মেয়ের পড়াশোনার জন্য বরাদ্দ ছিল যে টাকা, তা-ই ছেলের বিয়ের জন্য খরচ করে ফেলেছেন বাবা-মা। এই অভিযোগে নিজের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধেই সরাসরি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এক তরুণী। উচ্চশিক্ষার জন্য ওই টাকা যেন তেন প্রকারে ফেরত পাওয়াই লক্ষ্য তাঁর। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন শুনে নিই।
মেয়েদের পড়াশোনার বিষয়টি অনেক দেশেই বেশ অবহেলিত। যেন ধরেই নেওয়া হয়, পরিবারের জন্য যাবতীয় ত্যাগ স্বীকার করার দায় কেবল মেয়েদেরই। সময় বদলেছে, কিন্তু সমাজের সেই ভাবনায় পুরোপুরি বদল আসেনি এখনও। সম্প্রতি তেমনই প্রমাণ দিল এই ঘটনা। যেখানে মেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য এক আত্মীয়া যে টাকা বরাদ্দ করে গিয়েছিলেন, সেই টাকাই ছেলের বিয়ে উপলক্ষে নির্দ্বিধায় খরচ করে ফেলেছেন বাবা-মা। এমনকি তার জন্য মেয়ের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি তাঁরা। আর সেই ঘটনা জানতে পেরেই রুখে দাঁড়িয়েছেন তরুণী।
আরও শুনুন: গিটার নিয়ে ‘হনুমান চল্লিশা’ পাঠ তরুণদের, ধর্মীয় ‘জ্যামিং’ শুনে মুগ্ধ নেটদুনিয়া
কী ঘটেছে ঠিক?
ওই তরুণী জানিয়েছেন, বেশ কয়েকবছর আগে পরিবারের সব মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে টাকা রেখে গিয়েছিলেন তাঁর ঠাকুমা। মহিলা নিজেও উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন। তাই মারা যাওয়ার আগে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নামে নিজের যাবতীয় সঞ্চয় গচ্ছিত রেখে যান। ঠাকুমা তাঁকে সবসময় উচ্চশিক্ষিত হওয়ার অনুপ্রেরণা দিতেন, এ কথাও জানিয়েছেন ওই তরুণী। তাই সত্যিই যখন উচ্চশিক্ষার জন্য টাকার প্রয়োজন হল, ঠাকুমার সেই রেখে যাওয়া টাকা ব্যবহারের কথা ভাবেন তিনি। কিন্তু ব্যাঙ্কে গিয়ে জানতে পারেন ইতিমধ্যেই সেই টাকা তোলা হয়ে গিয়েছে। অন্য কেউ নয়, টাকা তুলেছেন তাঁরই বাবা-মা। সঙ্গে সঙ্গে তরুণী বাবা-মায়ের কাছে টাকার ব্যাপারে জানতে চান। কিন্তু তাঁরা জানান যে, ওই টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। একে তো তাঁকে না জানিয়েই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে, তার উপরে টাকাটা ঠিক কোন খাতে খরচ হয়েছে তা জানার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তরুণী। আসলে কিছুদিন আগে খুবই রাজকীয় আয়োজনে তাঁর দাদার বিয়ে হয়েছে। তরুণী জানতে পারেন সেই বিয়ের জন্যই তাঁর পড়াশোনার খাতে রাখা টাকা খরচ করে ফেলেছেন তাঁর বাবা-মা। মেয়ের উচ্চশিক্ষার তুলনায় ছেলের আনন্দকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁরা। এমনকি, মেয়ের ব্যক্তিগত পুঁজিতে হাত দেওয়ার আগে তাকে একবার জানানোর পর্যন্ত প্রয়োজন মনে করেননি ওই দম্পতি।
আরও শুনুন: রাহুলের মন্তব্যে বিপাকে কংগ্রেস! হাত-শিবিরের অন্দরেই অসন্তোষ, ফাঁস কিরেণ রিজিজুর
সব শুনে ক্ষুব্ধ হলেও প্রথমে ভালভাবেই ওই টাকা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তরুণী। কারণ এবার উচ্চশিক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি। কিন্তু টাকা তো ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গিয়েছে। যেভাবেই হোক, বাবা-মাকে ওই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেন তরুণী। কিন্তু তাতে বিশেষ কোনও লাভ হয়নি। তাঁরা টাকা তো ফেরত দেনইনি, বরং তরুণীর পরিবারের বাকি সদস্যরাও তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেন। তাই বাধ্য হয়েই আদালতের দারস্থ হয়েছেন ওই তরুণী। একইসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার কথা সোশ্যাল মিডিয়াতেও তুলে ধরেছেন তিনি। এহেন ঘটনা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরাও। তরুণীর এই লড়াইকেই সমর্থন জানিয়েছেন তাঁরা।