বিবাহিত না হলে যোনির মাধ্যমে আলট্রাসাউন্ড করানো যাবে না। কার্যত এমনই ফতোয়ার মুখোমুখি হচ্ছেন দেশের অবিবাহিত তরুণীরা, উঠল অভিযোগ। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, শারীরিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও যোনির মাধ্যমে আলট্রাসাউন্ড করতে নারাজ চিকিৎসাকর্মীরা। কিন্তু কেন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
যৌনতা শব্দটিকে যতই উত্তেজনার সঙ্গে সমার্থক করে তোলা হোক না কেন, সবসময়েই যে যৌনতা প্রবল সুখ বয়ে আনবে এমনটা না-ই হতে পারে। বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে অনেক সময় যৌনতার সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে অস্বস্তি। আসলে নানারকম শারীরিক অসুবিধা বা অসঙ্গতির কারণে অনেক সময়ই যৌনতায় সমস্যা হয় মেয়েদের। শুধু তাই নয়, ঋতুর সময়েও বিভিন্ন অসুবিধা দেখা দেয়। পলিসিস্টিক ওভারি বা পিসিওডি-র মতো সমস্যার সঙ্গে এখন অনেকেই পরিচিত। জরায়ুর মধ্যে এমন কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য আলট্রাসোনোগ্রাফি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু সেই পরামর্শ মানতে গিয়েই সমস্যার মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ একাধিক মহিলার।
কী ঘটেছে ঠিক?
আরও শুনুন: ঋতুকালে মাকে ‘রানির হালে’ রাখেন, বাবা-ছেলের ট্যাবু ভাঙার উদ্যোগে আপ্লুত নেটদুনিয়া
আসলে যন্ত্রের সাহায্যে শরীরের বাইরে থেকেই শরীরের ভিতরকার ছবি তুলে এই পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু যখন সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে, তখন এইভাবে তার কাছে পৌঁছনো যায় না। আর তখনই যোনির মাধ্যমে আলট্রাসাউন্ড করা হয়। অর্থাৎ যোনির মধ্যে দিয়ে যন্ত্র প্রবেশ করে শরীরের অন্দরমহলে, সন্ধানী চোখে দেখে নেয় কোন গোপনে লুকিয়ে রয়েছে সমস্যার বীজ। অনেক মহিলাই জানাচ্ছেন, শরীরের থেকেও বেশি সমস্যা আসলে মনে। না, রোগিণীরা নন, এই পরীক্ষা করতে নারাজ অনেক চিকিৎসাকর্মীই, দাবি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের। এইভাবে আলট্রাসাউন্ড করতে হলে কোনও মহিলার গোপনাঙ্গ দিয়ে যন্ত্রটি প্রবেশ করবে, অর্থাৎ হাইমেন বা সতীচ্ছদ ছিঁড়ে যাবে। সুতরাং অবিবাহিত মহিলাদের এই পরীক্ষা করানোয় আপত্তি তোলেন তাঁরা, অভিযোগ এমনটাই। বলাই বাহুল্য, ভারতীয় সমাজে সতীত্বের ধারণা এখনও কায়েম হয়ে রয়েছে। তাই বিয়ের ক্ষেত্রে কোনও নারীর কৌমার্যকে এখানে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। নাচ, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, কিংবা শরীরচর্চার কারণেও যে হাইমেন অক্ষত না থাকতে পারে, সে কথা উড়িয়েই দেন সতীত্ব পক্ষের উকিলেরা। কিন্তু চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সেই বিষয়টি এভাবে প্রভাব ফেলেছে দেখে ক্ষুব্ধ অনেক মহিলাই। এমনকি বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রেও এই পরীক্ষা করতে গেলে স্বামীর অনুমতি চাওয়া হয় বলে দাবি তাঁদের।
আরও শুনুন: ধ্বংসস্তূপে আটকে ছিল ১২৮ ঘণ্টা, ৫৪ দিন পর মাকে খুঁজে পেল তুরস্কের সেই শিশু
আসলে যৌনতা, বিশেষ করে নারীর যৌন জীবন নিয়ে এখনও ট্যাবু মুছে ফেলতে পারেনি আমাদের সমাজ। আর তার ছাপ পড়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। এমনকি চিকিৎসাতেও। কোনও নারীর যৌন জীবন রয়েছে কি না, তা জানতে অনেক চিকিৎসকই ঘুরিয়ে প্রশ্ন করেন যে, তিনি বিবাহিতা কি না। আর এই ছুঁতমার্গের জেরেই কোনও মহিলার সুস্থতার থেকেও বেশি গুরুত্ব পেয়ে যাচ্ছে তাঁর সতীত্ব। যে কারণেই এহেন নিষেধের বহর, বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।