ধর্মের দোহাই দিয়ে ফের নয়া ফতোয়া জারি করল তালিবান। তাদের নতুন দাবি, গর্ভনিরোধক নেওয়া ধর্মবিরুদ্ধ। শরিয়ত মোতাবেক এ জিনিস নাকি ‘হারাম’। তাই আফগানিস্তানে গর্ভনিরোধক বড়ি বিক্রি করাই বন্ধ করে দিল তালিবান সরকার। ঠিক কী বলেছে তারা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর থেকেই নেমে আসছিল একের পর এক নারীবিরোধী ফতোয়া। কুড়ি বছর আগেকার মতোই। সেই তালিকায় ফের নতুন সংযোজন। শরিয়ত আইনের দোহাই দিয়ে সে দেশে বন্ধ করা হল গর্ভনিরোধক বিক্রি। অসুস্থ মহিলাদের পুরুষ ডাক্তারের কাছে যাওয়া আগেই বন্ধ করেছিল তালিবানরা। এবার এই নতুন ফতোয়া জারি করে তাদের আরও কঠিন শিকলে বেঁধে দিল তালিবান সরকার।
আরও শুনুন: মানুষ নয় তাতে কী! এবার ‘মহিলা ম্যানিকিন’-এর মুখ ঢাকার ফতোয়া তালিবানদের
তালিবান শাসনে কী অবস্থা হবে আফগানভূমের মহিলাদের, তা নিয়ে এখনও উদ্বিগ্ন স্বর শোনা যায় আন্তর্জাতিক মহলে। একাধিকবার এ প্রসঙ্গে আশঙ্কিত বক্তব্য রেখেছেন তালিবানি হামলার শিকার, বিশ্বের কনিষ্ঠতম নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই। তবু লাভের লাভ কিছু হয়নি বললেই চলে। বরং নিজেদের অস্তিত্ব আরও প্রকট ভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে তালিবানরা। ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। এর বাইরে অন্য কোনও মানবিক প্রবৃত্তি বা গুণ, শিল্প-সঙ্গীত-কাব্য- কোনও কিছুরই কোনও গুরুত্ব তাদের কাছে আদৌ নেই। কখনও শিল্পচর্চা বন্ধ করার ফতোয়া, কখনও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের নির্দেশ, সব মিলিয়ে তালিবান শাসন যে সবরকম ভাবে একজনের মানবিক অধিকার কেড়ে নিতে পারে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বরাবরই নিয়মের বেড়াজালে বেশি করে বাঁধা হয়েছে মেয়েদের। গর্ভনিরোধকের বিক্রি বন্ধও অন্তত তেমনটাই নির্দেশ করে। ইতিমধ্যেই সরকারি ফতোয়া মেনে কাবুল সহ একাধিক প্রদেশে গর্ভনিরোধক বিক্রি সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ এই জিনিস নিয়ে শুরু হয়েছে কালোবাজারিও। এমনিতেই নিয়ম ছিল, ৩৫ ঊর্ধ্ব মহিলারাই গর্ভনিরোধক পেতে পারেন। সেক্ষেত্রেও শর্ত ছিল, মহিলার অবশ্যই এক বা একাধিক সন্তান থাকতে হবে। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী দেশের কোনও মহিলাই আর বৈধভাবে গর্ভনিরোধক কিনতে পারবেন না।
আরও শুনুন: টেলিভিশনের পর্দায় এলে ঢাকতেই হবে মুখ, আফগান মেয়েদের ‘চূড়ান্ত’ নির্দেশ দিল তালিবান
এই নিয়ম প্রকাশ্যে আসার পরই ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। দেশের প্রাক্তন এক মন্ত্রীও এই পদক্ষেপের নিন্দায় সরব হয়েছেন। তিনি সরাসরি জানিয়েছেন, গর্ভনিরোধক ব্যবহার মেয়েদের মানবাধিকারের মধ্যে পড়ে। তাই তা কেড়ে নেওয়া একেবারেই অনুচিত। কিন্তু এইসব নৈতিকতার কথায় যে আমল দিতে রাজি নয় তালিবান, তা আরও একবার স্পষ্ট করে দিল তারা।