শাস্ত্রে বলে, দান করা মহৎ কাজ। কিন্তু যার নিজেরই পেট চলে অন্যের অনুদানে, তিনি আর কী-ই বা দান করবেন! তবে এই ধারণাকেই এবার ভেঙে দিলেন এক ভিক্ষাজীবী বৃদ্ধ। ভিক্ষা করে জমানো সর্বস্বই কোভিড তহবিলে দান করে দিয়েছেন তিনি। এই বেনজির ঘটনায় হতবাক সকলেই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
পরিস্থিতির চাপে বেছে নিতে হয়েছে ভিক্ষাবৃত্তির পথ। একার সংসার চলে যায় কোনও মতে। নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য কোনোরকম খরচ না করে তিল তিল করে জমিয়েছেন ৫০ লক্ষ টাকা। আর দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষা করে জমানো সেই টাকার পুরোটাই এই ব্যক্তি দান করেছেন সরকারি তহবিলে। করোনা মহামারীর পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে সরকারি দপ্তরে টাকা দান করে এসেছেন তিনি।
আরও শুনুন: মন্দির মেরামতিতে ১১ লক্ষ টাকা অনুদান মুসলিমদের, সম্প্রীতির নজির গুজরাটের গ্রামে
কথা হচ্ছে তামিলনাড়ুর পুলপান্দিয়ানকে নিয়ে। ৭২ বছরের এই বৃদ্ধের জীবিকা বলতে ভিক্ষাবৃত্তি। অন্যের সাহায্য দিয়েই দিন কাটে তাঁর। রয়েছে দুই ছেলে। কিন্তু তাঁদের কেউই পুলপান্দিয়ানের খেয়াল রাখে না। তাঁর স্ত্রী-ও মারা গিয়েছেন বছর ২৪ আগে। তাই নিজের মতোই এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে দিন কাটে তাঁর। একার সংসারে খরচ করেন না তেমন কিছুই। ভিক্ষা করে যা পেতেন তার বেশিরভাগটাই জমিয়ে রাখতেন তিনি। এভাবেই জমিয়েছিলেন প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। কিন্তু তার এতটুকু খরচ করেননি নিজের জন্য। ওই বৃদ্ধ জানিয়েছেন, ২০২০ সালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর আয়োজিত করোনা ত্রাণ তহবিলে সর্বপ্রথম ১০ হাজার টাকা দান করেন তিনি। এরপর থেকে সে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি দেখে সরকারি অফিসে দান করে আসতেন তিনি। শুধুমাত্র ত্রাণ তহবিল নয়, শ্রীলঙ্কার তামিলদের সাহায্য করতে এবং বিভিন্ন বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্যও টাকা দিয়েছেন তিনি। সমাজসেবার জন্য ২০২০ সালে তামিলনাড়ু সরকারের তরফেও সম্মানিত করা হয়েছে তাঁকে।
আরও শুনুন: যিনি মা, তিনিই ঠাকুমা! দৃষ্টান্ত গড়ে বউমার সন্তান গর্ভে ধারণ শাশুড়ির
যদিও প্রথম থেকেই তাঁর এমন অবস্থা ছিল না। কাজের সুবাদে তামিলনাড়ু ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন মুম্বই। নিজের রোজগারের টাকায় মানুষ করেছেন দুই ছেলেকে। তাঁদের দুজনেরই রয়েছে আলাদা সংসার। কিন্তু সমস্যার শুরু তাঁর স্ত্রী-র মারা যাওয়ার পর থেকেই। নিজেদের আলাদা সংসার হওয়ার পর বাবার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে তাঁর দুই ছেলেই। উপায় না দেখে বাধ্য হয়েই তামিলনাড়ু ফিরে এসে ভিক্ষা করতে আরম্ভ করেন পুলপান্দিয়ান। সেই থেকেই একা একা দিন কাটছে তাঁর। তবে নিজের জীবনে যিনি কাউকেই পাশে পাননি, তিনিই অন্যান্য দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে গড়েছেন এক অনন্য নজির। নিজের জমানো টাকার সর্বস্ব স্বেচ্ছায় দান করে দিয়ে এই বৃদ্ধ বুঝিয়ে দিয়েছেন, আসলে সাধ্য নয়, সাধ থাকলেই মানুষের হাত ধরা যায় সহজেই।