সময় যতই এগোক, ঋতু নিয়ে ছুঁতমার্গ কিন্তু রয়েই গিয়েছে এখনও। আর সেইসব ট্যাবুর বোধহয় কোনও ভৌগোলিক গণ্ডিও নেই। সে কথাই ফের বুঝিয়ে দিল এই ঘটনা। পোশাকে ঋতুরক্তের দাগ থাকায় অধিবেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল এক সাংসদকে। কোথায় ঘটেছে এই ঘটনা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিজ্ঞাপনে যতই বলা হোক না কেন, ‘দাগ আচ্ছে হ্যায়’, সব দাগ যে ভাল নয় সে কথা হাড়ে হাড়ে জানেন মেয়েরা। বলা ভাল, এ কথা তাঁদের পইপই করে শিখিয়ে দিয়েছে সমাজ। বুঝতেই পারছেন, বলতে চাইছি ঋতুচক্র অর্থাৎ পিরিয়ডসের কথা। একে তো এই সময়ে শারীরিক যন্ত্রণা আর মুড স্যুইংয়ের জেরে মেয়েদের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ে, তার উপরে বাড়তি চিন্তা, পোশাকে যদি দাগ লেগে যায়! লোকে কী বলবে! কিশোরীবেলা থেকে বড় বয়স পর্যন্ত এই টেনশন মেয়েদের পিছু ছাড়ে না। আর ঠিক এই ট্যাবুকেই ভাঙতে চেয়েছিলেন কেনিয়ার এক সেনেটর গ্লোরিয়া ওরওবা। তাই পোশাকে ঋতুরক্তের দাগ লালেও সেই পোশাক নিয়েই সংসদে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে। পিরিয়ডস নিয়ে আসলে ঠিক কতখানি সংস্কার জমে রয়েছে মানুষের মনে, সে কথাই আরও একবার প্রকাশ্যে নিয়ে এল এই ঘটনা।
আরও শুনুন: ঋতুকালীন ছুটি হোক নারীর মৌলিক অধিকার, লক্ষ্যে অনেকটাই এগোল দেশ
কী ঘটেছে ঠিক?
জানা গিয়েছে, কেনিয়ার সংসদের একজন সদস্য ওই মহিলা। সম্প্রতি সেনেটে এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। যদিও সেখানকার পোশাকবিধি মেনে ফর্মাল স্যুট পরে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু পোশাকে অসংগতি রয়েছে এই দাবি করেই তাঁকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। আর সেই অসংগতি আসলে আর কিছুই নয়, ঋতুরক্তের দাগ। ওই মহিলা জানিয়েছেন, তিনি সংসদে উপস্থিত হওয়ার পরেই এক কর্মী দৌড়ে এসে জানায়, তাঁর পোশাকে রক্তের দাগ লেগেছে। কিন্তু গ্লোরিয়ার বক্তব্য, ঋতুমতী হওয়া কোনও অপরাধ নয় যে তাঁকে ফিরে যেতে হবে। তাই নিজের গন্তব্যে রওনা দেন তিনি। তা ছাড়া বরাবরই ঋতু বিষয়ক ট্যাবু নিয়ে সরব গ্লোরিয়া। তাই নিজের কাজ আর কথার ফারাক রাখতেও তিনি চাননি।
আরও শুনুন: ৯ বছরে বিয়ে, স্বামীর হাতে ধর্ষণের শিকার… তবুও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মুখ নুজুদ আলি
যদিও ফল হয়েছে উলটো। এক পুরুষ সেনেটরের বক্তব্য, তাঁর স্ত্রী-কন্যাও ঋতুমতী হন। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে ঢ্যারা পেটানোর কোনও প্রয়োজন নেই। গ্লোরিয়ার আচরণকে গোটা সংসদের পক্ষে অপমানজনক বলে মনে করছেন তিনি। যদিও গ্লোরিয়া মনে করেন, ঋতু যে কোনও আলাদা বিষয় নয়, তাতে গোপন করারও কিছু নেই, এ কথা বোঝাতেই এই ইস্যু নিয়ে কথা বলা জরুরি। তাই ওই পোশাকেই সংসদের বাইরে দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। এমনকি স্থানীয় একটি স্কুলে ছাত্রীদের স্যানিটারি প্যাড বিতরণ করেছেন ওইভাবেই। পিরিয়ডস নিয়ে লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু নেই, নিজের কাজের মাধ্যমে সেই বার্তাই দিয়েছেন ওই মহিলা।