মেয়েদের স্বাভাবিক চলাফেরার পথে বাধার দেওয়াল তুলে দিতে সবসময়েই তৎপর ইরান। এবার সেই বাধার জের গড়াল মেয়েদের পড়াশোনার ক্ষেত্রেও। মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে বিষপ্রয়োগ করা হচ্ছে ইরানে, সম্প্রতি উঠেছে এমনই অভিযোগ। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
হিজাব বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের নয়া বিতর্ক উসকে উঠল ইরানে। সে দেশের একাধিক ছাত্রীর শরীরে মিলল বিষক্রিয়ার প্রমাণ। মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়ার জন্যই এহেন কাণ্ড ঘটিয়েছে কেউ বা কারা, এমনটাই সন্দেহ করা হচ্ছে। এমনকি ইচ্ছাকৃতভাবেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে মেনে নিয়েছে সে দেশের প্রশাসনও। মেয়েদের স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়ার জন্যই এই কৌশল করা হয়েছে বলে মত ইরানের উপস্বাস্থ্যমন্ত্রীর।
আরও শুনুন: সংস্কৃত থেকেই এসেছে ‘আল্লাহ্’ শব্দটি, দাবি বেনারসের শঙ্করাচার্যের
২০২২ সালের নভেম্বর থেকেই এমন একাধিক ঘটনা সামনে আসতে শুরু করে। জানা গিয়েছে, ইরানের কওম শহরে একাধিক ছাত্রীর শরীরে বিষক্রিয়ার প্রমাণ মিলেছে। অনেককে ভরতি করানো হয়েছে হাসপাতালেও। এ ছাড়া অন্যান্য কয়েকটি শহরেও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে খবর। সম্প্রতি বিষক্রিয়ায় ভুগতে থাকা ছাত্রীদের অভিভাবকেরা স্কুলগুলির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান। কেন একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তার জবাব চাইতে থাকেন তাঁরা। আর এরপরেই নড়েচড়ে বসে দেশের প্রশাসন। ইরানের শিক্ষা মন্ত্রক গোটা বিষয়ের তদন্ত করছে বলে জানা গিয়েছে। কারা এই কাজ করে থাকতে পারে তা নিয়ে কোনও খবর পাওয়া জায়নি এখনও। তবে ইরানের উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে এই কাজ করা হয়েছে। মেয়েদের স্কুল বন্ধ করা, অর্থাৎ প্রকারান্তরে মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়াই এই আততায়ীদের লক্ষ্য বলে মনে করছেন তিনি।
আরও শুনুন: সংখ্যায় বাড়ছে বিশেষ এক ধর্মের ‘বেআইনি ধর্মস্থান’, মুম্বইতে প্রতিবাদ মিছিল হিন্দুত্ববাদীদের
মেয়েদের উপরে পোশাকবিধি চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে সম্প্রতি মেয়েদের বেনজির বিক্ষোভ দেখেছে ইরান। তবে এই প্রথমবার নয়। ধর্মীয় নেতাদের হাতে ইরানের শাসনভার যাওয়ার পর থেকেই মেয়েদের চলাফেরা, কাজকর্মের উপর নেমে এসেছে নানারকম নিষেধাজ্ঞা। এক কথায় মেয়েদের সহজ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকাটাই সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছে সেখানে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই হিজাব না পরার অপরাধে ইরানের নীতিপুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মাহসা আমিনি, এবং তারপর হেফাজতেই তাঁর মৃত্যু হয়। এরপরেই ইসলামি রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে পথে নামেন ইরানের মেয়েরা। পালটা কঠোর দমননীতি নিয়েছিল ইরান সরকারও। বিক্ষোভ দমন করতে ব্যাপক ধরপাকড়, অত্যাচার, গুলিচালনা, সবকিছুই চলেছিল ইরানে। হিজাব বিতর্কের আবহেই ছাত্রীদের উপর বিষ প্রয়োগ করার ঘটনায় তাই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকেই।