বন্ধুরা বন্ধুদের কাছে অকপট। আর সেই সূত্রেই উঠে আসে এমন কথা, যা হয়তো সহজে বলা যায় না। সেরকমই অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহকে এক বন্ধু বলেই দিয়েছিলেন যে, অভিনেতা যে সম্প্রদায়ভুক্ত, সেই সম্প্রদায়ের কোনও মানুষই ভারতে বসবাসের যোগ্য নয়। সেই বন্ধুর সঙ্গে কি সম্পর্ক রেখেছিলেন অভিনেতা? আসুন শুনে নিই।
ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ। সেই তিনিই নাকি ভারতে বসবাসের যোগ্য নন। শুধু তিনি একা নন, তিনি যে সম্প্রদায়ভুক্ত, সেই সম্প্রদায়ের সকল মানুষ সম্পর্কেই এমন মত পোষণ করেছিলেন, তাঁরই বন্ধুরা। আজও সেই কথা ভুলতে পারেননি তিনি।
আরও শুনুন: ‘ভারতে বিতর্কিত কথা বলতে ভয় পাই না, পাকিস্তানে ভয় কীসের?’ সাফ জানালেন জাভেদ আখতার
শুধু তুখড় অভিনেতাই তিনি নন, নাসিরুদ্দিন শাহ্ রাজনৈতিক ভাবেও সচেতন। ধর্মসূত্রে দেশ জুড়ে ঘৃণা ছড়িয়ে পড়া নিয়ে বহুবারই মুখ খুলেছেন তিনি। তা নিয়ে বিদ্ধ হয়েছেন সমালোচনাতেও। কিন্তু একজন সচেতন সৃষ্টিশীল মানুষ হিসাবে এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ না করে তিনি পারেননি। আর সেই নিরিখেই তিনি সম্প্রতি শুনিয়েছেন এক পুরনো গল্প। তাঁরই বন্ধুদের গল্প। যে বন্ধুরা অভিনেতাকে বলেছিলেন, যে, অভিনেতা যে সম্প্রদায়ভুক্ত, সেই সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতবর্ষের মতো দেশে থাকার যোগ্য নয়। এই মন্তব্য কি সম্পর্কে তিক্ততা বয়ে এনেছিল? অভিনেতা জানাচ্ছেন, না তা হয়নি। বন্ধুদের সঙ্গে বা যাঁরা যাঁরা এমন মত পোষণ করেন, তাঁদের সঙ্গে বন্ধুতায় ইতি টানেননি তিনি। কেননা, এই মতামতকে তিনি ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসাবে দেখেননি। বরং তাঁর মত, রাজনৈতিক প্রেক্ষিত থেকেই এরকম মন্তব্য উঠে আসে। আর যাঁরা তা করেন, তাঁরা আসলে সংখ্যাগুরুর দিকে বা জয়ী পক্ষে থাকতে চান।
আরও শুনুন: সংস্কৃত থেকেই এসেছে ‘আল্লাহ্’ শব্দটি, দাবি বেনারসের শঙ্করাচার্যের
এই যে সম্প্রদায়গত বিভাজন, সেই প্রেক্ষিতে অভিনেতা মনে করেন যে, তিনি নির্দিষ্ট কোনও সম্প্রদায়ভুক্তই নন। কেননা ধর্মের এই নির্দিষ্ট ধারনায় তাঁর বিশ্বাস নেই। বরং তিনি বিশ্বাস করেন, মানুষের অন্তর্নিহিত যে শুভবোধ, তার উপরেই। তিনি বলেন যে, ধর্মের ধারনায় যাঁরা বিশ্বাস করেন না, তাঁরা আজ সত্যিই সংখ্যালঘু। তবে কারও বিশ্বাস নিয়ে অযথা কোনও তর্কেও যেতে চান না তিনি। জাতীয়তাবাদ বা দেশপ্রেম নিয়ে এই মুহূর্তে বিভিন্ন মহলে বহুবিধ চর্চা। অভিনেতা সবই জানেন। এমনকী তাঁর বন্ধুদের অনেকের ভাবনাও তাঁর কাছে স্পষ্ট। তবে তাঁর সাফ কথা, দেশপ্রেম তো প্রমাণ করার জিনিস নয়, আর তিনি তা করতেও চান না। দেশের প্রতি তাঁর ভালোবাসা নিয়ে যদি কেউ সন্দিহান হয়ে থাকেন, তবে তা হতেই পারেন। তিনি তাঁদের বোঝাতে যাবেন না। একজন সৃজনশীল মানুষ হিসাবে তিনি শুধু একটি বিষয়েই নজর দিতে চান। এমন কাজ করে যাওয়া যা সংবেদনশীলতাকে আহত না করে। দেশ-কাল সম্পর্কে সচেতন একজন অভিনেতা হিসাবে এটাই তাঁর সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ।