণ আইন আরও কঠোর করেছিল সরকার। কিন্তু উদ্বেগের কথা হল, ২০১২ সালের পর থেকে ধর্ষণের ঘটনা কম হওয়া তো দূরের কথা, উল্টে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কেবল ২০১২ থেকে ২০১৬, এই ৫ বছরেই ভারতে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে ৬০ শতাংশ। বছরের পর বছর গড়ালেও ধর্ষণের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা যায়নি। আর তাই এখনও দেশে ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন অসংখ্য নারী। কিন্তু এরপরে সমাজে তাঁদের অবস্থান কী দাঁড়াবে, কিংবা সেই নির্যাতিতাদের দায়িত্ব কে নেবে, সে বিষয়েও সমস্যা বাড়ছে বই কমছে না। এই মামলায় নির্যাতিতার সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাইলেও নির্যাতিতার দায়িত্ব নেওয়ার কথা ভাবেনি ধর্ষকের পরিবার। আর সেই বিষয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তাঁর প্রশ্ন, মা না থাকলে সন্তান থাকবে কী করে? যদিও অভিযুক্তের বাবা-মার দাবি, নির্যাতিতার ভালর কথা ভেবেই এই পদক্ষেপ করেছেন তাঁরা। কিন্তু সে কথায় কর্ণপাত করেনি আদালত। বরং সন্তানের মায়ের প্রতি কোনোরকম গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই এই আরজি নাকচ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।