সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে বাল্য বিবাহ। কোনওভাবেই এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের বরদাস্ত করা হবে না। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার এমন ঘোষণার পরই আসাম জুড়ে ধরপাকড় শুরু করে গ্রেপ্তার করা হল ১৮০০ জনকে। শুনে নেওয়া যাক।
বয়স ১৮ ছোঁয়ার আগেই বিয়ে। কখনও আবার ২১ হওয়ার আগেই মালাবদল। বাল্যবিবাহ রুখতে যতই আইন আসুক, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই কুপ্রথাকে এখনও পুরোপুরি মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি। আর সেই তালিকাতেই রয়েছে অসম। সে রাজ্যে বাল্যবিবাহের বাড়বাড়ন্ত রুখতে এবার কড়া পদক্ষেপ করল প্রশাসন। সম্প্রতি এই ঘটনায় যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। মুখ্যমন্ত্রীর এহেন হুঁশিয়ারির পরই রাজ্য জুড়ে বাল্যবিবাহ আইন ভাঙার অভিযোগে ১৮০০ জনকে গ্রেপ্তার করল অসম পুলিশ।
আরও শুনুন: মাতৃগর্ভ কি ‘চাষের জমি’! জনসংখ্যা নিয়ে মুসলিম নেতাকে তুলোধোনা অসমের মুখ্যমন্ত্রীর
সম্প্রতি নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই তথ্যই প্রকাশ করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। সেখানে তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, রাজ্য জুড়ে চলতে থাকা এই অপরাধ দমনের জন্য পুলিশকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করতে বলেছিলেন তিনি। অর্থাৎ কোথাও কাউকে এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেখলেই যেন ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। একইসঙ্গে কাউকে এই অপরাধে মদত দিতে দেখলেও যেন কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেই বিষয়েও সাফ নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। আর সেই মতোই বাল্যবিবাহের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১৮০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সে রাজ্যের পুলিশ। সূত্রের খবর, গত পনেরো দিনেরও কম সময়ে রাজ্য জুড়ে ৪ হাজারেরও বেশি বাল্যবিবাহের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল।
জানা গিয়েছে, রাজধানী গুয়াহাটি সংলগ্ন বেশ কিছু অঞ্চল থেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে সিংহভাগ অপরাধী। একইসঙ্গে তালিকায় রয়েছে ময়রাবাড়ি, মাজুলি, ধুবরি সহ একাধিক জেলার মানুষ। এরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনওভাবে বাল্যবিবাহের সঙ্গে যুক্ত। এদের মধ্যে যারা ১৪ বছরের কমবয়সি মেয়েদের বিয়ে দিয়েছে বা সেই কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকেছে, তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী পকসো আইনে মামলা রুজু করা হবে বলেই জানিয়েছে সে রাজ্যের প্রশাসন। অন্যদিকে যে পুরুষরা ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বিয়ে করবে, তাদের বিরুদ্ধেও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করা হবে। শুধু তাই-ই নয়, যে সব মন্দির কর্তৃপক্ষ বা পুরোহিত এইসব বিয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও শুনুন: ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কোনও ধর্মগুরু ‘পরমাত্মা’ নন, অনুকূলচন্দ্রকে নিয়ে আবেদন খারিজ শীর্ষ আদালতের
শ-দুয়েক বছর আগে থেকেই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সরব হয়ে আসছেন একাধিক মানুষ। তা সত্ত্বেও এখনও এই কুপ্রথার কোপে পড়ে বরবাদ হয়ে যায় অসংখ্য মেয়ের জীবন। কেবল প্রশাসনের পদক্ষেপ নয়, এই প্রথা রুখতে প্রয়োজন আমজনতার সচেতনতাও, এই ঘটনায় ফের সে কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে ওয়াকিবহাল মহল।