যৌনতায় কেবল শরীরের নয়, ভূমিকা থাকে মনেরও। শারীরিক মিলনের সময় ‘ফিল গুড হরমোন’ ক্ষরণের কারণে মন ভাল হয়, এমনটাই জানান গবেষকেরা। কিন্তু যদি উলটো ঘটনা ঘটে? অর্থাৎ, সঙ্গমের পর আনন্দের বদলে যদি বিষাদ এসে গ্রাস করে কাউকে? তেমনটা হলে কী করণীয়? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
যৌনতা নিয়ে আমাদের মধ্যে যতই ছুঁতমার্গ থাকুক না কেন, এর উপকার অস্বীকার করার উপায় নেই। আধুনিক বিজ্ঞানের মতে, সুখী যৌনজীবনের দৌলতে যেমন স্বাস্থ্য ভাল থাকে, তেমনই মনের উপরেও এর প্রভাব পড়ে ভালরকম। আসলে শারীরিক মিলনের সময় ডোপামিন, এন্ডরফিন ও সেরোটোনিনের মতো হরমোনগুলি ক্ষরিত হয়, বিজ্ঞান যাদের নাম দিয়েছে ‘ফিল গুড হরমোন’। এইসব হরমোন রক্তের সঙ্গে মিশে ব্যথাবেদনা দূর করতে সাহায্য করে। মানসিক ভাবে ভাল থাকার ক্ষেত্রে এই বিশেষ হরমোনগুলির বড় ভূমিকা রয়েছে। তাই ব্যায়ামের সঙ্গে যৌনতাকে জুড়ে দিয়ে চালু হয়েছে ‘সেক্সারসাইজ’ শব্দটি। কিন্তু কথা হচ্ছে, সবসময় যে এমনটাই ঘটবে এমন কোনও কথা নেই। কখনও কখনও ঘটে যেতে পারে একেবারে উলটো ঘটনা, এমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। অর্থাৎ শারীরিক মিলনের পরে উদ্বেগ কমে গিয়ে মানসিক ভাবে হালকা লাগবে না, বরং গ্রাস করবে বিষাদ। যদিও এমন ঘটনা বিরল, তবে জানা গিয়েছে, একাধিক মানুষের ক্ষেত্রে যৌনতার পরে ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, অস্থিরতা কিংবা বিরক্তি প্রকাশ পেতে দেখা গিয়েছে। গবেষকেরা এই বিশেষ পরিস্থিতির নাম দিয়েছেন ‘পোস্ট-কয়টাল ডিসফোরিয়া’। একে এক ধরনের বিরল মনস্তাত্ত্বিক ডিসঅর্ডার বলেই চিহ্নিত করেছেন তাঁরা। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, পুরুষের তুলনায় মেয়েরাই এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হন বলে দেখা গিয়েছে।
আরও শুনুন: নরম পানীয় ক্ষতিকর নয়, বরং এতে চাঙ্গা হবে পুরুষের যৌন স্বাস্থ্য, দাবি সমীক্ষায়
কেন ঘটে এমন অসংগতি? তার কোনও স্পষ্ট উত্তর এখনও অব্দি খুঁজে পাননি গবেষকেরা। কিন্তু এর সঙ্গে যৌনতায় অতৃপ্তির কোনও যোগ নেই। ২০১৫ সালের এক গবেষণা জানাচ্ছে, যৌন অভিজ্ঞতা সুখকর হওয়ার পরেও এমন অস্বস্তি দেখা দিতে পারে কারও কারও মধ্যে।
আরও শুনুন: Audio Blog: ঘড়িতেই প্রেশার-সুগার মাপছেন! প্রযুক্তিতে ভরসা করে হিতে বিপরীত হচ্ছে না তো?
কিন্তু কীভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব? চিকিৎসকদের মতে, যৌনতার পরে যদি কেউ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, কিংবা বিরক্ত, সেক্ষেত্রে তাঁর মন শান্ত করাটাই প্রাথমিক কাজ। তার জন্য জল খাওয়া, আস্তে আস্তে নিশ্বাস নেওয়া, সামনে থাকা কয়েকটি জিনিসের নাম বলা, এমন বিভিন্ন ধরনের মাইন্ড গেমের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি তাঁর নিজেকে নিরাপদ মনে হচ্ছে কি না, সেই মুহূর্তে কী প্রয়োজন, তা জিজ্ঞেস করাও জরুরি। আর কারও সঙ্গীর ক্ষেত্রে যদি এমনটা ঘটে, সেখানে অন্যজনকে শান্তভাবে তাঁর পাশে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে কেউ সেই মুহূর্তে সঙ্গ চাইছেন, নাকি একা থাকতে চাইছেন, সে কথাও বুঝে নিতে হবে। তবে এই সমস্যার বাড়াবাড়ি হলে কোনও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের থেকে পরামর্শ নেওয়াই উচিত। কোনোরকম ছুঁতমার্গ না রেখে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় সাহায্য নিলে তবেই এই ডিসঅর্ডার কাটিয়ে ফেলা সম্ভব, এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকেরা।