স্ত্রী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী। স্বামীও নামী সংস্থার শীর্ষে থাকা বিজ্ঞানী। কিন্তু নামীদামি চাকরির সুযোগসুবিধা ছেড়ে একেবারে উলটো পথে হেঁটেছেন দুজনেই। শিঙাড়া বিক্রি করেই আপাতত জীবিকা উপার্জন করছেন এই দম্পতি। আর সেই উপার্জনের অঙ্ক শুনে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। তাহলে আসুন, শুনে নেওয়া যাক এই ছক ভাঙার গল্প।
সারা দেশ জুড়েই জলখাবার হিসেবে জনপ্রিয় বিভিন্নরকমের শিঙাড়া। ব্যবসার উপকরণ হিসেবে এই মুখরোচক খাবারটিকেই বেছে নিয়েছিলেন নিধি সিং এবং তাঁর স্বামী শিখর বীর সিং। ২০১৬ সালে ‘সামোসা সিং’ নামে একটি দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন তাঁরা। এখন গোটা দেশে ‘সামোসা সিং’-এর ৪০টি শাখা রয়েছে। বাটার চিকেন থেকে কড়াই পনির, অভিনব স্বাদের অজস্র রকমের শিঙাড়া পাওয়া যায় এই ফুড চেনে। স্রেফ শিঙাড়ার ব্যবসা থেকেই বর্তমানে যা আয় করেন এই দম্পতি, তা যে কাউকেই তাক লাগিয়ে দিতে পারে। জানা গিয়েছে, প্রতিদিন তাঁদের আয় ১২ লক্ষ টাকা।
আরও শুনুন: ছকভাঙা পথেই সাফল্য, বাইকে চড়ে ‘স্বাস্থ্যকর’ ফুচকা বিক্রি বি.টেক পাশ তরুণীর
এমনিতে কেরিয়ার নিয়ে ভাবতে বসলে একটা ভাল মাইনের চাকরি, সচ্ছল জীবন, নিজস্ব বাড়ি গাড়ি- সাধারণত এসবের কথাই তো ভাবেন সকলে। কিন্তু এঁরা দুজনে জীবনটাকে দেখতে চেয়েছেন একটু অন্যভাবেই। একা নন, একইসঙ্গে সেই ছকভাঙা পথে হেঁটেছেন যুগলে। তাই মোটা মাইনের চাকরি আর তার সঙ্গে জুড়ে থাকা সম্মান, সুযোগসুবিধাকে নাকচ করেছেন দুজনেই। তার বদলে এমন একটি কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তাঁরা, যে কথা শুনলে অনেকেই নাক সিঁটকাবেন। শিঙাড়ার ব্যবসা শুরু করেছিলেন বেঙ্গালুরু শহরের এই দম্পতি। এমনিতে সাধারণের ধারণা, শিক্ষাগত ডিগ্রি না থাকলেই এমন কাজ করেন কেউ। কিন্তু সেই গতে বাঁধা ধারণাকেই সপাটে উড়িয়ে দিয়েছেন এই যুগল। ঘড়ি ধরে চাকরি না করে নিজেদের ভাল লাগাগুলোকে গুরুত্ব দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। আর সেই কারণেই নিজেদের ইচ্ছেমত ব্যবসার পথে হেঁটেছেন দুজনে।
আরও শুনুন: নগ্ন হয়েই সাফাই করেন ঘরবাড়ি, অভিনব পেশায় লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার তরুণীর
আগে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করতেন নিধি সিং, যেখানে তাঁর বার্ষিক বেতন ছিল ৩০ লক্ষ টাকা। আর তাঁর স্বামী শিখর বীর সিং একটি নামী বায়োটেক সংস্থায় প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করতেন। দুজনের অর্থ সম্পদ, প্রভাব প্রতিপত্তি, কিছুরই কমতি ছিল না, বলাই বাহুল্য। কিন্তু এই নিয়মিত সময় ধরে চাকরি করতে আর ভাল লাগছিল না দুজনের। তাই চাকরি ছেড়ে দেন দুজনেই। নিজেদের ৮০ লাখ টাকা দামের ফ্ল্যাটটিও বিক্রি করে দেন। আর সেই পুঁজি দিয়েই নিজেরা ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুর পথটা ফুল বিছানো ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নেওয়ার ফল মিলেছে। গতে বাঁধা পথে হাঁটার বদলে নিজেদের স্বপ্নকে দাম দিলে যে আদতে ক্ষতি হয় না, সে কথাই প্রমাণ করে দিয়েছেন সিং দম্পতি।