পর্দায় নায়িকাদের শরীরী বিভঙ্গ দর্শককে বুঁদ করে। আবার সেই দর্শকই নায়িকাদের শরীরী ভাষা নিয়ে তোলে অশ্লীলতার অভিযোগ। উত্তাল হয় জনসমাজ, সমালোচনায় বিদ্ধ হন নায়িকারা। কিন্তু দোষ কি তাঁদের? জনরুচি মেপে পরিচালকরাই কি তাঁদের এভাবে সামনে আনেন না! সেই জনরুচির দায় তো দর্শকদেরই। তাহলে অশ্লীলতার অভিযোগে কেন রক্তক্ষরণের যন্ত্রণা পোহাতে হয় শুধু নায়িকাদের? উত্তর সন্ধানে চৈতালী বক্সী।
নিজেদের শরীরকেই বহুবার ভেঙে আবার নতুন নতুন চরিত্রের জন্য তৈরি করতে হয়, নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় নায়িকাদের। শরীরকে তাঁদের কাছে মন্দির ও রুজিরুটির সংস্থান। ঠিক যেমন দর্জির কাছে তাঁর কাঁচি, লেখকের কাছে তাঁর কলম। নায়িকাদেরদের কাছে তাঁদের শরীরও তা-ই। আবার অন্যদের থেকে আলাদাও। কেন আলাদা? কারণ তাঁদের শরীর নিজের, তাঁর যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিজের কিন্তু তাঁকে কাজ করতে হয় অন্যের কথামতো। সিনেমা জগতে একটা শব্দবন্ধ প্রায়ই শোনা যায়, ‘ডিইরেক্টর’স অ্যাক্টর’। অর্থাৎ পরিচালক, ছবির প্রয়োজনে তাঁর চরিত্রদের যেমন পোশাক, মেক-আপে সাজাতে চাইবেন, সেইভাবেই সাজতে হবে অভিনেতাদের। সেখানে শালীনতা বা অশ্লীলতার কোনও প্রশ্নই আসতে পারে না। যে বাচনভঙ্গি, যে শরীরীভাষা, পরিচালক তাঁদের থেকে চাইবেন তাঁদের সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সেইরকমই কোনও সিনেমার প্রয়োজনে পরিচালকের নির্দেশে দীপিকা মেদহীন শরীরে ‘বেসরম’ নাচেন, নোরা ফতেহির ‘গরমি’, রাধিকা আপ্টেকে প্রায় নিরাবরণ হতে হয়, আর ‘আরবান মড গার্ল’ জিনাত আমন হয়ে যান সত্যম শিবম সুন্দরমের, ঘাগরা-চোলির হট ডাস্কি রুপা। আরও একটু এগোলেই, সিনেমার সাদা-কালো থেকে রঙিন যুগের ক্যাবারে কুইন হেলেনকেও পেয়ে যাব আমরা। শিল্পীর চোখে তাঁর নিজের এই কাজ কেমন? সদ্য সেটা নিয়েই ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী জিনাত আমন। বলেছেন, ‘অশ্লীলতার অভিযোগ উঠলেই আমি বেশ মজা পাই। কারণ আমি কখনও মানুষের শরীরে অশ্লীল কিছু খুঁজে পাইনি।’
আরও শুনুন: Audio Blog: সোনু নিগমের উপর ‘আক্রমণ’, সেলফির অসুখ কি মরিয়া করে তুলেছে মানুষকে?
সিনেমার জন্য শিল্পীর নিজেকে উন্মুক্ত করাটা তো শিল্পের প্রয়োজনেই। সিনেমার জগতে বিশ্ব জুড়ে শিল্পীরা সেটাই করে চলেছেন। কিন্তু অনেক মানুষ সেটা বোঝেন না, বা বুঝতে চান না। সেই প্রেক্ষিতেই অভিনেত্রী রাধিকা আপ্টের মত, যাঁরা নিজেদের শরীর নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন, তাঁরাই অন্যের খোলা শরীরের দিকে বাঁকা মন্তব্য ছুঁড়ে দেন। আশা করি এরপর নায়িকাদের খোলামেলা পোশাক দেখলে এই কথাটা অন্তত একবার মাথায় আসবে। অভিনেত্রীদেরই কি আমরা কেবল অভিযোগের কাঠগড়ায় তুলব! শুধু শরীর শরীর, তোমার মন নাই জনরুচি!