তাঁরা নিজগুণে অনন্যা। না, সাফল্যের বিন্দু স্পর্শ করার যাত্রাপথে কেউ তাঁদের জন্য ফুল বিছিয়ে রাখেননি। বরং পদে পদে ছিল প্রতিকূলতার কাঁটা। তবু আত্মবিশ্বাসে ভর করে তাঁরা পৌঁছেছেন সাফল্যের শীর্ষবিন্দুতে। গতে বাঁধা পথ ছেড়ে নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছেন নিজেদের সফল যাত্রাপথ। আআন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস উপলক্ষে সংবাদ প্রতিদিন শোনো স্যালুট জানায় সেইসব নারীদের। সেরকমই একজন সফল নারী ‘এমএ ইংলিশ চাওয়ালি’ টুকুটুকি দাস। তাঁর সাফল্যের উড়ানের গল্প শুনলেন চৈতালী বক্সী।
তিনি এমএ পাশ। তিনি চা-ও বিক্রি করেন। মানুষের মুখে মুখে ফেরা নামে তিনি হয়ে গিয়েছেন ‘এমএ ইংলিশ চাওয়ালি’। ভাল পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করবে, এই তো সাধারণত মা-বাবার স্বপ্ন থাকে। তাঁর মা-বাবার ইচ্ছাও ছিল সেরকমই। তাঁরা চেয়েছিলেন, মেয়ে শিক্ষিকা হয়ে উঠুক। একসময় টিউশনিও করেছেন। শিক্ষকতার দিকে ঝুঁকে যাওয়া খুব স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তাঁর ঝোঁক ছিল ব্যবসাতে। আর সেই ব্যবসা করেই, বলা ভাল চা বিক্রি করেই সফল হয়ে একেবারে তাল লাগিয়ে দিয়েছেন ‘এমএ ইংলিশ চাওয়ালি’ টুকুটুকি দাস।
আরও শুনুন: Superwoman: মেয়েরাও ছেলেদের মতোই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারে, বার্তা ‘ভাতের হোটেল’-খ্যাত নন্দিনীর
আজ তিনি যেরকম পরিচিতি পেয়েছেন, গোড়ায় তো তা ছিল না। অনেক প্রতিকূলতার সিঁড়ি পেরিয়েই এই জায়গায় পৌঁছেছেন। অল্প পুঁজিতে কীভাবে ব্যবসা করা যায়, তা নিয়েই চলছিল চিন্তাভাবনা। মাথায় ঘুরছিল নানা পরিকল্পনা। সেখান থেকেই আসে চা বিক্রির ভাবনা। কিন্তু মেয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে চা বিক্রি করবে! তা-ও আবার এত পড়াশোনা করে! প্রথমে বাড়ির কেউই তা মানতে পারেননি। পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বন্ধু। অতএব ঝাঁপ দিয়েছিলেন অনিশ্চিতের উদ্দেশে। তারপর অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে এল সাফল্য।
আরও শুনুন: Superwoman: ‘ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করবে সমাজ, দমে গেলে চলবে না’, বার্তা পৌলমীর
অনেকরকম সমস্যাও এসেছে। আউটলেট খোলার পরিকল্পনা একেবারে শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়েছে বার দুয়েক। কিন্তু ভেঙে পড়েননি টুকটুকি। নিজেকে শক্ত করে আবার গুছিয়ে তুলেছেন ব্যবসা। এখন অনেকেই তাঁর কাজে প্রেরণা খুঁজে পান। শুধুমাত্র চাকরির মুখাপেক্ষী না হয়ে, একজন এমএ পাশ তরুণী যে চা বিক্রি করেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারেন, তা তো দেখিয়েই দিয়েছেন টুকুটুকি।
আরও শুনুন: Superwoman: ‘ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করবে সমাজ, দমে গেলে চলবে না’, বার্তা পৌলমীর
আর তাই অন্য সব মেয়েদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা একটাই, নিজের সাফল্যের পথ নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে। অন্যরা ভাববেন না, কেননা ভাবনার দায় তাঁদের নয়। প্রতিবন্ধকতা থাকবে। ঘর থেকে বাইরে বেরনো – সে চাকরি হোক বা ব্যবসার কাজে – মেয়েদের পদে পদে অনেক নিষেধে ডোর কেটেই এগিয়ে যেতে হয়। নিজের মনটাকে সেভাবে তৈরি করতে পারলে, দৃষ্টিভঙ্গিটাকে বদলাতে পারলেই নিজেকে সফল করে তোলা যাবে। নিজের সাফল্য দিয়ে সেই কথাটাই সকলের সামনে তুলে ধরেছেন ”এমএ ইংলিশ চাওয়ালি’ টুকটুকি।