সম্প্রতি রামনবমীকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রদেশে দেখা দিয়েছে হিংসাত্মক কাজকর্ম। ফলত পুরনো একটা প্রশ্ন ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে? অস্ত্র হাতে ধর্মীয় মিছিল কি আদৌ যুক্তিযুক্ত? এ-প্রশ্নের জল গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্টেও। কী জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত? শুন শুনে নিই।
ধর্মীয় মিছিলে ক্রমশ বাড়ছে অস্ত্রের ব্যবহার। বলা যায়, ধর্মকে ভিত্তি করেই অস্ত্রের ব্যবহার যেন স্বীকৃতি পেয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। বিষয়টি যে উদ্বেগের তা নিয়ে সন্দেহ নেই। সম্প্রতি রামনবমীকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে হিংসাত্মক কার্যকলাপ হয়েছে, তাতেও এই ঘটনার প্রমাণ মিলেছে। এমনকী বাংলাতেও রামনবমীর অশান্তিতে খোঁজ মিলেছে বহিরাগত যোগের। বিহারের মুঙ্গের থেকে মিছিলে অস্ত্রধারী এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয় গত মঙ্গলবার। বুধবার এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও এক যুবককে। ফলত ধর্মীয় মিছিলে অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এবং সে প্রশ্ন উঠেছিল খোদ শীর্ষ আদালতেই।
আরও শুনুন: গান্ধীহত্যা থেকে RSS-এর নিষিদ্ধ হওয়া বাদ! ইতিহাস মোছার অভিযোগে ফের বিদ্ধ NCERT
এ বিষয়ে শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। মূলত শান্তি-ন্যায় ও ন্যায্যতা নিয়েই কাজ করে সংস্থাটি। শীর্ষ আদালতের কাছে দাখিল করা আবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছিল, বর্তমান সময়ে ধর্মীয় মিছিলে অস্ত্রের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। বা বলা যায়, ধর্মীয় মিছিল বা অস্ত্র প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছে। আবেদনে জানানো হয়েছিল, ধর্মীয় মিছিলগুলি ক্রমে ক্রমে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের মূল কেন্দ্র হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তা নিয়ে কোনও এক পক্ষকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। কিন্তু এখনই যদি নিয়ম না আনা হয় অর্থাৎ নির্দেশিকা জারি না করা হয় তাহলে এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে। এ বিষয়ে শীর্ষ আদালতের কী পর্যবেক্ষণ এবং এ সম্পর্কে কোনও পদক্ষেপ করা যায় কি-না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছিল ওই আবেদনে।
আরও শুনুন: ‘বিজেপির শাসনে সাম্প্রদায়িক হিংসা হয় না!’ শাহের মন্তব্যে কপিলের কটাক্ষ, ‘ফের জুমলা’
এই আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আইনজীবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানায়, দেশে এমন অনেক ধর্মীয় মিছিল হয় যার সঙ্গে হিংসার কোনও সম্পর্ক নেই। উদাহরণ হিসাবে তুলে আনা হয়, মহারাষ্ট্রের গণপতি উৎসবের নমুনা। যেখানে বহু মানুষ ধর্মীয় কারণেই একত্রিত হন, কিন্তু সেখানে হিংসার বাতাবরণ নেই। অতএব আদালতে বক্তব্য ছিল, কেন শুধু খারাপ ঘটনাগুলোর দিকেই চোখ রাখা হবে! ভাল নমুনাগুলোর দিকে আমরা তাকাব না কেন, প্রশ্ন তুলে আদালত জানায়, সেগুলোর কথাও মনে রাখা উচিত। পালটা সংস্থার আইনজীবী জানান, কিন্তু যে ক্ষেত্রে এই ধরনের হিংসাত্মক কাজ হচ্ছে, তা থেকেও আমাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখা উচিত নয়। তবে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ বিষয়ে শীর্ষ আদালত জানায়, বিচারব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে কোনও নীতি নির্ধারণ করে দিতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা যেহেতু রাজ্যগুলির বিষয়, তাই আদালতের মত, স্থানীয় প্রশাসন, স্থানিক গুউরুত্ব অনুযায়ীই এই ধরনের ঘটনাগুলির বিচার করবে। এক্ষেত্রে বিচারব্যবস্থা কোনও একরৈখিক কাঠামো ঠিক করে দিতে পারে। পরস্থিতি বিচার করে স্থানীয় প্রশাসনই এই ধরনের ধর্মীয় মিছিলের অনুমতি দিতে পারে বলেই, মত প্রকাশ করেছিল আদালত।
আদালত এ ব্যাপারে কোনও স্থির পদক্ষেপের পক্ষপাতী না হলেও, ধর্মীয় মিছিলে যে অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে এবং তা হিংসাত্মক রূপ পাচ্ছে তা আবারও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে এই ধরনের মিছিলে অস্ত্রের ব্যবহার যুক্তিযুক্ত কিনা, সে প্রশ্নের অবকাশ থেকেই গেল।