মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি নেই কোনও দলিতের। ৮০ বছর ধরে জগদ্দল পাথরের মতো দাঁড়িয়ে ছিল এই নিষেধের বেড়া। সেই সামাজিক বাধা সরিয়ে এবার তামিলনাড়ুর এই মন্দিরে গিয়ে পুজো সারলেন ৩০০ জন দলিত। কার্যত ঐতিহাসিক এক নজির গড়লেন তাঁরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মন্দির আর বিগ্রহ গড়ার কাজ নিম্নবর্ণের মানুষদের ছাড়া হওয়ার জো নেই। কারণ সেই নির্মাণের কৌশল জানে কেবল তারাই। অথচ সেই মন্দিরেই প্রবেশের অধিকার নেই তাদের। এমনই এক গল্প শুনিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তাঁর ‘প্রথম পূজা’ কবিতায়। তেমনটাই যেন ফের ঘটতে দেখা গেল তামিলনাড়ুর এই মন্দিরে। ২০০ বছরের পুরনো এই মন্দির। কিন্তু বিগত ৮০ বছর ধরেই সেখানে কোনও দলিতের প্রবেশের অধিকার ছিল না। মন্দিরে পুজো দেওয়া তো দূর, দেবমূর্তিকে কোনও দিন দেখারই সুযোগ মেলেনি তাঁদের। আসলে সময় যতই বদলাক, দেশের বুক থেকে জাতপাতের ভিত্তিতে ভেদাভেদের ছবিটি যে পুরোপুরি মুছে যায়নি, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যতই আইন পাশ হোক, তথাকথিত উচ্চবর্ণের অবদমনের হাত থেকে সম্পূর্ণভাবে রেহাই মেলেনি এ দেশের দলিত সম্প্রদায়ের। বিশেষ করে ধর্মের নাম করে কতশত বিধিনিষেধ যে তাদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার আর ইয়ত্তা নেই। ঠিক তেমনটাই ঘটেছিল তামিলনাড়ুর এই মন্দিরে। কিন্তু এবার মানুষের হাত ধরেই মুছে গেল সেই বাধা। সামাজিক নিষেধের বেড়া পেরিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করলেন, পুজোও দিলেন প্রায় শ-তিনেক দলিত মানুষ। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই এক ঐতিহাসিক নজির গড়লেন তাঁরা।
আরও শুনুন: উপনয়ন স্পেশাল ‘ব্রাহ্মণ কুকিজ’ আনল বেকারি সংস্থা, দেখেই খাপ্পা নেটিজেনরা
তামিলনাড়ুর তিরুভান্নামালাই জেলায় সম্প্রতি ঘটেছে এই যুগান্তকারী ঘটনা। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেই মন্দিরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ওই মানুষেরা। তাঁদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বহাল ছিল পুলিশ বাহিনীও। ফুল, মালা, চন্দন নিয়ে মন্দিরে গিয়েছেন দলিত মেয়েরা। এমনকি পোঙ্গল বানাবার উপকরণও নিয়ে গিয়েছেন কেউ কেউ। মন্দিরের দেবীকে প্রথমবার দর্শন করার সুযোগ পাওয়া যেন এক স্বপ্ন পূরণের মতো, এমনটাই মনে করছেন তাঁরা। গোমতী নামের এক কলেজপড়ুয়ার মতে, সকলের জন্যই প্রতিদিন এই সমানাধিকার বজায় থাকা উচিত। শুধু মন্দিরেই নয়, ওই অঞ্চলের খাবারের দোকান, এমনকি চুল-দাড়ি কাটার জন্য নাপিতের কাছেও যেতে পারেন না দলিতরা, উঠে এসেছে এই অভিযোগও।
আরও শুনুন: বাবা পাকিস্তানি আর মা বাংলাদেশি, সন্তানের নাম তবু রাখতেই হল ‘ইন্ডিয়া’, নেপথ্যে কী কারণ?
যদিও দলিতদের মন্দিরে প্রবেশের এই ঘটনাকে সকলেই যে ভালভাবে মেনে নিয়েছেন এমনটা নয়। তথাকথিত উচ্চবর্ণের অনেকেই এ ঘটনার প্রতিবাদে সুর চড়িয়েছেন। কিন্তু সেই বিক্ষোভকে আমল দিতে নারাজ স্থানীয় প্রশাসন। কোনও মানুষকেই যে এভাবে অস্পৃশ্য করে রাখা যায় না, সে কথাই ভেবেই এই উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। আর সময় পালটানোর সঙ্গে সঙ্গে সকলের মানসিকতাও পালটানো উচিত বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা।