‘ছোট পরিবার, সুখী পরিবার’। মোটামুটি এই মতাদর্শেই এখন চলছে প্রায় গোটা বিশ্ব। সেখানে দাঁড়িয়ে এই পরিবারটি মোট সদস্যের সংখ্যা শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। বর্তমানে এই পরিবারের মোট সদস্য ৬১ জন, যাঁরা সকলেই এক ছাদের তলায় থাকেন। আসুন শুনে নেওয়া যাক এই পরিবারের কথা।
কথায় বলে, রাবণের গুষ্টি। অর্থাৎ কিনা, অনেক লোকজনে ভরা বড় পরিবার। তবে এই যুগে দাঁড়িয়ে তেমন কোনও পরিবারের দেখা মেলা ভার। কারণ বর্তমান দুনিয়াতে অধিকাংশ মানুষই নিউক্লিয়ার পরিবারের ধারণায় বিশ্বাসী। সেখানে এই পরিবারটির মোট সদস্যের সংখ্যা অবাক করার মতোই। তার চেয়েও অবাক করা কথা হল, সব সদস্যই এখনও থাকেন এক ছাদের তলাতেই। না না, কোনও পারিবারিক সিনেমা কিংবা সিরিয়ালের গল্প বলছি না। একেবারে বাস্তবেই দেখা মিলেছে এমন পরিবারের। যার মোট সদস্যের সংখ্যা ৬১। শুধু এক ছাদের তলায় থাকাই নয়, এখনও একান্নবর্তী পরিবার বজায় রেখে চলেছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: না ঘুমিয়ে ১৯ দিন! বিশ্বরেকর্ডের খাতায় নাম ব্যক্তির
আজ্ঞে হ্যাঁ, মহারাষ্ট্রের যাদব পরিবার ঠিক এরকমই। মহারাষ্ট্রের এক গ্রামে এই পরিবারের ৬১ জন সদস্যের বাস। তাঁরা সকলে একসঙ্গে একটি বাড়িতেই থাকেন। যদিও সেই বাড়িটি রাজপ্রাসাদের সমান বললে ভুল হবে না। বাড়িটিতে ৫০টিরও বেশি ঘর আছে। রয়েছে একাধিক রান্নাঘরও, না হলে এতজন মানুষের খাবার জোগানো কি মুখের কথা! তবে বাজার থেকে রান্না সবকিছু হয় একইসঙ্গে। এতবড় পরিবারের মাসিক খরচও তো নেহাত কম হওয়ার কথা নয়! তাঁদের দাবি, তাঁদের পরিবারে প্রতি মাসে স্রেফ মুদিখানার বাজার হয় ৩০ হাজার টাকার। সব মিলিয়ে মাসিক খরচ এক লাখ ছাড়িয়ে যায় অনায়াসেই। তবে যেহেতু পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই রোজগেরে, তাই এই খরচ জোগাতে বিশেষ অসুবিধা হয় না তাঁদের। জানা গিয়েছে, এই পরিবারের বার্ষিক আয় ৬৫ লক্ষ টাকা। পরিবারের প্রত্যেকেই বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। কেউ শিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ আবার উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মী। অন্যদিকে এত বড় বাড়ি ছাড়াও ১২৫ একর জমির মালিক এই যাদব পরিবার। একইসঙ্গে ১০০টিরও বেশি গবাদি পশু আছে এই পরিবারের। তাই পরিবারের অনেকেই জমি দেখাশোনা এবং পশুপালন ও সেই সংক্রান্ত কাজেও ব্যস্ত থাকেন।
আরও শুনুন: পরনের পোশাকে গণপতি, করছেন মদ্যপান, গায়িকার উপর চটে লাল নেটিজেনরা
তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এমন পরিবারের কথা শুনে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। এমন যৌথ পরিবারের উল্লেখ বোধহয় পৌরাণিক গল্পেই মেলে। অথচ যৌথ পরিবার ভারতীয় সংস্কৃতিরই অন্যতম অঙ্গ ছিল। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যা প্রায় অবলুপ্তির পথে। যদিও সে কথা মানতে নারাজ যাদব পরিবারের কর্তা। তিনিই বর্তমানে ওই পরিবারের সবথেকে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি। পরিবারের সকলেই তাঁকে সম্ভ্রম করে চলেন। তাঁর মতে, একটু পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকলেই যৌথ পরিবার বজায় রাখা সম্ভব। এর প্রভাবে একেবারে শৈশবেই বাড়ি থেকেই নানা মূল্যবোধের পাঠ শিখে যায় পরিবারের খুদে সদস্যরা। অন্যদিকে পরিবারে কোনও একজনের সমস্যা হলে অন্যরাও তা সমাধানের জন্য কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর একে অপরের প্রতি এহেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ফলেই এখনও মিলেমিশে এক হয়ে রয়েছে এই পরিবার, এমনটাই জানিয়েছেন ওই পরিবারের সদস্যরা।