কেন্দ্রের নাম বদলের রাজনীতিতে নয়া সংযোজন। রাষ্ট্রপতি ভবনের ঐতিহ্যববাহী ‘মুঘল গার্ডেন্স’ এবার থেকে ‘অমৃত উদ্যান’। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিরোধী শিবির। কী বললেন তাঁরা? আসুন শুনে নিই।
‘মুঘল গার্ডেন্স’-এর নাম বদলে হয়েছে ‘অমৃত উদ্যান’। এবার কি তবে মোগলাই পরোটার নাম বদলের পালা! জনপ্রিয় এই খাবারের নাম কবে ‘স্বর্গলোক অথবা ইন্দ্রোলোক পরোটা’ হয়, এখন তারই অপেক্ষায়! কেন্দ্রের নাম-বদলের রাজনীতিকে একহাত নিয়ে এই টুইটই করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার। নাম বদলের থেকেও বেকারত্ব এবং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে যে সরকারের জোর দেওয়া উচিত, তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন।
Waiting for Mughlai Paratha to be renamed Swarga Lok or Indra Lok Paratha. pic.twitter.com/851ZM1sbMG
— Jawhar Sircar (@jawharsircar) January 29, 2023
নাম বদল করে দেশের ইতিহাসেরই একাংশ মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একাধিক বার এই অভিযোগ উঠেছে। সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিশেষত মুঘল ইতিহাসকে প্রায় বিস্মৃত করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সরব হয়েছেন বহু ভাবুক-চিন্তকও। তা সত্ত্বেও মোদি সরকারের জমানায় একের পর এক ঐতিহাসিক স্থানের নাম বদলের সাক্ষী থেকেছেন দেশবাসী। যার সাম্প্রতিক নমুনাটি হল, রাষ্ট্রপতি ভবনের ঐতিহাসিক ‘মুঘল গার্ডেন্স’-এর নাম বদল। এবার থেকে তা পরিচিত হবে ‘অমৃত উদ্যান’ হিসাবে। ‘আজাদি কি অমৃত মহোৎসব’ উপলক্ষেই এই নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তবে এ যে কোনও আকস্মিক পদক্ষেপ নয়, তা এই সরকারের রাজনৈতিক পদক্ষেপের ‘ক্রনোলজি’র দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়। প্রত্যাশিত ভাবেই এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এই সিদ্ধান্তের মধ্যে ঔপনিবেশিকতার ভার বয়ে যাওয়া থেকে মুক্তির দিশা খুঁজে পেয়েছেন। সেই সঙ্গে দেশের ‘অমৃত কাল’-এর সন্ধান যে এই নামের ভিতর দিয়েই প্রতিভাত হচ্ছে, এমনটাই মত তাঁর। কিরেন রিজিজু আবার এই নাম বদলের ভিতর দেশের অগ্রগতি ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের তাৎপর্য খুঁজে পেয়েছেন। এদিকে বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ঘোষণা করেছেন, ক্ষমতায় এলে এক সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য থেকে মোগল ও ব্রিটিশদের স্মৃতি মুছে ফেলে হবে।
Our hon’ble President of India, Smt. Droupadi Murmu ji sets an example by renaming the iconic gardens at the President House as ‘Amrit Udyan.’
A powerful symbol of our nation’s progress and a reflection of a brighter future for #NewIndia.@rashtrapatibhvn pic.twitter.com/ymNNGQpyS9— Kiren Rijiju (@KirenRijiju) January 28, 2023
প্রত্যাশিত ভাবেই নাম বদলের এই সিদ্ধান্তের জেরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। নাম বদলের সঙ্গে দেশের অগ্রগতির সম্পর্ক সত্যিই স্পষ্ট নয়। বরং বেকারত্ব বা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে, এই তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া যেত। এমনটাই মত বিরোধীদের। যদিও কংগ্রেস এ ব্যাপারে বেশ নীরব। কিন্তু এই নাম বদলের রাজনীতির সমালোচনায় মুখর হয়েছে তৃণমূল। সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তৃণমূল নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন জানিয়েছেন, “ওরা হয়তো এবার ইডেন গার্ডেন্স-এর নাম বদলে মোদি গার্ডেন্সও রাখতে চাইতে পারে। তবে সরকারের জোর দেওয়া উচিত কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে; এবং এসবিআই, এলআইসি-র মতো প্রতিষ্ঠানগুলির সম্পদ রক্ষা করায়।” নাম বদলের রাজনীতি যে দেশের অগ্রগতির পরিচয় নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে খোঁচা দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ জহর সরকারও। কটাক্ষ করে ট্যুইটে তিনি লিখেছেন, ‘মোগলাই পরোটার নাম কবে স্বর্গলোক বা ইন্দ্রলোক পরোটা হয়, এবার তারই অপেক্ষায়’।
ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ একাধিকবার উঠেছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। নাম বদলের রাজনীতি তারই একটা ধাপ। যদিও সমালোচনা সত্ত্বেও সে কাজ থেকে বিরত নয় কেন্দ্র। দেশ থেকে মুঘল-স্মৃতি মুছে দেওয়ার এই উদ্যোগ যে আদতে দেশের ইতিহাসকেই খণ্ডিত করবে, এমনটা বহুবার বলেছেন শিক্ষাবিদরা। তবু ‘মুঘল গার্ডেন্স’-এর নাম বদল করে নিজেদের অনড় মনোভাবের পরিচয়ই রেখেছে সরকার। তবে নাম বদলই যে দেশের সত্যিকারের অগ্রগতির চিহ্ন নয়, সমালোচনা-কটাক্ষে সে-কথাই কেন্দ্রকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা।